মডেলিংয়ের মোহে তরুণীর জীবন গেল সিলিং ফ্যানে ঝুলে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ তরুণীর স্বপ্ন ছিল মডেলিং করে ক্যারিয়ার গড়ার। এই স্বপ্ন নিয়ে তিনি চট্টগ্রামের একটি কথিত ‘মডেলিং এজেন্সি’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাদের হয়ে অখ্যাত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ফটোসেশনেও অংশ নিতে দেখা যায় ওই তরুণীকে।

চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা মাহি নামের সেই তরুণী হঠাৎই নিজের বাসায় আত্মহত্যা করে বসলেন। এমন অস্বাভাবিক ঘটনার পর হালিশহর থানা পুলিশের সায়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই সেই তরুণীর লাশ দাফন করে ফেলা হয়। এ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে নিজের রুমের ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন ১৯ বছরের তরুণী মাহি। ঘটনা টের পাওয়ার পর ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে মাহিকে নিয়ে যাওয়া হয় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ‘মৃত ঘোষণা’ করেন।

জানা গেছে, এ ধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় লাশের ময়নাতদন্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ‘পরিবারের অনুরোধে’ হালিশহর থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই মাহির মরদেহ দাফনের জন্য তার পরিবারকে অনুমতি দেয়।

ময়নাতদন্ত কেন হল না— এমন প্রশ্নে হালিশহর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ময়নাতদন্ত করাবে না বলেছে, সেজন্য মামলা দায়ের করে তারা লাশটি দাফন করার জন্য নিয়ে গেছে।’

১৯ বছর বয়সী মাহির বাড়ি চাঁদপুর হলেও তিনি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে নানার বাড়িতে বসবাস করতেন। জানা গেছে, মাহি নগরীর একটি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

সেই সাথে চট্টগ্রামের উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়া নামে একটি কথিত মডেলিং এজেন্সিতে ‘মডেলিং’ করতেন। নগরীর মেহেদীবাগ ন্যাশনাল হাসপাতালের পাশের একটি ভবনের তৃতীয় তলায় প্রতিষ্ঠানটি ‘কার্যক্রম’ চালায় বলে তাদের ফেসবুক পেইজ থেকে জানা গেছে।

‘মডেলিং’য়ের সূত্রে এসময় নাসিরাবাদ এলাকার এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মাহি— এমন কথা নিশ্চিত করে উইন্ডোজ মাল্টিমিডিয়া নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত এক তরুণ জানিয়েছেন, ‘সম্প্রতি সেই সম্পর্ক ভেঙে গেছে বলে আমরা শুনেছি।

’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাহির ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু জানান, ‘শোবিজ মিডিয়ায় অবস্থান পাকাপোক্ত করতে গিয়ে মাহি একপর্যায়ে মাদকসেবনের সাথে জড়িয়ে যায়। তার সঙ্গে কয়েকটি ছেলের সম্পর্কও ছিল। তার পরিবার বিষয়টি টের পেয়ে তাকে ঘরের বাইরে যেতে দিতো না।’

মাহির মামা ঢাকার ডেমরা থানার ওসি তদন্ত মো. সেলিম বলেন, ‘মাহি এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। খুব শান্ত ও ভালো মেয়ে। রাগটা একটু বেশি। গতকাল আমার বাবার (মাহির নানা) কাছে বান্ধবীর বাসায় যেতে দিতে বলেছিল।

কিন্তু তার বাবা করোনার মধ্যে ঘরের বাইরে যেতে মানা করার পর সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। এর একপর্যায়ে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে কোনও সাড়া না পেয়ে পরিবারের অন্যরা দরজা ভেঙে দেখে মাহি ফ্যানের সাথে ঝুলছে।’

তিনি বলেন, ‘মাহির আত্মহত্যা নিয়ে আমাদের কারও কাছে কোনো অভিযোগ নেই। যার জন্য আমরা মামলায় কারও দোষ নেই বলে উল্লেখ করেছি। অনেকে অনেক কথা বলছে ফেসবুকে ছবি পোস্ট দিয়ে। তারা মূলত আত্মহত্যার ঘটনাটিকে অন্যদিকে মোড় দেওয়ার চেষ্টায় এমন কথা রটাচ্ছে।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের হালিশহর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘গতকালকে (মঙ্গলবার) জিইসি মোড়ে এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য নানাকে বলেছিল সে।

কিন্তু তার নানা যেতে মানা করায় রুমে গিয়ে অভিমান করে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা।’

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর