কক্সবাজার এলএ শাখা যেন টাকার খনি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা যেন টাকার খনি। আলোচিত এই অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সবাই আকুণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। গত বুধবার রাতে এলএ শাখায় কর্মরত তিনজন সার্ভেয়ারের বাসায় পৃথক অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় এক কোটি টাকাসহ এক সার্ভেয়ারকে আটক ও দুইজন সার্ভেয়ার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির বিষয়টি সামনে চলে আসে। খোদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এমন দুর্নীতির ঘটনায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিপূর্বে অপকর্মের দায়ে ১১ জন সার্ভেয়ারকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এমনকি মেগা-প্রকল্প চালুর পর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণ হয়ে সাবেক ডিসি রুহুল আমিন, এডিসি জাফর আলমসহ বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার কারাভোগ করেছেন। নিকট অতীতেও বর্তমান জেলা প্রশাসকসহ বেশ কয়েকজনের নামে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা ফাইল করেছিলেন মহেশখালীর এক ব্যক্তি।

অবশ্য সন্ধ্যার দিকে আদালত তা আবার খারিজও করেছিলেন। তারপরও অনিয়ম ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। উল্টো এসব দুর্নীতিতে জেলা প্রশাসনের টপ টু বটম জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর মধ্যে গত বুধবার র‌্যাবের অভিযানে ঘুষের নগদ প্রায় কোটি টাকাসহ সার্ভেয়ার আটকের ঘটনা ঘটলো।
র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার দলের ২ গ্রুপের ওপর বেশ কিছুদিন ধরে নজরদারি করা হচ্ছিল। সার্ভেয়ারের একটি গ্রুপ কাজ করছিল মহেশখালী দ্বীপের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধিগ্রহণ করা প্রকল্পে এবং অপর গ্রুপের কাজ ছিল মেরিন ড্রাইভ সড়কে।
এ প্রকল্প দু’টিতে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে সার্ভেয়ারগণ ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। র‌্যাব সদস্যরা বুধবার বিকালে শহরের বাহারছড়া এলাকার সার্ভেয়ার ওয়াসিমের বাসা থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা এবং সার্ভেয়ার ফরিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা জব্দ করেন। অপরদিকে শহরের তারাবনিয়ার ছড়া এলাকায় সার্ভেয়ার ফেরদৌসের বাসায় অভিযান চালিয়ে আরো প্রায় ২৭ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। র‌্যাব ৬ লাখ টাকাসহ সার্ভেয়ার ওয়াসিমকেও আটক করে।
বিপুল পরিমাণ টাকাসহ সার্ভেয়ার আটকের ঘটনা সম্পর্কে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, এটি ওই সার্ভেয়ারের ব্যক্তিগত অপরাধ। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এলআর ফান্ড ও তাদের নিত্য অপরাধ সম্পর্কের অভিযোগগুলো সত্য নয় দাবি করে ডিসি আরো বলেন, চেকগুলো কনফারেন্স রুমে উপকারভোগীদের ডেকে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কোথাও হয়রানির শিকার হয় কী না। কিন্তু কেউ অভিযোগ না করলে ব্যবস্থা নেয়া যায় না এবং অপকর্মগুলোও আড়াল থাকে। কারো এমন অপরাধ সামনে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবো না।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর