হাল না ছাড়া মানুষ জো বাইডেন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ৭৭ বছরের জীবনে সুদীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তাঁর। হোয়াইট হাউসে যাবার যে স্বপ্ন বহুদিন থেকে লালন করে আসছেন, সেই স্বপ্নের পথ এখন লড়াইয়ে লিপ্ত! ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তেজনাকর নির্বাচনে ম্যাজিক ফিগারের কাছাকাছি বাইডেন।

১৯৮৭ সালে একবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে নামলেন। ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তিনি অন্যের লেখা চুরি করে নিজর নামে চালিয়েছেন!

এই অভিযোগের সূত্র ধরে আরেকটা অভিযোগ সামনে আনা হয়, ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা। তখন তিনি আইনের ছাত্র হিসাবে তার সাইটেশন পেপারে আরেকজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, সেটা যে নিয়ম বহির্ভূত তা তিনি জানতেন না। এমন অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন!

পরে তাঁর এক জীবনীকারকে মি. বাইডেন বলেছিলেন, “ওই ঘটনা আমাকে কুরে কুরে খেয়েছে। নিজেকে আমি চিরকাল একজন সৎ মানুষ হিসাবে মনে করেছি। সেই জায়গাটায় বিরাট একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম।”

আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “এর জন্য দায়ী আমি নিজে। নিজের ওপর রাগ আর হতাশায় ভুগছি। আমেরিকার মানুষকে আমি কীভাবে বোঝাবো যে এটাই জো বাইডেনের আসল পরিচয় নয়। ওটা শুধু মস্ত একটা ভুল ছিল!”

এরপর স্বজন হারানো, স্ত্রী-পুত্রবিয়োগ, নিজের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ সহ নানা সংকটে আর ২০ বছর নিজের সঙ্গে সংগ্রাম করেন বাইডেন। এর মাঝে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন তাঁর চেয়ে বয়সে কনিষ্ঠ অনেকেই, যেমন- বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প!

২০০৮ সালে আবার দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে নামলেন। তবে বারাক ওবামার সঙ্গে পেরে উঠেননি। যদিও ওবামার পরে তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে নেন।

ফের ২০১৬ সালের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাননি, হিলারির কাছে হেরে যান। তখন প্রেসিডেন্ট হন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু হাল ছাড়েননি জো বাইডেন! তার স্বপ্ন হলো একদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। অবশেষে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন লাভ করলেন। সেখানেও অনিশ্চয়তা ছিলো। পেতে পেতেই যেন হেরে যাচ্ছিলেন। তবে একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে মনোনয়ন পান।

এমনই হাল না ছাড়া মানুষ জো বাইডেন। তাঁর জীবনী পড়ে অভিভূত মানুষ। এতো দীর্ঘ সময় ধরে একজন মানুষ কীভাবে স্বপ্ন লালন করতে পারে তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন।

তিনি প্রায়ই একটি কথা বলেন, “বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসাবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।”

এমন সংগ্রামমুখর যার জীবন, এমন সুন্দর কথা যিনি বলেন, তাঁরই হওয়া উচিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর