এই সময় কেন খাবেন থানকুনি পাতানানা রোগ নিরাময়ে

প্রাচীনকাল থেকেই থানকুনি পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে নানা রোগ নিরাময়ে। চার হাজার বছর আগের আর্য়ুবেদ শাস্ত্রে এই পাতার প্রচুর গুণাগুণ বর্ণিত রয়েছে। অনেক ওষুধও তৈরি হত এই পাতার রস থেকে। তবে এখন এই পাতার দেখা প্রায় পাওয়াই যায় না। এখনকার সময়ের অনেকে তো এই পাতা চেনেনও না।

শরীরকে নানা দিক দিয়ে সুস্থ রাখতে এই পাতার জুড়ি মেলা ভার। প্রতিদিন এই পাতার রস খেতে পারলে কোনো চিন্তাই থাকবে না। তবে শুধু আমাদের দেশেই নয়,খ্রিস্টপূর্ব ১৭ শতক থেকেই আফ্রিকা, জাভা, সুমাত্রাতেও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই পাতা। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এই পাতা বাটা খুবই উপকারী।

এছাড়াও আসছে শীতের মৌসুম। এসময় থানকুনি পাতা আপনাকে খেতেই হবে। কেন, এতো জোর দিয়ে বলছি? এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেসব-

সাধারণ ফ্লু সারায়
ঠান্ডা, কাশি কিংবা হঠাৎ জ্বর সারাতে এর জুড়ি নেই। সাধারণ ফ্লু তে আক্রান্ত হলে থানকুনি পাতার রস খান। দেখবেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

ক্ষত নিরাময় করে
কোনো ভাবে চোট পেলে কিংবা যদি কোথায় কেটে যায়। দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে থানকুনি পাতা দুর্দান্ত উপায়। থানকুনি পাতা বেটে কাটা জায়গায় লাগালে ব্যথা কম হবে আর রক্ত পড়াও বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি ক্ষত থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে না।

শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে
অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে। এছাড়াও অনেকের দেহে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হয়। থানকুনি পাতার রস খেলে রক্ত শুদ্ধ থাকে। ফলে শরীরের প্রতি কোশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যায়। ফলে অনেক সমস্যার উপশম হয়। হাত ফুলে যাওয়া, পা ফুলে যাওয়া এসব থেকে মুক্তি পেতে খেতে পারেন থানকুনি পাতা।

রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে
থানকুনি পাতার মধ্যে থাকে নানা রকম খনিজ উপাদান, যা তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যে কারণে অনেক জটিল রোগ থেকে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে হার্ট, কিডনি ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। অন্য অঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। তাই এই সময় সতর্ক থাকুন।

শরীরের ভেতরের জ্বালা কমায় 
কোনো কারণে শরীরের ভেতরে ক্ষত হলে নানা রকম সমস্যা হয়। জ্বর, ক্লান্তি এসব আসতেই পারে। এর সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমনকী খিদে কমে যাওয়া, পেশির ব্যথা এগুলোও থাকে। থানকুনি পাতার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটারি উপাদান। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বালা, যন্ত্রণা কমে যায়। এছাড়াও ক্লান্তি ভাব দূর হয়। সেই সঙ্গে অনেক রকম ইনফেকশন থেকেও দূরে রাখে।

অলসারের নিরাময় করে
পেটের যে কোনো রোগে থানকুনি পাতা খুব ভালো উপায়। আমাশয় থেকে আলসার সেরে যায় এই পাতার গুণেই। আর নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। ক্রনিক আমাশয়ের ক্ষেত্রে খুবই ভালো থানকুনি পাতা।

মানসিক অবসাদ কমায়
যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য খুব ভালো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা দুই কমে। এর ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায় 
নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যে কারণে ব্রেনসেল ভালোভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধি বাড়াতেও সহায়তা করে। এই কারণেই তো ছোট বাচ্চাদের থানকুনি পাতার রস খাওয়ানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

ঘুমের সমস্যা দূর করে
অনেকেরই রাতে ঘুম হয় না? রাতের পর রাত জেগে কাটান? তাহলে প্রতিদিন সকালে উঠে থানকুনি পাতা ভেজানো পানি খান। স্নায়ু শিথিল হবে। ঘুম আসবে খুব তাড়াতাড়ি।

ডিটক্সিফিকেশন 
গাজর কিংবা লেবুর রস শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। কিন্তু থানকুনি পাতা যে খুব ভালো ডিটক্সিফিকেশন করে তা কি জানতেন? প্রতিদিন থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু, মিশিয়ে খান। শরীরের সব টক্সিন বেরিয়ে যাবে। শরীর থাকবে ফুরফুরে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর