একসময় সমুদ্রসৈকতে গিয়ে পর্যটকরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখত সেখানে যেন লাল গালিচা বিছানো। হাজার হাজার লাল কাঁকড়ায় সৈকতজুড়ে লালের মেলা। পর্যটকরা বিনোদিত হতো তাতে। কিন্তু সৈকতে বিনোদনের এই প্রাকৃতিক উপকরণটি এখন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
তবে এর চেয়ে বড় বিষয়, লাল কাঁকড়ার হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্যও। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ জন্য সৈকতে বিচ বাইকের বেপরোয়া চলাচল, শব্দদূষণ ও পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকা-কে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, বেপরোয়া যান চলাচলে একদিকে মারা পড়ছে, আবার শব্দদূষণের কারণে সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে লাল কাঁকড়া।
ইনানী পয়েন্টের একটি মোটেলের কর্মী জানান, একসময় সৈকতে সামুদ্রিক লাল কাঁকড়ার বিচরণে মনে হতো বেড়াতে আসা অতিথিদের জন্য লাল গালিচা সংবর্ধনা। দেশ-বিদেশ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সমুদ্র সৈকতে নেমেই দেখতে পেত হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার ঝঁাঁক। কিন্তু এই মনোরম দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। এতে হতাশ পর্যটকরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২২ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের হিমছড়ি, ইনানী পয়েন্ট, মো. শফির বিল, মাদারবনিয়া, মনখালী, শাপলাপুর, জাহাজপুরাসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনো অবাধ বিচরণ রয়েছে লাল কাঁকড়ার। তবে আগের চেয়ে তা সংখ্যায় অনেক কম।
ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা আশরাফুল আলম নামের এক পর্যটক নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ইনানী সৈকত এবং পার্শ¦বর্তী এলাকায় একসময় লাল কাঁকড়ার বিপুল বিচরণ ছিল। দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। এখন লাল কাঁকড়া দেখার আশা নিয়ে সমুদ্র সৈকত এলাকায় ঘুরে বেড়ালে হতাশ হতে হয়।
জানা যায়, লাল কাঁকড়ার বিচরণস্থল নির্বিঘ্ন করতে ২০০৭ সালে সমুদ্রসৈকতে বিচবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কৌশলে আবার সৈকতে চলাচল শুরু করে বিচবাইক। সৈকতের জীববৈচিত্র্যের জন্য এসব বিচবাইক হুমকি বলে মনে করেন অনেকে।
পরিবেশবাদীরা বলেন, লাল কাঁকড়া শুধু সৈকতের সৌন্দর্য বাড়ায় না, সমুদ্রের সঙ্গে উপকূলের প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা, সামুদ্রিক ঝড়ের আগাম বার্তা পাওয়ার ক্ষেত্রে লাল কাঁকড়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।