হাওরে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি বিশিষ্টজনদের

হাওরের মহাবিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণায় এত অনিচ্ছা কেন? সেখানে ২৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এটা অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এরপরও এটা জাতীয় দুর্যোগ না হলে কখন হবে? বন্যার পর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের বিপর্যয়কে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে হাওরবাসীকে রক্ষায় দ্রæত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা আরো বলেছেন, হাওরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সরকারের নেয়া পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে হবে। একই সঙ্গে হাওরের দুর্যোগ মোকাবেলায় নেয়া সরকারি-বেসরকারি প্রস্তুুতিকে ‘অপ্রতুল’ বলে উল্লেখ করা হয়। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘হাওরের মহাবিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, তিন লাখ মানুষকে ৩০  কেজি করে চাল দেবে সরকার। কিন্তু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৪ লাখ থেকে কমে তিন লাখ হলো কীভাবে। এখানে কৃষি ব্যাংকও এগিয়ে আসতে পারে। আমাদের কৃষি ঋণ রয়েছে। কিন্তু সেটা পায় কৃষি সংশ্লিষ্ট বড় বড় উদ্যোক্তারা। কৃষকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। হাওরের বাঁধগুলো মেরামত ও নতুন করে নির্মাণে দুর্নীতির কারণেই ফসলহানি বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির এই অভিযোগ অনুসন্ধানেও নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
হাওরে বাঁধ নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়ম এবং নকশাগত ত্রæটির কথাও বলেন সুলতানা কামাল। এমনভাবে বাঁধ বানানো হয় যে, কৃষকরা তা কেটে দিতে বাধ্য হন। এই তথ্যগুলো ভালোভাবে নেয়া উচিত। উন্নয়নে মানুষকে সম্পৃক্ত করা উচিত। এই ঘটনাগুলো আর যাতে না ঘটে। লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণায় এত অনিচ্ছা কেন? সেখানে ২৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এটা অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এরপরও এটা জাতীয় দুর্যোগ না হলে কখন হবে? হাওরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সরকারের নেয়া পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করেন আবুল মকসুদ।
এই দুর্যোগে হাওরের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সেইভাবে আমরা দেখছি না। আক্রান্ত এলাকায় ২৫-৩০ জন সংসদ সদস্য আছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ১০ জনও এলাকায় গিয়েছেন কি না আমরা সে খবর পাইনি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই বিপর্যয়ের জন্য সরকার দায়ী না। তবে এ ধরনের দুর্যোগের পর সরকার জেগে জেগে ঘুমানোর ভান করে। জাতীয় দুর্যোগ কেন হবে না? অর্বাচিন সচিব বলে- এত শতাংশ মানুষ মারা না গেলে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হবে না। এখন মানুষের খাদ্য দিতে হবে, গরুর খাদ্য দিতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
আক্রান্ত এলাকার জলমহাল ইজারা না দেয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রæত ওই এলাকার জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ এবং পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
সাংস্কৃতিক সংগঠক  মো. সেলিম বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ অনাদায়ী থেকে যায়। অনেক সময় ঋণ মওকুফও করা হয়। সেখানে কৃষকদের ঋণ মওকুফ করা যাবে না? তাদের ঋণ মওকুফ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, পরিবেশগত দিকসহ এত স্বল্প সময়ে এত বিশাল ক্ষয়ক্ষতির নজির সারা পৃথিবীতে আর একটাও নেই।
কিন্তু আমাদের সরকার, বিরোধী দল, এনজিও, সিভিল সোসাইটি এবং মিডিয়া কোনো পক্ষই ঘটনার গভীরতা ও ব্যাপকতা বিবেচনায় নিয়ে এই বিপর্যয় মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়ার কথা ভাবছে না। তিনি বলেন, রোববার পর্যন্ত হাওর অঞ্চলের ৮০ ভাগ জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগাম বন্যায় বাঁধ ভেঙে ফসলহানিতে প্রতি বছরই কৃষকেরা সর্বশান্ত হয়।
তিনি আরো বলেন, মাছের প্রজনন মৌসুমের আগে আগাম বন্যা প্রজননকে সহায়তা করে। কিন্তু এবারের ঘটনা শুধু বিপরীতই নয়, নজিরবিহীনভাবে বিধ্বংসী। মাছ মারা যাওয়ার হিসাব কোনোভাবে করা সম্ভব হলেও কত জীব-অণুজীব চিরতরে ধ্বংস হয়েছে বা ধ্বংসের পথে তা সন্ধানের উদ্যোগ কেউ নিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। বোরো চাষের উপর নির্ভরশীল ২৪ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার নিশ্চয়তা এবং হাওরের সবার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। অন্যদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর