বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মান্ধাতার আমল’ কথাটি বহুল প্রচলিত। যে কোনো পুরানো কোনো কথার উদাহরণ হিসেবেই ব্যবহার করেন অনেকেই। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন বা কীভাবে এলো এই কথাটি? চলুন জেনে নেয়া যাক এর পেছনের অজানা রহস্যটি-
পৌরাণিক যুগে একজন রাজা ছিলেন মান্ধাতা। মান্ধাতা ছিলেন সূর্য বংশের রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। অবাক করা তথ্য হচ্ছে- মান্ধাতা মাতৃগর্ভ নয়, পিতৃগর্ভে জন্মেছিলেন বলে জানা যায়।
ইন্টারনেট থেকে নেয়া তথ্য অনুযায়ী- যুবনাশ্বর মুনিদের আশ্রমে গিয়ে যোগ সাধনা শুরু করলেন যেন একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। দীর্ঘ সে সাধনা তৃপ্ত করল মুনিদের। তারা যুবনাশ্বের জন্য এক যজ্ঞ আরম্ভ করলেন। যজ্ঞ শেষ হতে হতে মাঝরাত। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কলসি ভর্তি মন্ত্রপূত পানি বেদিতে রেখে গেলেন তারা। এই কলসির পানি যদি যুবনাশ্বের স্ত্রী পান করে, তবেই হবে জন্ম পুত্রসন্তানের। কিন্তু বিধিবাম। সে রাতেই তীব্র তেষ্টা পেল যুবনাশ্বেরের। উপায়ন্তর না দেখে নিজেই খেয়ে ফেললেন সেই কলসী থেকে এক আঁজলা পানি।
সকালে মুনিরা ঘুম থেকে উঠে এই ঘটনা শুনে ঘোষনা করলেন, পানি যেহেতু যুবনাশ্বর খেয়েছে সন্তান তার গর্ভেই জন্মাবে! অবশ্য মুনিরা নারীর গর্ভধারনের কষ্ট থেকে যুবনাশ্বরকে মুক্তি দিলেন। একশ বছর পরে জন্ম নিলেন মান্ধাতা। তার নামই ছিল মানধত্ত বা মানধাতৃ বা মান্ধাতা। জন্মের পরে এক বিস্ময় শিশুর মতো বড় হতে লাগলেন মান্ধাতা। দেবরাজ ইন্দ্রের আশীর্বাদে মাত্র ১২ দিনে তিনি পূর্ণতা পেলেন ১২ বছর বয়সী বালকের মতো। আয়ত্ত করলেন চতুর্বেদ ও যুদ্ধশাস্ত্র। যাদব বংশীয় রাজকন্যা বিন্দুমতীর সঙ্গে বিবাহ হল তার।
বল্লভী বংশের রাজা মান্ধাতা মাত্র একদিনে জয় করলেন মর্ত্যলোক। পাতাল জয়ের পরে অধিকার করলেন অর্ধ স্বর্গ। কার্যত ত্রিলোকের অধীশ্বর হলেন তিনি। মহাভারতে আছে‚ মান্ধাতা ছিলেন সূর্যবংশীয় রাজা। প্রসিদ্ধ ছিলেন দান-ধ্যান-অশ্বমেধ ও রাজসূয় যজ্ঞে।
রাজা মান্ধাতা ও রানি বিন্দুমতীর ছিল তিন পুত্র ও ৫০ জন কন্যা। তিন পুত্র হলেন পুরুকুৎস‚ অম্বরীশ ও মুচকুন্দ। মান্ধাতার পরে তার বড় ছেলে উত্তরাধিকারী হন সাম্রাজ্যের।
মান্ধাতার মৃত্যু নিয়েও দ্বিমত আছে পৌরাণিক কাহিনীতে। কোথাও বলা হয়েছে তিনি বিশাল ধনসম্পত্তি ত্যাগ করে বানপ্রস্থে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভগবান বিষ্ণুর চরণে। মহাভারতে বলা হয়েছে‚ লবণাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন রাজা মান্ধাতা। ইক্ষ্বাকু বংশের উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজা দশরথ ও তার পুত্ররা মান্ধাতার বংশধর। দশরথপুত্র শত্রুঘ্ন লবণাসুরকে বধ করে মান্ধাতা-হত্যার প্রতিশোধ নেন।
কিন্তু হিন্দু পুরাণে এত রাজা থাকতে শুধু মান্ধাতার সঙ্গেই পুরনো জিনিসের অনুষঙ্গ কেন জুড়ে গেল‚ সেটা আজও রহস্যই রয়ে গেছে।