ডিইউপির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করছেন টেরিজা মে

অবশেষে ঝুলন্ত একটি পার্লামেন্ট পেল যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবারের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ৩১৯টি আসন পেয়ে বিজয়ী হলেও এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে না। এজন্য তাদের অন্য কোনো দলের সমর্থন নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ইতোমধ্যেই উত্তর আয়ারল্যান্ডের দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সমর্থনে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকার গঠনের জন্য ক্ষমতাসীন দলের লাগবে আর ৮টি আসন। ডিইউপির ঝুলিতে ১০টি আসন থাকায় টেরিজা মেকে সরকার গঠনের জন্য খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। অন্যদিকে লেবার পার্টি পেয়েছে  ২৬১টি আসন। তাদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অবশ্য এ দল থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের তিন কন্যা টিউলিপ রেজওয়ান সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও ড. রূপা হক। ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আভাসে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পাউন্ডের দাম দ্রুত পড়ে গেছে। বিবিসি, আলজাজিরা, সিএনএন। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর কনজারভেটিভ তথা টোরি পার্টির নেতা  প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেছেন, দেশের ভবিষ্যত্ নিশ্চয়তা দিতে এবং ব্রিটেনকে একটি সফল ব্রেক্সিট চুক্তির পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ডিইউপির সমর্থনে সরকার গঠন করবেন। এজন্য দলটিকে কী পরিমাণ ছাড় দিতে হবে আপাতত সেটি জানা যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন নতুন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদ ডিইউপিকে হয়তো ছেড়ে দিতে হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টেরিজা মের অবস্থান হবে খুবই দুর্বল এবং তিনি হয়তো বেশি দিন ক্ষমতায় টিকতেও পারবেন না। ভোটের এই ফলকে টেরিজা মের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কেননা তিন বছর বাকি থাকতেই তিনি যে বাজি ধরেছিলেন তাতে হেরে গেছেন। সরকার গঠনে রানীর অনুমতি নিতে বাকিংহাম প্যালেস যাওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে মে বলেন, বেশিরভাগ আসন এবং ভোটে জয়ী হওয়ার পর এখন কেবল তার পার্টিই ‘বৈধ’ সরকার গঠন করতে পারে। মে বলেন, তিনি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ডিইউপিতে ‘বন্ধু ও মিত্রদের’ সঙ্গে কাজ করবেন। কাজ শুরু করার আহ্বানও জানান তিনি। তবে ডিইউপির সঙ্গে মে কীভাবে কাজ করবেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি। নির্বাচনের ফলে দেখা গেছে, টোরি সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৩২৬ আসনের চেয়ে ৮টি আসন কম পেয়েছে। টোরির এই আসন হারানো, ভোট হারানো এবং জনসমর্থন কমাকে যথেষ্ট উল্লেখ করে প্রতিপক্ষ লেবার নেতা জেরেমি করবিন এরই মধ্যে টেরিজা মেকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘লেবার নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।’ অন্যদিকে লিব ডেম নেতা টিম ফ্যারনও বলেছেন, ‘মের লজ্জা পাওয়া উচিত। বিন্দু পরিমাণ আত্মমর্যাদা থাকলে তার পদত্যাগ করা উচিত।’ ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে শুরুতেই পার্লামেন্টে বিরোধিতার মুখে পড়ে নিজ অবস্থান আরও দৃঢ় করতে এপ্রিলে হঠাত্ করেই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মে। আগাম নির্বাচনের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, ব্রেক্সিট সামাল দেওয়ার মতো একটি নিশ্চিত, স্থিতিশীল ও শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন। আর এখন নির্বাচনের পর আগের চেয়ে ১২টি কম আসন নিয়ে অন্য দলগুলোর সমর্থনে সরকার গঠন করতে হচ্ছে তাকে। টোরির আসন শেষ পর্যন্ত দাঁড়াচ্ছে ৩১৯টিতে যা তাদের গতবারের চেয়ে ১২টি কম। অন্যদিকে লেবারের আসন বেড়ে দাঁড়াবে ২৬১টিতে। গতবার ৫৪টি আসন জেতা স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) আসন কমে হচ্ছে ৩৫টি; অন্যদিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের আসন পাঁচটি বেড়ে ১২টি হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) পাচ্ছে ১০টি আসন। এক্ষেত্রে টোরি আর ডিইউপি মিলে কমন্সে এমপির সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২৯ জনে। নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ পেয়েছে কনজারভেটিভরা, লেবার ৪০ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্র্যাট ৭ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টি পেয়েছে ২ শতাংশ ভোট। মে এর আগে বলেছিলেন, ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি। এ সময়ে দেশে ‘স্থিতিশীলতা’ প্রয়োজন। ডিইউপির সমর্থন পেতে মে কোনো ধরনের অনানুষ্ঠানিক সমঝোতার মধ্য দিয়েই এগোবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ডিইউপি এরই মধ্যে বৈঠক, আলোচনা চালাচ্ছে। দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু স্থির হয়নি। কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো নিয়ে আলোচনার সময় এখনও আসেনি। তবে ডিইউপির এমপি সাইমন হ্যামিল্টন বলেছেন, তার দলের ভোট টোরিদের সরকার গঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইইউ ছাড়ার সময় উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা চাওয়ার ব্যাপারে তারা দরকষকষি করবেন। এদিকে বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সাবেক অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন বলেছেন, টেরিজা মে সম্ভবত ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্প সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। অসবর্নকে টেরিজা মে গত বছর বরখাস্ত করেন। এবার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি তাদের আসন হারিয়েছেন। এসএনপির অ্যালেক্স স্যামন্ড হেরে গেছেন এক টোরি প্রার্থীর কাছে এবং লিব ডেম নেতা ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ পরাজিত হয়েছেন একজন লেবার প্রার্থীর কাছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা বলে দিয়েছে কনজারভেটিভ বা লেবার কারও সঙ্গেই তারা কোয়ালিশনে যাবে না।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর