উড়ন্ত বার্সার সামনে খেই হারানো রিয়াল

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ তিনদিন আগে ক্যাম্প ন্যু’য়ে ফেরেন্সভারোসের বিপক্ষে ‘জি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫-১ গোলে জিতে ২০২০-২১ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শুভসূচনা করে বার্সেলোনা। গোল পেয়েছেন তরুণ তুর্কী আনসু ফাতি ও লিওনেল মেসি। আগে যেমন মেসি গোল করা মানেই রেকর্ডের খাতায় ওলট-পালট, এখন সেটিই ঘটছে ফাতির কল্যাণে। এদিনও দু’জনের জন্যই রাতটি ছিল রেকর্ডের আলোয় মোড়ানো। ক্যারিয়ারের শুরুতে দুর্দান্ত পথ চলায় আরেকটি রেকর্ড গড়ার পর বার্সেলোনার তরুণ ফরোয়ার্ড ফাতি জানালেন, শিখে চলেছেন অধিনায়কের কাছ থেকে।
ম্যাচের ২৭তম মিনিটে সফল স্পট কিকে দলকে এগিয়ে নেন মেসি। এর সঙ্গে প্রথম ফুটবলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা ১৬ আসরে গোল করার কীর্তি গড়েন তিনি। প্রথমার্ধেই দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলটি করেন ১৭ বছর বয়সী ফাতি। আগেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার রেকর্ড গড়া এই স্প্যানিয়ার্ড প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বয়স ১৮ হওয়ার আগেই প্রতিযোগিতায় করলেন দুই গোল। ম্যাচ শেষে মুভিস্টারকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় আরও একবার মেসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ফাতি, ‘মেসি এখনও মেসিই আছেন। যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি গোল করতে পারেন। তাকে এখানে পাওয়ায় আমরা খুব খুশি এবং তার কাছ থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখছি।’
দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে পাঠালেও গোলের কৃতিত্ব সতীর্থকে দিলেন ফাতি, ‘আমরা দারুণ জয়ে আসর শুরু করেছি। আমাদেরকে এভাবে এগিয়ে যেতে হবে। গোলের জন্য আমার সকল সতীর্থদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, তারা আমার জন্য সবকিছু সহজ করে দেন। ফ্রেংকির (ডি ইয়ং) পাসটা ছিল অসাধারণ। আমাকে কেবল বলটা ঠেলে দিতে হয়েছিল।’
ম্যাচের ৮২তম মিনিটে স্কোরবোর্ডে নাম লেখান ১৭ বছর বয়সী আরেক ফরোয়ার্ড পেদ্রি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনাই প্রথম দল, এক ম্যাচে যাদের দুই গোলদাতার বয়স ১৮’র কম। পেদ্রির আগে ও পরে অন্য গোল দুটি করেন যথাক্রমে ফিলিপে কৌতিনিয়ো ও উসমান দেম্বেলে। দলের ফরোয়ার্ডরা গোল পাওয়ায় খুশি ফাতি, ‘দলের জন্য এটা ভালো। এর মানে আমরা ভালো দল। আমাদের মধ্যে যত প্রতিযোগিতা হবে ততই মঙ্গল; তাহলে আমাদের ভেতর থেকে আরও ভালোটা বেরিয়ে আসবে।’ মেসি-ফাতিদের সামনে এখন ক্লাসিকোর চ্যালেঞ্জ। আজ রাতে লা লিগায় ঘরের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে কাতালান দলটি। মুখিয়ে আছেন ফাতিও, ‘আমি সর্বোচ্চ নিবেদন নিয়ে এটা খেলতে নামব। এটা ক্লাসিকো; সবসময় এই ম্যাচ খেলার স্বপ্ন দেখেছি।’
একই রাতে মুদ্রার উল্টো পিছ দেখতে হয়েছে আসরের সবচেয়ে সফল দল রিয়াল মাদ্রিদকে। ৩-২ব্যবধানে হেরে গেছে মিনোজ শাখতার দোনেৎস্কের কাছে! করোনাভাইরাস ও চোটের কারণে ১০ গুরুত্বপ‚র্ণ খেলোয়াড়কে হারানো শাখতার প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল ৩-০ ব্যবধানে। সুযোগগুলো হাতছাড়া না হলে ইউক্রেনের দলটি স্কোরলাইন সমৃদ্ধ করতে পারত আরও। ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় হারে কপালে ভাজ ফেলেছে কোচ জিনেদিন জিদানের। পাশাপাশি খেলোয়াড়দের মাঝে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিও দেখছেন এই ফরাসি কিংবদন্তি।
দ্বিতীয়ার্ধে লুকা মদ্রিচ ও ভিনিসিউস জুনিয়রের গোলে ম্যাচে ফেরার আভাস দেয় জিদানের দল। যোগ করা সময়ে জালে বল পাঠিয়েও অফসাইডের জন্য হার এড়ানো যায়নি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে হারের জন্য জিদান দায় দিলেন নিজেদের বাজে খেলাকে, ‘আমাদের সবকিছুতেই কিছুটা ঘাটতি ছিল। তবে সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি। প্রথমার্ধে তিন গোল হজমের পর ভাষা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাদের প্রথম গোলে আমরা একটা ভুল করেছিলাম, এরপর ম্যাচটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল।’
তবে হারের দায় নিজের কাঁধেই নিচ্ছেন দলটির কোচ হিসেবে প্রতিযোগিতায় হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়া বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই ফুটবলার, ‘ঐ রাতে যা কিছু হয়েছে তাতে খুব বাজে অনুভুতি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। এটা বাজে একটা ম্যাচ ও রাত ছিল; তবে আমি হলাম কোচ এবং আমাকেই এর সমাধানগুলো খুঁজে বের করতে হবে।’
আগের ম্যাচে লা লিগায় ঘরের মাঠে কাদিসের বিপক্ষে হেরেছিল রিয়াল। টানা দ্বিতীয় হারের ক্ষত নিয়েই আজ রাতে লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের খেলতে হবে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে। চিন্তিত হলেও ক্যাম্প ন্যু’য়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন জিদান, ‘শনিবার (আজ) আমরা সেখানে ঘুরে দাঁড়াবো এবং এজন্য প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছি, এই ছাড়া কিছু বলার নেই। আমাদের জন্য ঐ রাতটা নেতিবাচক তবে আমাদের সবকিছুতে পরিবর্তন আনতে হবে।’
একটা সময় রিয়াল মাদ্রিদের চাইতে জিছুটা পিছিয়ে থাকলেও দু’দলের এই এই লড়াই রোমাঞ্চ ছড়ায় সমানে সমানে। ২৪৪ বার মুখোমুখিতে জয়-পরাজয়ের হিসেবও ইঙ্গিত দেয় সেটির, সমান ৯৬টি করে। আজ কে এগিয়ে যায় সেটিই দেখার।

এল-ক্লাসিকো
মুখোমুখি ম্যাচ বার্সেলোনা রিয়াল মাদ্রিদ ড্র
লা লিগা ১৮১ ৭২ ৭৩ ৩৬
কোপা দেল রে ৩৬ ১২ ১৬ ৮
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ৮ ২ ৩ ৩
অন্যান্য ২০ ৬ ৮ ৬
মোট ২৪৪ ৯৬ ৯৬ ৫২

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর