বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বিশ্বে এমন অনেক জাতি আছে যাদের রীতিনীতি খুবই অদ্ভুত। তেমনই একটি জাতি হচ্ছে অ্যাঙ্গোলা মাওয়িলা। যেখানে নারীরা নিজেদের চুল গোবর দিয়ে ঢেকে রাখে। তবে এর রয়েছে অবাক করা কারণ!
বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কিছু জাতিগোষ্ঠী আছে যাদের মধ্যে অ্যাঙ্গোলার মাওয়িলা অন্যতম। যাদের রয়েছে নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি। দক্ষিণ অ্যাঙ্গোলাতে মাওয়িলা বা মুমুহিলা লোক রয়েছে। তাদেরকে বলা হয় আধা-যাযাবর জাতিগোষ্ঠী।
এদের বেশিরভাগের প্রধান পেশা হলো কৃষিকাজ করা। তারা ভুট্টাসহ অন্যান্য প্রধান প্রধান ফসল চাষ করে। তাছাড়া অন্যরা গবাদি পশু যেমন- ছাগল পালন করে। অনেকেই আবার পাখি পালনে ব্যস্ত থাকেন।
ইতিহাসে দেখা যায় যে, প্রথম দিকের বান্টসের একটি অংশ তাদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপনের জন্য আসতেন। এক পর্যায়ে মাওয়িলা একটি শক্তিশালী দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তখন বৃহত্তর নৃগোষ্ঠীর মধ্যে আগ্রাসন বা খরার সৃষ্টি হয়। আর এ কারণেই অন্যান্য বান্টু অ্যাঙ্গোলা নামিবিয়ায় পালিয়ে যায়। কিন্তু মাওয়িলার জনগণ এবং তাদের মাতৃ নৃগোষ্ঠী নায়েনেকা-হাম্বো অ্যাঙ্গোলাতেই রয়ে যায়।
মায়িলাসদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সংস্কৃতি হচ্ছে, গোবর দিয়ে নারীদের চুল ঢেকে রাখা। নারীদের এই চুলের ধরন মাওয়িলা মানুষের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান।
মূলত তাদের চুলে থাকে কিছু প্লেট। চুলে থাকা এই প্লেটগুলোকে নন্টোম্বি বলা হয়। ড্রেডলকস লুকিং চুলের ধরনগুলো কেবল নান্দনিকতার জন্য থাকে না। নারীদের মাথায় নন্টোম্বির সংখ্যাটির একটি নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। মহিলা বা মেয়েদের সাধারণত চার বা ছয়টি নন্টোম্বি থাকে। যদি কারো মাথায় তিনটি নন্টোম্বি দেখেন, এর অর্থ হচ্ছে তার পরিবারের কেউ মারা গেছে।
নন্টোম্বি অর্জনের জন্য, নারীরা কাঁচা লাল পাথর থেকে প্রাপ্ত অঙ্কুলা নামের একটি লাল পেস্ট বানায়। এরপরে তারা শুকনা গোবর, ভেষজ, গাছের ছালের গুঁড়া এবং তেল সেই লাল পেস্টের সঙ্গে মিশ্রিত করে। এভাবেই তৈরি হয় নন্টোম্বি। শেষে মিশ্রণটি তাদের চুলে প্রয়োগ করা হয়। অবশেষে চুলগুলোতে শুকনা খাবার, জপমালা এবং আসল বা প্লাস্টিকের অলংকার দিয়ে সাজানো হয়।
মাওয়িলা সংস্কৃতিকে চিত্রিত করার আরেকটি উপায় হচ্ছে,নারীদের বিস্তৃত গহনা পরিধান করা। তাছাড়া এই নারীরা গলায় কাদা এবং জপমালা দিয়ে তৈরি ঘন কলার পরার জন্যও পরিচিত। মাওয়িলা নারীরা অন্যরকম ভাবে পোশাক পরে এবং নিজেদের সজ্জিত করে।
প্রতিটি মহিলা বা মেয়েকে জীবনের প্রতিটি সময়ের পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করেই সেই ধরনের নেকলেস পরিধান করতে হয়। আর কিসের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন নির্ধারণ করা হয়, তাও উল্লেখ রয়েছে।
অল্প বয়সী মেয়েরা লাল ভারী নেকলেস পরে। যা জপমালা দিয়ে তৈরি। আর তাতে মাটি ও ক্ষীর মিশ্রিত লেপ দেয়া থাকে। মেয়েটির জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে, উইকারের আচ্ছাদিত প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ভিকেকা নামক একটি হলুদ রঙের নেকলেস পরে।
মেয়েরা তাদের বিয়ের আগ পর্যন্ত ভাইক্কা পরেন যা চার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। একবার তাদের বিয়ে হয়ে গেলে তারা ভিল্যান্ডা নামে সজ্জিত নেকলেসগুলোর একটি সেট পরে। বিয়ের পরে মাওয়িলা নারীরা কখনো তাদের গলার মালা খুলে ফেলেন না। এই মালা পরেই তাদের ঘুমাতে হয়। আর হেড্রেসগুলো তাদের চুলের স্টাইল সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহৃত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে, অনেক মাওয়িলা লোকেরা তাদের পোশাকটি পশ্চিমীকরণের চেষ্টা করছে। কারণ তারা যখন তাদের এলাকার বাইরের প্রধান বাজারগুলোতে যায়, তখন অন্যরা তাদের নিয়ে মজা করে।
তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরেকটি মজার বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে অন্যের নাম উল্লেখ করে না। তাদের একটি উপজাতি প্রধান থাকে। যারা উপজাতিদের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। তারাই সবাইকে পরিচালিত করে।
হেডম্যানের অধীনে একদল প্রবীণ থাকে যারা সরাসরি তাদের কাজগুলো সম্পাদন করে। তাদের কারোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে প্রবীণরা এবং প্রধান ব্যক্তিরা সেই সমস্যার সমাধান করে।
মাওয়িলা সনাতনবাদী এবং তারা পরমাত্মায় বিশ্বাসী। তারা আত্মার ওপর বিশ্বাস করে। কারণ তাদের বিশ্বাস যে, পূর্বপুরুষদের আত্মারা তাদের ভালোর জন্য কাজ করে অথবা তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে।
সবশেষে বলা চলে, প্রতিটি জাতিরই নিজ নিজ সংস্কৃতি রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব কিছু বিশ্বাস। সবক্ষেত্রেই যে তা গ্রহণযোগ্য হবে তা নয়। তবে সবার প্রতি শ্রদ্ধা বা সন্মান রাখাটাই প্রকৃত মনুষ্যত্ব।
সূত্র: ফেসটুফেসআফ্রিকা