সারাবছরের লোকসান হজফ্লাইটেই পুষিয়ে নিতে চায় বিমান

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সারাবছর জেদ্দা ও মদিনা রুটে সর্বনিম্ন প্লেন ভাড়া ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার (রিটার্ন) টাকা নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অথচ হজ এলেই নানা অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত এ এয়ারলাইন্স। এবারও হজ ফ্লাইটের ভাড়া এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের এই ভাড়া ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর হজযাত্রী পরিবহনের জন্য এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল বিমান। পরে অবশ্য দুই হাজার টাকা কমিয়ে এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। অথচ এ বছর বিমানের ভাড়া কমানো উচিত ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনো এয়ারলাইন্সের বিমান ভাড়া বাড়ানোর প্রধান কারণ হয় জেট ফুয়েলের (জ্বালানি) মূল্যবৃদ্ধি। তবে গত এক বছরে জেট ফুয়েলের দাম তো বাড়েইনি, বরং কমেছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের হজের সময় প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ছিল দশমিক ৭১ মার্কিন ডলার। এ বছর তা কমে দাঁড়ায় দশমিক ৬৯ ডলার। তবে পদ্মা অয়েলের সঙ্গে বিশেষ চুক্তির কারণে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান জেট ফুয়েল পাচ্ছে প্রতি লিটার দশমিক ৫৮ ডলারে।
আন্তর্জাতিক রুটে বিমান ভাড়ার বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটি কারণ হতে পারে ট্যাক্স বা চার্জ বৃদ্ধি। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশ সরকার বা সৌদি সরকার হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার ওপর নতুন কোনো ট্যাক্স বা চার্জ আরোপ করেনি। দুটি দিকই বিবেচনায় বিমানের ভাড়া এমনভাবে বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা যৌক্তিকতা না দেখলেও বরাবরের মতো এবারও বিমানের অজুহাত, এক পথে ফাঁকা (যাত্রী ছাড়া) ফ্লাইট চালাতে হয় বলে তাদের ভাড়া বাড়াতে হয়েছে। তবে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, বিমানের ওমরাহর যাত্রীদের রিটার্ন ভাড়া সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টাকা। বিমানের ফ্লাইট খালি আসা-যাওয়া করলেও ভাড়া এক লাখ ১০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এছাড়া এই ভাড়ার মধ্যে একজন যাত্রীকে নয় হাজার ৮৪৩ টাকা ট্যাক্স ও ফি দিতে হচ্ছে। যাত্রী বহন না করলে বিমানকে এই ট্যাক্সও দিতে হয় না।
এছাড়া ফাঁকা ফ্লাইটগুলোতে যাত্রীদের ক্যাটারিংয়ের খরচ নেই, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং নেই, ইনফ্লাইট সার্ভিস- কোনোটিরই প্রয়োজন হয় না। যাত্রী কম হলে জ্বালানি খরচ কম হয়। অথচ এসব চার্জ ধরেই বিমান ভাড়া নির্ধারণ করেছে বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তারা জানান, যে কোনো শিডিউল ফ্লাইটে সব আসনে যাত্রী থাকে না। প্রায়ই অধিকাংশ সিট ফাঁকা থাকে। অথচ বিমান প্রতিটি ডেডিকেটেড ফ্লাইটের (যে ফ্লাইট ফাঁকা যায়) সব সিটের যাত্রী ধরে মূল্য নির্ধারণ করেছে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো যা বলছে

বিমানের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মনসুর আহমেদ কামাল জাগো নিউজকে বলেন, বিমান বারবার খালি যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ভাড়া বাড়ায়। অথচ খালি ফ্লাইটে এন্টারটেইনমেন্ট, খাওয়া কিংবা অন্যান্য খরচ লাগে না। যাত্রী না থাকলে তেলও কম খরচ হয়। কিন্তু তারা সারাবছরের লোকসান হজের ফ্লাইট দিয়ে পুষিয়ে দিতে চায়। হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তাদের বহনে বিমানের এত ভাড়া নেয়া অন্যায়-বেমানান। বিমানের দেখাদেখি এখন অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে সৌদি এয়ারলাইন্সও। হাবের বক্তব্য হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের সভাপতি এম শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন, আমরা হজযাত্রীদের বিমানের ভাড়া কমাতে বা বাড়াতে বলছি না। তবে আমরা চাই এই ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে থাকুক। তারা বারবার খালি আসনের ‘দোহাই দিয়ে’ ভাড়া বাড়ায়। ওমরাহযাত্রীদের কাছ থেকে বর্তমানে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা (রিটার্ন টিকিট) ভাড়া নেয় বিমান। দ্বিগুণ বাড়ালেও ভাড়া গিয়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ এক লাখ ১০ হাজার টাকা। সেটা না করে তারা এর চেয়ে আরও ২৮ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিমান যে খালি সিটের দোহাই দিয়ে ভাড়া বাড়ায়, ঘটনাচিত্র বাস্তবে এমন নয়। খালি আসনে যাতায়াত করলে কোনো যাত্রীর ট্যাক্স লাগে না, সব ধরনের খরচ কমে যায়। বিমানের ভাড়া বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। হজের কারণেই কেবল বিমান এত লাভ করতে পারে। তাই তারা এবার নিজেদের লাভ বাড়ানোর জন্য অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়িয়েছে।

ফোন ধরে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

ভাড়া বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেনকে গত তিনদিনে নয়বার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেন একবার। বাকি আটবারই তিনি ফোন কেটে দেন। ওই একবার ফোন ধরে তিনি ‘মিটিংয়ে আছেন’ বলে জানান। পরে একাধিকবার এসএমএস দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
২০১৮ সালে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা। ২০১৯ সালে এই ভাড়া ১০ হাজার ১৯১ টাকা কমিয়ে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবার আবারও সেই ভাড়া বাড়িয়ে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য দুই হাজার টাকা কমানো হয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই (৯ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাবেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর