A Russian Muslim prays in the central Qol Sharif mosque in Kazan, Tatarstan, on 15 April 2011. AFP PHOTO / DMITRY KOSTYUKOV (Photo credit should read DMITRY KOSTYUKOV/AFP/Getty Images)

যে দোয়া পড়লে বালা মুসিবত দূর হয়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মহান আল্লাহতায়ালা একমাত্র মালিক যিনি সর্বশক্তিমান, সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা। সমস্ত মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহতায়ালার ইবাদত করার জন্য। দুনিয়াটা মেহনতের জায়গা। ঈমান-আমল-নেকির মাধ্যমে দুনিয়ায় মেহনত করে আল্লাহতায়ালার ফায়সালার মাধ্যমে আখেরাতে জান্নাত পাওয়া যাবে।

দুনিয়ার জীবনে চলার পথে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হয়ে থাকি। তবে সকল বিপদ সৃষ্টি ও বিপদ থেকে মুক্ত করার একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ পাক। তাই বিপদে পড়লে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্যে চাইতে হবে।

পাশাপাশি পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ নিপতিত হয়, তা তোমাদেরই কর্মফল। তিনি অনেক গুনাহ মাফ করে দেন।’ (সুরা আশ্-শূরা: ৩০)। ‘আর যখন তোমাদের ওপর মুসিবত এল, যার দ্বিগুণ তোমরা ঘটিয়েছ, তখন তোমরা বললে, এটা কোত্থেকে এল! (হে নবী) আপনি বলে দিন, এ তো তোমাদের পাপ থেকেই; নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আল ইমরান: ১৬৫; মারেফুল কোরআন: ৬৭৫৩)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে ফ্যাসাদ প্রকাশ পায়, যার ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ তাদের আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রুম, আয়াত: ৪১)।

গুনাহ বেশি হলে সবকিছু থেকে বরকত উঠে যায়। ফ্যাসাদ শুরু হয়ে যায়। বিপদ ও বালা-মুসিবত একের পর এক আসতেই থাকে। যুগে যুগে মানুষকে আল্লাহু তাআলা বিভিন্ন আজাব-গজব দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন, সতর্ক করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান, মাল ও ফল-ফলারির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা নিজেদের বিপদ-মুসিবতের সময় বলে “নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী”, তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭)।

পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবত দূর করার জন্য নিচের দোয়াটি আমল করতে পারি।

দোয়া: লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।

অর্থ: আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। -সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমি (নবী) ইউনুসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তাকে দুঃখ থেকে মুক্তি দিয়েছি। অনুরূপভাবে যে মুমিনরা এ দোয়াটি পড়বে আমি তাদেরও মুসিবত থেকে মুক্তি দিব। -সূরা আম্বিয়া : ৮৮

হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মুসলমান হজরত ইউনুস (আ.)-এর ভাষায় দোয়া করবে; সে যে সমস্যাতেই থাকুক না কেন- আল্লাহতায়ালা তার ডাকে সাড়া দিবেন। -তিরমিজি

হজরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) দুঃখ-কষ্টের সময় বলতেন : লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন। (একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয় আমি সীমা লঙ্ঘনকারী)। -জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০০

এটা কোরআনের দোয়া এবং দোয়া ইউনুস নামে প্রসিদ্ধ। এই দোয়া যে যত বেশি পড়বে আল্লাহতায়ালা ওই বিপদ সহজ করে দেবেন।

যদি আমরা এ জাতীয় ছোট ছোট দোয়া বেশি বেশি পাঠ করি এবং নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করি তাহলে আশা করা যায় মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন।

বর্তমানে করোনাভাইরাসসহ যাবতীয় বালা-মুসিবত সারা বিশ্বকে আতঙ্কিত করছে। এ সময়দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীকে রক্ষার জন্য বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো সব বিশেষ দোয়া অব্যাহত রাখতে হবে।

নফল ইবাদত ও দোয়ায় রত থেকে আমাদের রাতগুলো অতিবাহিত করা উচিত। কেননা দুনিয়াতে কল্যাণ ও উপকার যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে আসে তেমনি বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্টও একমাত্র তিনিই দূর করতে পারেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো কঠিন সমস্যা বা বিপদের সম্মুখীন হতেন তখনই তিনি আল্লাহর কাছে একান্তভাবে দোয়া প্রার্থনা করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-

উচ্চারণ : ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাযাবিহি ওয়া ইকাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাযাতিশ শায়াত্বিনি ওয়া আঁই ইয়াহদুরুন।’ (আবু দাউদ)

অর্থ : আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্যের মাধ্যমে তার ক্রোধ ও আজাব থেকে, তার বান্দার শত্রুতা থেকে এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে সুরক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলার আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তারা আমার কাছেই না আসতে পারে।’

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালায়ি ওয়া দারাকিশ শিক্বায়ি ওয়া সুয়িল কাদ্বায়ি ওয়া শামাতাতিল আদায়ি।’ (বুখারি)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, বিপদ-আপদের দুর্বিষহ অসুবিধা থেকে, দুর্ভাগ্যের করাল গ্রাস থেকে, ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত থেকে এবং শত্রুতার আনন্দ থেকে।’

বালা-মুসিবত থেকে মুক্ত থাকতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতি ছোট্ট একটি দোয়া সব সময় (সকাল-সন্ধ্যায়) পড়তেন। আর তাহলো-

উচ্চারণ : ‘ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছু, আসলিহ লি সাঅনি কুল্লুহু, ওয়া লা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বারফাতা আইনিন।’

অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব, হে সৃষ্টিকুলের নিয়ন্ত্রক, আপনার রহমতের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, আপনি আমার সকল বিষয় শুদ্ধ করে দিন, এক মুহূর্তের জন্যও আপনি আমাকে আমার উপর ছেড়ে দিয়েন না।’ (নাসাঈ, তিরমিজি, মুসতাদরাকে হাকেম)।

বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে এই দোয়াটি আমাদের সবার প্রতিনিয়ত পাঠ করা উচিত। তিনিই ভালো জানেন কার দোয়া তার দরবারে কখন গৃহীত হয়ে যায়। তাই আমাদের কাজ হচ্ছে দোয়া করতে থাকা। দোয়া কবুল করার মালিক তিনি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দেখতেন কোনো মানুষ বিপদে বা সমস্যায় পড়েছেন, তখন তিনি তাদের বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করতেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ বিপদগ্রস্ত লোক দেখলে এ দোয়া পড়বে-

উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আফানি মিম্মানিবতালাকা বিহি, ওয়া ফাদ্দালানি আলা কাছিরিম মিম্মান খালাকা তাফদিলা।’ (তিরমিজি)

অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাকে বিপদাক্রান্ত করেছেন, তা থেকে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে তিনি তার সৃষ্টি থেকে সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।’ (তিরমিজি)

এছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন ধরনের আজাব থেকে রক্ষার জন্য এ দোয়াও পড়তেন-

‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদ্বাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আফিনা ক্বাবলা জালিকা।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার ক্রোধ দ্বারা হত্যা করো না আর তোমার আজাব দিয়ে ধ্বংস করো না বরং এর পূর্বে তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর।’

প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত বর্তমান পরিস্থিতিতে আল্লাহর বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। বিশেষ করে করোনার এ দিনগুলোতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়াগুলো পড়া।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কোনো মাধ্যম ছাড়াই রহমত বরকত মাগফেরাত দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তাই আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী তাকে ডাকলেই আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সব কল্যাণ দান করবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর