তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ৩৩৩৭ কোটি টাকা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ স্বল্পসুদ হওয়ায় ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের ঋণের দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ ইউনিটের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চে ছিল ৬০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে এ ঋণ ছিল ৬০ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের অফশোর ইউনিটে ঋণে সুদহার ৬ শতাংশেরও নিচে। স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা এ ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না। শুধু মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে। এসব কারণেই বাড়ছে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, অফশোর ব্যাংকিংয়ে ঋণ বেড়েছে-এটা খুবই ইতিবাচক। আমাদের সঙ্গে বিদেশি ব্যাংকগুলো লেনদেন বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের ওপর তাদের আস্থা আছে। তবে সাবেক ব্যাংকার শফিকুর রহমান বলেন, অফশোর ব্যাংকিংয়ে নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

তা না হলে রিজার্ভে চাপ পড়বে। যদিও এখন রিজার্ভ ভালো অবস্থানে আছে। এই প্রভাব পরে পড়তে পারে। অফশোর ব্যাংকিং হল- বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়ার জন্য গঠিত ব্যাংকের আলাদা ইউনিট। দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার জন্য ১৯৮৫ সালে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক এই ইউনিট গঠন করে ঋণ বিতরণ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, জুন পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এইচএসবিসি ব্যাংক। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক ৪ হাজার ৩৯৪ কোটি, দ্য সিটি ব্যাংক ৩ হাজার ৫৬ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ২ হাজার ১০৮ কোটি, ইউসিবি ১ হাজার ৯৩৯ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ১ হাজার ৮৯৮ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৮৭৬ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১ হাজার ৭৫৩ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৭৩০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক দেড় হাজার কোটি ও অগ্রণী ব্যাংক অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, জুন পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৫১ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ। অফশোর ব্যাংকিংয়ে খেলাপি ঋণের মধ্যে এবি ব্যাংকের ৩২৬ কোটি টাকা এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ১০২ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাকি খেলাপি ঢাকা, প্রাইম ও উরি ব্যাংকের।

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বিতরণ করা ঋণের অন্তত ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশে অবস্থিত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যায়। অফশোর কার্যক্রমের তহবিল আহরণের সুযোগ বৃদ্ধি, বৈদেশিক তহবিলের ব্যবহার নিশ্চিত করা, তহবিল ব্যবস্থাপনা যথাযথ রাখার মাধ্যমে ব্যবসার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের আরও সুষ্ঠু বিকাশের জন্য গত ১৮ জুন আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে একটি ব্যাংকের মূলধনের ২০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে। এ সংশোধনীর ফলে অফশোর ব্যাংকিংয়ে সক্ষমতা বেড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর