ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হজরত মুহাম্মদ (সা.)

যুগ-যুগান্তরের ঘূর্ণাবর্তে ও কালের গতিধারায় পৃথিবীতে অসংখ্য মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছে। যারা আপন কর্মগুণে ও বৈশিষ্ট্যতা-মাধুর্যে ইতিহাসের পাতায় সদা দেদীপ্যমান হয়ে আছেন।

সে অসংখ্য মহামনীষীদের মধ্যে শুধু হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাত্র ব্যক্তিত্ব; যিনি পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনাদর্শের স্থপতি ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁর সে মহৎ আদর্শ তখনকার ও অনাগত সব মানুষের জন্য সর্বোত্তম, সর্বোন্নত, সর্বোৎকৃষ্ট ও বৈজ্ঞানিক এবং যুগোপযোগী ছিল। পৃথিবীর উদার চিন্তাশীলমহল বিনা সঙ্কোচে সেটি স্বীকার করে।

যুক্তিসঙ্গত কারণেই মার্কিন লেখক মাইকেল এইচ হার্ট হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের স্থান দিয়েছেন। বস্তুত চিন্তাকর্ম, অবদান ও সাফল্যের বিচারে তিনি তা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

অবশ্য তাঁর এ স্বীকৃতি দেয়া বা না দেয়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাফল্যের মানদণ্ড বা মাপকাঠি নয়। কেননা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভাবনীয় সাফল্য ও গ্রহণযোগ্যতা মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক আগে থেকেই স্বীকৃত ও চরম প্রশংসিত।

জীবন ও জগতের খুঁটিনাটি হতে বৃহৎ সব ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। তেমনি একটি ভৌগোলিক সীমারেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসেবেও তিনি মানবেতিহাসে আপন মহিমায় চিরভাস্বর।

বর্তমান বিশ্বের কোথাও সেই রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নেই বলেই বিশ্ব আজ শত অশান্তি ও নানা নৈরাজ্যের শিকার। এ জন্যই হয়তো পাশ্চাত্যের কিছু দূরদর্শী গবেষক-চিন্তাবিদ অশান্ত এ বিশ্বে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একক ‘ডিক্টেটরশিপ’ বা একনায়কত্ব কামনা করেছেন।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার ইসলামি প্রজাতন্ত্রের


সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

মদিনাকে তিনি এমন কল্যাণমুখর এক রাষ্ট্রে পরিণত করে ছিলেন যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে যেমন আসীন ছিলেন তিনি, তেমনি জনসাধারণের হৃদয়ের মণিকোঠায়ও অবস্থান ছিল তাঁর।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঐতিহাসিক একটি সাফল্য হলো, তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম একটি লিখিত শাসনতন্ত্র মানবতাকে উপহার দিয়েছিলেন। ‘মদিনা সনদ’ নামে সাত চল্লিশটি ধারাসংবলিত এ ধরনের মানবিক সমঝোতামূলক শাসনতন্ত্র প্রায়োগিকভাবে আর কেউ উপহার দিতে পারেনি।

নীতি ও আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন তিনি। আল্লাহর কুরআন হলো সে আদর্শের মূল ভিত্তি। সে হিসেবে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি এটিই তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি তাঁর রাষ্ট্রে ছয়টি মূলনীতি নির্ধারণ করেন।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য সব আনুগত্যের ঊর্ধ্বে।
সব দায়িত্বপূর্ণ ও প্রশাসনিক পদে মুসলিম নিযুক্ত হওয়া আবশ্যক।
ইসলামি সরকারের আনুগত্য জনগণের অপরিহার্য।
সরকারের সমালোচনার অধিকার জনগণের থাকবে।
রাষ্ট্রের সব আইন ও বিধানের মানদণ্ড হবে ইসলামি শরিয়ত।
বিরোধ-মীমাংসার ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

এসব মূলনীতির ভিত্তিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার আর্থ-সামাজিক ও প্রভূত উন্নয়নে এক বৈপ্লবিক জোয়ার সাধিত করেছিলেন।
এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে তিনি আদর্শ ও ইনসাফের এক অনন্য ফল্গুধারা বইয়ে দেন।

মক্কাবিজয় পরবর্তী সময়ে আরব উপদ্বীপের হাজার হাজার বর্গমাইল এলাকা তাঁর অধীনে চলে আসে। গোটা ‘জাজিরাতুল আরব’ বা আরব ব-দ্বীপের একচ্ছত্র আধিপতি হিসেবে তিনি মদিনাকে কেন্দ্রীয় রাজধানী করে, সমগ্র শাসন এলাকা ১০টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। প্রতিটি প্রদেশে গভর্নর নিযুক্ত করে প্রতিটি অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার-নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।

প্রতিটি গভর্নরের নিযুক্তি ছিল বিশেষ যোগ্যতা, সৎ-নিষ্ঠা ও পরহেজগারির ভিত্তিতে। নিযুক্তিকালে শপথ পাঠ করানোসহ গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেয়া হতো। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা:)কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় তিনি এমনই করেছিলেন।

মসজিদে নববী ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কেন্দ্রীয় সচিবালয়। রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখান থেকে সম্পন্ন করা হতো। হজরত আলী (রা:), হজরত উসমান (রা:), হজরত মুয়াবিয়া (রা:) ও হজরত জায়েদ বিন ছাবিত (রা:) ছিলেন তাঁর প্রধান ওহি লেখক। বায়তুল মাল, জাকাত, সদকা ইত্যাদির দায়িত্বে ছিলেন হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম ও হজরত জুহাইম (রা:) প্রমুখ সাহাবারা।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাষ্ট্র ছিল শূরা বা পরামর্শভিত্তিক রাষ্ট্র। তাঁর রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার বিশেষ করে অমুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত ছিল।
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমঝোতা-শৃঙ্খলা, মৈত্রী-উদারতা ও ক্ষমার মূর্তপ্রতীক ছিলেন। মক্কাবিজয়ের দিন তাঁর উদার ক্ষমা ঘোষণা বিশ্বের যেকোনো চিন্তাবিদকে আলোড়িত করে।

তিনি মাঠে-ময়দানে ছিলেন একজন তুখোড় সমরবিদ ও মানবেতিহাসের সর্বাপেক্ষা মানবতাবাদী রাষ্ট্রনায়ক। প্রতিহিংসামূলক হত্যা, যুদ্ধে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশুহত্যা তিনি নিষিদ্ধ করেছেন। সম্পদ অর্জন ও বহনের ব্যাপারে শরিয়তের নীতিমালাই ছিল তাঁর সর্বোত্তম আদর্শ। প্রকৃত পক্ষে তিনি কুরআনভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রথম পুরুষ।

জগতের অতুলনীয় প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। তাঁর চলাফেরায় সাদাসিধেভাব সদা স্পষ্ট ছিল। জীবনে তিনি কখনো দু’বেলা পেট পুরে খাননি। শক্ত তোষক ও চাটাইয়ের বালিশ ছিল তাঁর চিরসম্বল। দিনে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন আর রাতে প্রভুর দরবারে অশ্রু বিসর্জন দিতেন।

চিরবিদায়কালে আট লাখ বর্গমাইলের এই মহান রাষ্ট্রপ্রধান মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেখে গিয়েছিলেন কিছু গৃহস্থালী ও যুদ্ধাস্ত্র। আর রেখে গিয়েছিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ নিখুঁত কালজয়ী ও সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। লেখক: প্রবন্ধকার

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি হজরত মুহাম্মদ (সা.)

আপডেট টাইম : ০৫:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৭

যুগ-যুগান্তরের ঘূর্ণাবর্তে ও কালের গতিধারায় পৃথিবীতে অসংখ্য মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছে। যারা আপন কর্মগুণে ও বৈশিষ্ট্যতা-মাধুর্যে ইতিহাসের পাতায় সদা দেদীপ্যমান হয়ে আছেন।

সে অসংখ্য মহামনীষীদের মধ্যে শুধু হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একমাত্র ব্যক্তিত্ব; যিনি পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনাদর্শের স্থপতি ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁর সে মহৎ আদর্শ তখনকার ও অনাগত সব মানুষের জন্য সর্বোত্তম, সর্বোন্নত, সর্বোৎকৃষ্ট ও বৈজ্ঞানিক এবং যুগোপযোগী ছিল। পৃথিবীর উদার চিন্তাশীলমহল বিনা সঙ্কোচে সেটি স্বীকার করে।

যুক্তিসঙ্গত কারণেই মার্কিন লেখক মাইকেল এইচ হার্ট হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের স্থান দিয়েছেন। বস্তুত চিন্তাকর্ম, অবদান ও সাফল্যের বিচারে তিনি তা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

অবশ্য তাঁর এ স্বীকৃতি দেয়া বা না দেয়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাফল্যের মানদণ্ড বা মাপকাঠি নয়। কেননা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভাবনীয় সাফল্য ও গ্রহণযোগ্যতা মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক আগে থেকেই স্বীকৃত ও চরম প্রশংসিত।

জীবন ও জগতের খুঁটিনাটি হতে বৃহৎ সব ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। তেমনি একটি ভৌগোলিক সীমারেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসেবেও তিনি মানবেতিহাসে আপন মহিমায় চিরভাস্বর।

বর্তমান বিশ্বের কোথাও সেই রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নেই বলেই বিশ্ব আজ শত অশান্তি ও নানা নৈরাজ্যের শিকার। এ জন্যই হয়তো পাশ্চাত্যের কিছু দূরদর্শী গবেষক-চিন্তাবিদ অশান্ত এ বিশ্বে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একক ‘ডিক্টেটরশিপ’ বা একনায়কত্ব কামনা করেছেন।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার ইসলামি প্রজাতন্ত্রের


সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

মদিনাকে তিনি এমন কল্যাণমুখর এক রাষ্ট্রে পরিণত করে ছিলেন যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে যেমন আসীন ছিলেন তিনি, তেমনি জনসাধারণের হৃদয়ের মণিকোঠায়ও অবস্থান ছিল তাঁর।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঐতিহাসিক একটি সাফল্য হলো, তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম একটি লিখিত শাসনতন্ত্র মানবতাকে উপহার দিয়েছিলেন। ‘মদিনা সনদ’ নামে সাত চল্লিশটি ধারাসংবলিত এ ধরনের মানবিক সমঝোতামূলক শাসনতন্ত্র প্রায়োগিকভাবে আর কেউ উপহার দিতে পারেনি।

নীতি ও আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন তিনি। আল্লাহর কুরআন হলো সে আদর্শের মূল ভিত্তি। সে হিসেবে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি এটিই তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি তাঁর রাষ্ট্রে ছয়টি মূলনীতি নির্ধারণ করেন।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য সব আনুগত্যের ঊর্ধ্বে।
সব দায়িত্বপূর্ণ ও প্রশাসনিক পদে মুসলিম নিযুক্ত হওয়া আবশ্যক।
ইসলামি সরকারের আনুগত্য জনগণের অপরিহার্য।
সরকারের সমালোচনার অধিকার জনগণের থাকবে।
রাষ্ট্রের সব আইন ও বিধানের মানদণ্ড হবে ইসলামি শরিয়ত।
বিরোধ-মীমাংসার ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

এসব মূলনীতির ভিত্তিতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার আর্থ-সামাজিক ও প্রভূত উন্নয়নে এক বৈপ্লবিক জোয়ার সাধিত করেছিলেন।
এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে তিনি আদর্শ ও ইনসাফের এক অনন্য ফল্গুধারা বইয়ে দেন।

মক্কাবিজয় পরবর্তী সময়ে আরব উপদ্বীপের হাজার হাজার বর্গমাইল এলাকা তাঁর অধীনে চলে আসে। গোটা ‘জাজিরাতুল আরব’ বা আরব ব-দ্বীপের একচ্ছত্র আধিপতি হিসেবে তিনি মদিনাকে কেন্দ্রীয় রাজধানী করে, সমগ্র শাসন এলাকা ১০টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। প্রতিটি প্রদেশে গভর্নর নিযুক্ত করে প্রতিটি অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার-নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।

প্রতিটি গভর্নরের নিযুক্তি ছিল বিশেষ যোগ্যতা, সৎ-নিষ্ঠা ও পরহেজগারির ভিত্তিতে। নিযুক্তিকালে শপথ পাঠ করানোসহ গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেয়া হতো। হজরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা:)কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় তিনি এমনই করেছিলেন।

মসজিদে নববী ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কেন্দ্রীয় সচিবালয়। রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখান থেকে সম্পন্ন করা হতো। হজরত আলী (রা:), হজরত উসমান (রা:), হজরত মুয়াবিয়া (রা:) ও হজরত জায়েদ বিন ছাবিত (রা:) ছিলেন তাঁর প্রধান ওহি লেখক। বায়তুল মাল, জাকাত, সদকা ইত্যাদির দায়িত্বে ছিলেন হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম ও হজরত জুহাইম (রা:) প্রমুখ সাহাবারা।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাষ্ট্র ছিল শূরা বা পরামর্শভিত্তিক রাষ্ট্র। তাঁর রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার বিশেষ করে অমুসলিমদের অধিকার নিশ্চিত ছিল।
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমঝোতা-শৃঙ্খলা, মৈত্রী-উদারতা ও ক্ষমার মূর্তপ্রতীক ছিলেন। মক্কাবিজয়ের দিন তাঁর উদার ক্ষমা ঘোষণা বিশ্বের যেকোনো চিন্তাবিদকে আলোড়িত করে।

তিনি মাঠে-ময়দানে ছিলেন একজন তুখোড় সমরবিদ ও মানবেতিহাসের সর্বাপেক্ষা মানবতাবাদী রাষ্ট্রনায়ক। প্রতিহিংসামূলক হত্যা, যুদ্ধে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশুহত্যা তিনি নিষিদ্ধ করেছেন। সম্পদ অর্জন ও বহনের ব্যাপারে শরিয়তের নীতিমালাই ছিল তাঁর সর্বোত্তম আদর্শ। প্রকৃত পক্ষে তিনি কুরআনভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রথম পুরুষ।

জগতের অতুলনীয় প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। তাঁর চলাফেরায় সাদাসিধেভাব সদা স্পষ্ট ছিল। জীবনে তিনি কখনো দু’বেলা পেট পুরে খাননি। শক্ত তোষক ও চাটাইয়ের বালিশ ছিল তাঁর চিরসম্বল। দিনে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন আর রাতে প্রভুর দরবারে অশ্রু বিসর্জন দিতেন।

চিরবিদায়কালে আট লাখ বর্গমাইলের এই মহান রাষ্ট্রপ্রধান মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রেখে গিয়েছিলেন কিছু গৃহস্থালী ও যুদ্ধাস্ত্র। আর রেখে গিয়েছিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ নিখুঁত কালজয়ী ও সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ। লেখক: প্রবন্ধকার