বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাংলা চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি শাবানা। অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও তার জনপ্রিয়তায় এক বিন্দু চিড় ধরেনি। তাকে নিয়ে ভক্তদের কৌতূহলের শেষ নেই। গত ২৩ বছর ধরে স্বামী, দুই মেয়ে এবং একমাত্র পুত্রকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তিনি। মাঝে মাঝে যখন দেশে আসেন, তাকে নিয়ে হইচই পড়ে যায় দর্শকমহলে। এ থেকে বোঝা যায়, আজও তিনি কতটা জনপ্রিয়। গত ডিসেম্বরে ঢাকায় এসেছেন শাবানা। সম্প্রতি নিজের বাসায় গণমাধ্যেমের মুখোমুখি হন তিনি। সেখান থেকে বিশেষ অংশ-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আপনার অভিনয়ের শুরু হলো যেভাবে?
প্রয়াত নির্মাতা এহতেশাম সাহেবের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আমার প্রথম অভিনয় শুরু। উনি আমার বাবার ফুফাতো ভাই ছিলেন। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। ‘নতুন সুর’ আমার প্রথম ছবি। উনি আমার বাবাকে বলেছিলেন, তোর মেয়েটাকে আমি একটি ছবিতে নিতে চাই। বাবা তখন এভাবে বলেছিলেন, আমার মেয়ে কীভাবে অভিনয় করবে। কিন্তু এহতেশাম সাহেব ছিলেন নাছোড়বান্দা। উনি বলেছিলেন, তোর মেয়েটার মতো একটা মেয়েই আমি খুঁজছি। এরপর বাবা রাজি হন। ওই ছবির নায়ক-নায়িকা ছিলেন রহমান-রওশানারা। আমার প্রথম শটই ওকে ছিল। তারপর থেকে মায়ের চেয়ে বাবাই সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছেন। আমার বাবাও ‘মুক্তি’ এবং ‘মালকাবানু’ ছবি পরিচালনা করেছিলেন। এর মধ্যে ‘মালকাবানু’ ছবি বাম্পারহিট ছবি।
প্রথম ছবিতে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন কত?
পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, সেই ১৯৬৭ সালের ৫ হাজারের মূল্য এখন কতো হতে পারে ভেবে দেখো তো!
আপনার ব্যস্ত থাকার দিনগুলোর কথা জানতে চাই
কতো সুন্দর সময় গেছে আমার। কতো ব্যস্ততা মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরেছি। মাসের ত্রিশ দিনই ক্যামেরার সামনে শুটিং করেছি। শুটিং শেষে পরের দিনের শুটিংয়ের প্রস্তুতি। রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, বুলবুল আহমেদ, ফারুক, জাফর ইকবাল, জসিমদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করেছি। আমার সঙ্গে কে থাকছে এটা আমি কখনোই দেখতাম না। আমি দেখতাম আমার চরিত্র ও পর্দায় উপস্থিতি কেমন হবে।
দেখা যায় একই সময়ের নায়িকাদের মধ্য জেলাসি ব্যাপার থাকে। আপনার সময়কার নায়িকাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ছিলো?
ববিতা, কবরী, আমি একই সময়কার। আমাদের মধ্যে কোনো জেলাসি ছিল না। শবনম, সুচন্দা আপা আমাদের সিনিয়র। সবার সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক ছিল। সে সময় সবাই কাজ নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিল পাশাপাশি ফ্লোরে শুটিং হলেও দেখা করা আড্ডা দেয়ার সময় হতো না। সকাল-দুপুর দুই শিফটে আমরা কাজ করতাম। রাতে ডাবিং থাকতো। ব্যস্ততা থাকলেও কারো মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ছিল না। সবার মাঝে ভালো কাজের চেষ্টা ছিল। কাজের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।
এখন ইন্ড্রাস্ট্রিতে কাজের চেয়ে বেশি সমিতি চর্চা হয়। আপনাদের সময় এমন ছিল?
শুনেছি এফডিসিতে এখন আগের মতো শুটিং থাকেনা। বিভিন্ন সমিতির চর্চা হচ্ছে। আমাদের সময় এসব ছিল না। সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কতো ভালো কাজ উপহার দেয়া যায়, সেটা নিয়েই প্রতিযোগিতা চলতো। দেশ ছেড়ে অনেক দূরে থাকি, চলচ্চিত্র ব্যবসা নিয়ে খুব জানাশোনা নেই। শুনেছি খারাপ অবস্থা, দর্শক হলে যায় না। হলগুলো নাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক।
দর্শক হলে ফেরারতে হলে করণীয় কী?
বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা হল। আগে হলে গিয়ে ছবি দেখতো মানুষ। এখন এতোগুলো মাধ্যম এসেছে যে মানুষ হলে যেতে চায় না। তাদের হলে ফেরাতে দরকার নিত্য নতুনত্ব। আর এটার জন্য প্রথম স্টেপ হতে হবে একজন ভালো পরিচালক, সঙ্গে গল্প। পরিচালক ভালো হলে ছবি এমনিতেই ভালো হয়। ছবি ভালো হলেই দর্শক হলে যাবে। আর শিল্পীরা কাদার মতো। পরিচালক যেভাবে গড়বেন শিল্পী সেভাবেই নিজেকে মেলে ধরতে পারে। এজন্যই বলা হয় ‘ফিল্ম ইজ অলয়েজ ডিরেক্টোরিয়াল মিডিয়া’।
নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের খোঁজ খবর রাখেন
মিশা সওদাগরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এখনকার নায়কদের মধ্যে শাকিব খানের কাজের কথা একটু শুনি। শুনেছি সে ভালো কাজের চেষ্টা করে যাচ্ছে। রিয়াজ, ফেরদৌস মনে হয় আগের মতো কাজ করছে না। এর বাইরে অন্যদের বিষয়ে জানি না। নায়িকাদের মধ্যে মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমার পরে আর কারো সম্পর্কে ধারনা নেই।
আপনি বলছিলেন এমনও সময় গেছে মাসের ৩০ দিন কাজ করেছেন। কাজের চাপে পরবিারে সময় দিতে পারতেন?
আগে কাজের চাপে যা করতে পারিনি এখন সেগুলো করছি। ঘর সংসার করছি। জীবনের বেশিরভাগ সময় কাজ করতে করতে কেটে গেছে। বাচ্চাগুলো মিস করেছি। এখন ওদের দেখাশুনা করি, ওদের বাচ্চারা যখন নানুমনি বলে ডাকে, কাছে এসে খেলে তখন মনে হয় জীবনে এর চেয়ে সুন্দর কিছু হতে পারে না।
অবসর সময় কিভাবে কাটান?
যেটুকু সময় পাই ইবাদত করি। ছবি খুব কম দেখা হয়। তবে আমার নাতি নাতনিরা মাঝে মধ্যে ইউটিউবে দেখে। ওরা আমাকে বলে নানুমনি সত্যিই, রিয়েলি ইউ আর অ্যা বিগ অ্যাক্ট্রেস! মাঝে মধ্যে আরো বলে আমরা যদি তোমার মতো অভিনয় করতে চাই, হতে পারবো? খুব মায়া লাগে ওদের মুখ থেকে একথা যখন শুনি।
জীবনে কোনো অপূর্ণতা অনুভব করেন?
জীবনে প্রায় সবই পেয়েছি। কোনো অপূর্ণতা নেই। আজও রাস্তায় কেউ দেখলে সমাদর করেন। আমি চলে গেলে মানুষ আমাকে হয়তো মনে রাখবে, এমন কিছু কাজ করেছি। সবার কাছে দোয়া চাই, আমি যেন সুস্থ থাকি।