ছয় জেলায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু

বজ্রপাতের দেশের ছয় জেলায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে দুই ভাই, পটুয়াখালীর আমতলীতে দুজন ও বাউফলে একজন, বরিশাল নিহত একজন, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ ও নড়াইলে  একজন করে মৃত্যু হয়েছে। লালমনিরহাটে বজ্রপাতে ২১ জন আহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকালের মধ্যে বজ্রপাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ভারি বর্ষণে মৌলভীবাজারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে বজ্রপাতে দুই চাচাত ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নে এ দুর্ঘটনার পর রাতে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন-উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মো. হানিফের ছেলে জানে আলম (২৫) ও আবদুল হাইয়ের ছেলে সোহেল (২২)। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাত-জেঠাত ভাই। নিহতরা পেশায় দিনমজুর বলে জানিয়ে মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুজন বাড়ির পাশে খালে জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে একসঙ্গে মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে দুজনকে জরুরিভাবে সন্দ্বীপ মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে গেলে রাতে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। আমতলী সংবাদদাতা জানান, গত বৃৃহস্পতিবার রাতে বজ্রপাতে আমতলী উপজেলার পশ্চিম চিলা গ্রামের নশা আকন (৫০) ও চালিতাবুনিয়া গ্রামের গাজী রাসেলের (২৬) মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চিলা গ্রামের নশা আকন ও চাওড়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের গাজী রাসেল বিলে মাছ ধরতে যান। রাত পৌনে ১২টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বৃষ্টি শেষে যখন তারা বাড়ি ফিরছিলেন না তখন পরিবারের লোকজন তাদের খুঁজতে বের হয়। পরে নশা আকনকে বাড়ির পাশে বিলে মাথা ঝলসানো অবস্থায় এবং গাজী রাসেলকে পার্শ্ববর্তী মকবুল মোল্লার পরিত্যক্ত পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করে। পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলার বাউফলে উপজেলায় বজ্রপাতে ফোরকান মৃধা (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় ওই গ্রামের হাসেম মৃধার ছেলে ফোরকান মৃধা জলাভূমিতে মাছ ধরতে যান। এ সময়  বজ্রপাতে তার মৃত্যু ঘটে। বরিশাল অফিস জানায়, আকস্মিক বজ্রপাতের বিকট শব্দে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে পদকপ্রাপ্ত এক রত্নগর্ভা মা চিকিত্সাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সকালে মারা গেছেন। ঘটনাটি জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের। ওই গ্রামের মৃত কিরণ বড়ালের পুত্র ডা. শ্যামল বড়াল জানান, তার রত্নগর্ভা মা সাবিত্রী বড়াল (৬৮) বৃহস্পতিবার রাতে আকস্মিক বজ্রপাতের বিকট শব্দে হূদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তিনি নিজেই বাড়িতে মায়ের চিকিত্সা করেন। চিকিত্সাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মা সাবিত্রী বড়াল মারা যান। অপরদিকে গতকাল সকালে উপজেলার নাঘার গ্রামের অর্জুন হালদারের স্ত্রী সুলতা হালদার বজ্রপাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভুরুঙ্গামারী প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বজ্রাঘাতে নয়ন (১২) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। নয়ন গত বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে মাছ ধরতে গেলে বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়। সে উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের পশ্চিম পাথরডুবি (জোড়া দীঘি) গ্রামের মোকাদ্দেস আলীর ছেলে। গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জে বজ্রপাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হারুনার রশিদ হাসনাতের (২১) মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহত হাসনাত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দা ত্রিবর্দী গ্রামের খলিল মাতুব্বরের ছেলে। তার সহপাঠীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার পর গুঁড়গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে মেসে যাওয়ার জন্য বাইরে বের হন। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে এলে বজ্রপাত ঘটলে মারাত্মক আহত হন। পরে তাকে সহপাঠীরা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই নিহত শিক্ষার্থীর মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইলে বজ্রপাতে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ মুন্নী বেগমের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মুন্নী পৌরসভার বরাশুলা গ্রামের খানপাড়ার রশিদ খানের স্ত্রী। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। মুন্নী ঘরের বারান্দায় বসে থাকা অবস্থায় বজ্রপাত ঘটলে আহত হন। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার তিন ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বজ্রপাতে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। কুচলিবাড়ী, পাটগ্রাম ও জোংড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বজ্রপাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পাটগ্রাম হাসপাতালের চিকিত্সক সহকারী সুনীল চন্দ্র রায় জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাটগ্রাম হাসপাতালে উপজেলার একাধিক গ্রাম থেকে বজ্রপাতে আহত রোগীরা ভর্তি হয়। পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর কুতুবুল আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বজ্রপাতে আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে গত কয়েক দিনে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের জেলাগুলোতে পানি আরও বেড়েছে। বড়লেখা প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঢলের পানিতে ডুবে গছে বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট, পুকুর, ফসলের মাঠ। রমজান মাসে হঠাত্ ঢলের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বড়লেখা উপজেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়। সকালে উজান থেকে নামে পাহাড়ি ঢল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। ঢলের পানি দ্রুত নামতে না পারায় বেলা ৩টার দিকে পৌরশহরের পানিধার এলাকার কয়েকটি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। কমলগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরনো ভাঙন দিয়ে চারটি গ্রামের পর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টায় মৌলভীবাজার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আলেপুর গ্রাম এলাকায় প্রায় ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের ভাঙন দিয়ে ঢলের পানি গ্রামে প্রবেশ করে। পানির স্রোতে আলেপুর গ্রামের একটি বসতঘর নদীতে বিলীন হয় এবং আরও তিনটি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুক্রবার ভোর থেকে ধলাই নদীতে পানি কমতে শুরু করলে উপজেলা সদর ও পৌরসভা এলাকার উন্নতি হলেও চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ব্যাপক এলাকা নিমজ্জিত হয়। কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে চার গ্রাম প্লাবিত হয়ে চার হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিল। এদিকে উপজেলা সদর ও পৌরসভা এলাকা থেকে ঢল নেমে শুক্রবার সকাল থেকে আলীনগর ইউনিয়নের আলীনগর বস্তি, হালিমা বাজার, শমসের নগর ইউনিয়নের ঈদগাহ টিলা, শিংরাউলী, সতিঝির গাঁও, মরাজানের পার, রাধানগর, কেছুলটি, পতনঊষার ইউনিয়নের ধোপাটিলা, হালাবাদী, মাইজগাঁও, পালগাঁও গ্রামের ব্যাপক এলাকার ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়। সরেজমিন দেখা যায়, চারটি গ্রামের ৭০ শতাংশ জমিতে ৩-৪ ফুট পরিমাণ পানি রয়েছে। গ্রামবাসী জানায়, কমপক্ষে ৫০০ হেক্টর জমির রোপিত আউশ ফসল বিনষ্ট হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর