কীভাবে শরীরে প্রবেশ করে করোনা জেনে নিন আক্রমণের পথগুলো

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের ত্রাস চলছে বিশ্ব জুড়ে। ভাইরাসটি রোধে নানা সতর্কতামূলক প্রচার চলার পরও ভাইরাসটি নিয়ে ও ভাইরাস থেকে তৈরি হওয়া অসুখ নিয়ে এখনো নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে কী কার্যকলাপ ঘটায়, কোন অংশে থাবা বসায় তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে শরীরে এর কার্যক্রম বোঝার আগে ভাইরাসটি কীভাবে শরীরে প্রবেশ করে তা জানা দরকার।

ন্যাশভিল-এর ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম শ্যাফনারের মতে, রোগাক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশির ড্রপলেট বায়ুতে ঘুরে বেড়ায়। রোগীর কাছাকাছি থাকা সুস্থ মানুষের নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমে তার শরীরে প্রবেশ করে এই ড্রপলেট। শরীরে এসেই ভাইরাসের অণুগুলো দ্রুত নাসাপথের পিছন দিকে বা গলার ভিতরের দিকে মিউকাস মেমব্রেনের ভিতরে গিয়ে সেখানকার কোষে হানা দেয়। সেই কোষই তখন হয়ে যায় গ্রাহক বা রিসেপ্টর কোষ।

করোনাভাইরাসের দেহতল থেকে উঠে আসা বা স্পাইকের আকারে অবস্থান করা প্রোটিনকণাগুলো কোষের আস্তরণকে আঁকড়ে ধরে ভাইরাসের জিনগত উপাদানকে সুস্থ মানুষটির দেহকোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। ভাইরাসের এই জিনগত উপাদানগুলো কোষের বিপাক ক্ষমতার উপর দখল নিয়ে নেয়। পরে কোষকে নিয়ন্ত্রণ করেই সে তাকে দিয়ে সেই ভাইরাসের বৃদ্ধি ও বেড়ে ওঠায় সাহায্য করতে কোষকে বাধ্য করে।

শরীরে ঢুকে শ্বাসজনিত সমস্যা কীভাবে ঘটায়?

কোষ যখন বাধ্য হয়ে ভাইরাসের বৃদ্ধি ও ফুলেফেঁপে ওঠার কাজে মন দেয়, তখন বেড়ে যাওয়া ভাইরাস অণুগুলো ফেটে গ্রাহক কোষের চারপাশে থাকা অন্যান্য কোষগুলোকেও আক্রমণ করে। এরই উপসর্গ হিসেবে গলাব্যথা ও শুকনো কাশি শুরু হয়। এর পর দ্রুত এই ভাইরাস ব্রঙ্কিওল টিউবে ছড়িয়ে পড়ে। যখন বাড়তে বা়ড়তে সেই ভাইরাস ফুসফুসে এসে পৌঁছয়, তখন ফুসফুসের মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ তৈরি হয়। এটি অ্যালভিওলাই ও ফুসফুসের থলিগুলোর ক্ষতি করে। ফলে এদের পক্ষে সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণের কাজটাও কঠিন হয়ে পড়ে।

ভাইরাসটি কোন পথে ছড়ায়?

শিকাগো স্কুল অব মেডিসিনের প্যাথোলজি বিভাগের অধ্যাপক সু-ইউয়ান জিয়াও চীনের করোনা-আক্রান্ত রোগীদের রিপোর্ট পরীক্ষা করেন। তার মতে, ফুসফুসের দুই পা‌শের পেরিফেরিয়াল অঞ্চলে আক্রমণ করে উপরের শ্বাসনালী ও ট্রাকিয়ার দিকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।

আইকাহান স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখিয়েছেন, চীনে অনেক রোগীর প্রাথমিক পর্যায়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়েছিল। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, রোগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের অংশগুলোতে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। এমন ছাপ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাল শ্বাস-প্রশ্বাসের সংক্রমণের জন্যই হয়। অসুস্থতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অস্বচ্ছ অঞ্চলগুলো ছড়িয়ে পড়ে ও ঘন হতে থাকে।

শুধু ফুসফুসেই এই ভাইরাস হামলা চালায়?

গবেষক কম্পটন ফিলিপের মতে, মিউকাস মেমব্রেনের পথ ধরেই এই ভাইরাস ছড়ায়। তাই নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে তা মিউকাস মেমব্রেন ধরে এগোতে এগোতে পায়ুদ্বার পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। পথে যে কোনও অংশেই চালাতে পারে করোনা-সন্ত্রাস। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমেও এই ভাইরাস হানা দেয়। তখন জ্বর-সর্দি-কাশির সঙ্গে ডায়েরিয়া বা বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। রক্তবাহেও প্রবেশ করতে পারে এই জীবাণু। করোনাভাইরাস রোগীর আরএনএ ​​এবং মলের নমুনাতেও ধরা পড়েছে। তবে সংক্রামক এই ভাইরাসকে রক্ত বা মল ধরে রাখতে পারে কি না তা নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট ধারণায় পৌঁছানো যায়নি।

এছাড়াও এই ভাইরাসের আক্রমণে অস্থিমজ্জা এবং লিভারের মতো অঙ্গগুলোও ফুলে উঠতে পারে। শরীরে এই ভাইরাস ছড়়িয়ে যাওয়া মাত্র শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এর সঙ্গে লড়াই শুরু করে। ফলে এর বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রদাহযুক্ত অঞ্চলগুলোর কিছুটা ক্ষতি হয়। ফলে শারীরিক ক্ষতি যে কেবল ভাইরাসের কারণেই হয়, এমন নয়। কিছুটা নিজের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারাও ক্ষতি হয়।

মস্তিষ্কেও কি এই ভাইরাস প্রভাব ফেলে?

এই ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত নন। এর আগে, সার্সের বেলায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছিলেন যে সার্স ভাইরাস কিছু রোগীর মস্তিষ্কেও অনুপ্রবেশ করতে পারত। তবে সার্স ও কোভিড-১৯-এর চরিত্রগত বেশ মিল থাকায় জার্নাল অব মেডিক্যাল ভায়ারোলজির গবেষকরা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে যুক্তি দিয়েছিলেন যে কিছু কিছু স্নায়ুকোষে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। সুতরাং এর সংক্রমণ অঞ্চল নিয়ে এখনই নিশ্চিত হয়ে কিছু ধরে না নেয়াই ভাল।

এই ভাইরাসের প্রকোপে কেউ খুবই অসুস্থ বোধ করেন, আবার কেউ কম অসুস্থ হন, কেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা শক্তিশালী বা দুর্বল, তার উপর নির্ভর করে এই অসুখ কার শরীরে কতোটা হানা দিবে। বয়স্ক ব্যক্তি বা ডায়বেটিস, নিউমোনিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্য কোনও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সমস্যায় ভুগলে রোগের লক্ষণ গুরুতর ভাবে প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর