নিজের শাশুড়ির সঙ্গেও ঘৃণ্য কাজটি করেন শাহেদ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্র’তারণাই তার একমাত্র হা’তিয়ার। এই কৌশলেই ঠ’কিয়েছেন বহু মানুষকে। হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। প্র’তারণার অভি’যোগে রয়েছে তার বি’রুদ্ধে অর্ধশত মামলা। সবশেষ প্র’তারণার অভি’যোগে সোমবার (১৩ জুলাই) তার বি’রুদ্ধে চট্টগ্রামে একটি মা’মলা হয়েছে। ‘প্র’তারক’ শাহেদ যে শুধু সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্র’তারণা করেছেন তা নয়, প্রতারণা করেছেন স্বজনদের সাথেও। বাদ যাননি শাশুড়িও।

রিজেন্টের শাহেদ নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য গোপন করেই সিলেটের মেয়ে সাদিয়া আরাবি রিম্মির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন শাহেদ। একপর্যায়ে তাকে বিয়ে করেন তিনি। রিম্মির মা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। কয়েক বছর আগেই তিনি মা’রা যান।

রিম্মিকে বিয়ে করার পর শাশুড়ির বিশ্বস্ততা অর্জন করেন শাহেদ। একপর্যায়ে শাশুড়ির ব্যাংক হিসাব থেকেও প্র’তারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। প্র’তারণাসহ নানা অপক’র্মে সিদ্ধহস্ত শাহেদ। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে তিনি জ’ড়িত হুন্ডি ব্যবসাতেও। দেশে-বিদেশে রয়েছে তার বিপুল পরিমাণ টাকা। সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে তার অন্তত ৬ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা।

সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমায় শাহেদের শ্বশুরবাড়ি। সূত্রমতে শাহেদের শাশুড়ি ঢাকার বনানীতে থাকতেন। স্বামীর মৃ’ত্যুর পর একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। শাহেদ রিম্মিকে বিয়ে করার পর শাশুড়ির কাজকর্মে সহযোগিতা করতেন। দলীয় প্রভাব ও নিজের বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে সহজেই শাশুড়ির আস্থা অর্জন করেন। একপর্যায়ে শাশুড়ির ব্যাংক হিসাবে থাকা কোটি টাকার প্রতি লো’ভ জন্মে তার। নিজের ব্যবসার প্রয়োজনের কথা বলে এক সপ্তাহের জন্য টাকা ধা’র নেন শাহেদ। তারপর আর ফেরত দেননি ওই টাকা। নিজের শাশুড়ির সঙ্গেও এমন ঘৃণ্য কাজটি করেন শাহেদ। আর এ নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্কের চ’রম অবনতি ঘটে।

শাহেদের হুন্ডির ব্যবসায় জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। হুন্ডি ব্যবসার প্রয়োজনেই সিলেটে আসা-যাওয়া ছিল। হন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন শাহেদ। দেশে ও দেশের বাইরে কলগার্ল নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। প্রায়ই যেতেন থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। অভিজাত হোটেলে থাকতেন। গত জানুয়ারি মাসে এক টিভি উপস্থাপিকাকে সঙ্গে নিয়ে সিঙ্গাপুর যান শাহেদ। সেখানেও তার একটি ফ্ল্যাট আছে বলে তথ্য পেয়েছে তদ’ন্তকারীরা। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সিঙ্গাপুরে হুন্ডি চো’রাকারবারিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে সিঙ্গাপুর সিটির ম্যারিনা বরিবার্ড এলাকায় ডিবিএস ব্যাংকে তার ৬ কোটি টাকার অনুসন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই টাকা উ’দ্ধারের ব্যাপারে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি সিআইডির মানিলন্ডারিং শাখাও কাজ শুরু করেছে। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকার একটি অংশ তিনি সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে পাঠিয়েছেন।

সূত্রমতে, সিঙ্গাপুরের ওই ব্যাংক হিসাবে টাকা রাখার বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করেছে জাহিদ ও রজব নামে তার দুই বন্ধু। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ওই দুই বন্ধুর বিষয়ে তথ্য নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইন্টারপোলের সাহায্য নেবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংকে টাকা রয়েছে শাহেদের। কিন্তু দেশের ব্যাংক হিসাবগুলোতে স’ন্দেহ করার মতো লেনদেনের তথ্য এখনো পায়নি গোয়েন্দারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, কৌশলে সব টাকা বিদেশে পা’চার করেছেন শাহেদ। অধিকাংশ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার বাসিন্দা হুন্ডি ব্যবসায়ী শরিফের সঙ্গে তার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ধা’রণা করা হচ্ছে, শরিফের সঙ্গে হুন্ডি ব্যবসায় সম্পৃক্ত শাহেদ। এছাড়াও ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকা কেন্দ্রিক অবৈধ হুন্ডিচক্র গড়ে তুলেছিলেন শাহেদ। তার এই চক্রে সক্রিয়ভাবে ১০ জন মিলে কাজ করতো। তাছাড়াও উত্তরা এলাকার একটি প্রাইভেট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা রয়েছেন গোয়েন্দাদের দৃষ্টিতে। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে শাহেদের। রিজেন্ট হাসপাতালে শাহেদের সঙ্গে প্রায়ই সাক্ষাৎ করতেন বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, মূলত আর্থিক নিরাপত্তার জন্যই বিদেশে টাকা পাচার করেছেন শাহেদ। তার ধারণা ছিল দেশে যেকোনো সময় অপকর্মের জন্য আট’ক হতে পারেন তিনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ক্যাসিনো অভি’যানের সময় এই আত’ঙ্ক পেয়ে বসে তাকে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর