হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসলহানি, অনিশ্চিত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত

ড. নিয়াজ পাশা, হাওর এলাকায় এ বছর আগাম বন্যায় সিংহভাগ অঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল- আধা কাঁচা ধান তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকের ধানের গোলা শুন্য কওে ‘বাংলার শস্য ভান্ডারেই’ টান পড়েনি, কেড়ে নিয়েছে হাওরের হাজারো কৃষক পরিবারের হাসি-আনন্দ।

বলাবাহুল্য হাওরবাসী এই ধান বিক্রি করেই সারা বছরের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংস্থান করে, ধারকর্জ শোধ দেয়, সন্তানদের লেখাপড়া-চিকিৎসা, বিয়ে-শাদি ইত্যাদি সবই করে থাকে।

এক বছরের ফসলহানি মানে তাদের জীবনের বড় রকমের ছন্দপতন। এমনিতেই হাওরে বছর হয় ছ’মাসে। অর্থাৎ হাওর ছ’মাস শুকনো, ছ’মাস পানির নীচে থাকে। ছ’মাস কাজ আর ছ’মাস বেকার। আর ধানের অতি কম দাম তা বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ ।

এ বছরের ফসল ডুবিতে কৃষকের সাথে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে ধাবিত হাওরের অগণিত শিক্ষার্থীরা। ‘নুন আনতে যেখানে পান্থা ফুরানো’ অবস্থা, সেখানে বাড়ি থেকে দুরে শিক্ষারত সন্তানের শিক্ষা ব্যয়ভার বহন এসব কৃষিজীবী মানুষের জন্য রীতিমতো দায়।

চাহিদা মতো টাকা সময় মতো না পেয়ে এবছর অনেক হাওর এলাকার শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। সব হারানো হাওরের কৃষকরা আগামী দিনগুলো কিভাবে পার করবে সেই চিন্তায় যেমন উদ্বিগ্ন তেমনি সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধের আশঙ্কায় তারা আরও ভেঙে পড়েছে।

এরকম পরিস্থিতিতে পড়া অনেক শিক্ষার্থীই ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের এ দুর্দশার কথা জানিয়েছে। আর্তি জানিয়েছে যেভাবেই হোক যেন বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে অন্তত পড়ালেখাটা চালিয়ে যাওয়ার মতো একটা সুযোগ করে দিতে।

টাকার অভাবে অনেককে আমি তাবলীগের ফ্রি গণখাবার খেতে যেতে দেখেছি। মুখ খুলে তারা এ অভাবের কথা সবার কাছে বলতেও পারছে না। আবার শিক্ষা বন্ধ করে চলেও যেতে পারছে না। তাদের এ না বলা বোবা-দুঃখের কথা কে শুনবে ?

অথচ হাওরবাসীরও একসময় সুদিন ছিল। শিক্ষা, সংস্কৃতির চর্চায়, ইতিহাস ঐতিহ্যে প্রতিষ্ঠায় হাওরবাসীর রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। লোকজ সংস্কৃতি, যা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি, তার উৎস কিন্তু আমাদের এ হাওর । হাওর এলাকার সূর্য সন্তান বাংলার প্রথম র‌্যাংলার (গণিতে সর্বোচ্চ নম্বরধারীকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়) আনন্দ মোহন বসু, যাঁর নামে ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজ, বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস রচিয়তা ড. নিহার রঞ্জন রায়, দেবব্রত বিশ্বাস, কিংবা কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ বা হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজ এর প্রতিষ্ঠার পিছনে হাওর ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

এ সব কলেজে হাওর শিক্ষার্থীর জন্য ভর্তি, আবাসন, বৃত্তি সহ বিভিন্ন সুবিধাদি দাবি করছি। প্রতি বছর হাওরের ফসলহানি, একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে যাওয়ায় আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া এবং ভাল প্রতিষ্ঠানের অভাবে হাওর শিক্ষার্থীর এগিয়ে যাওয়া বড়ই দুরূহ।

ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণে ও প্রাইভেট পড়া নির্ভর হয়ে যাওয়ায় লেখাপড়া এখন হাওরের মতো অনগ্রসর জনপদের ছেলেমেয়েদের জন্য রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে পর্যদুস্ত হাওরবাসী অনেক কৃষকের আর্থিক সামর্থ নেই দুর-দেশে রেখে সন্তানকে লেখাপড়া করানোর। সাধ ও সাধ্যের মিল ঘটছে না। উপজাতি বা পাহাড়ি শিক্ষার্থীর জন্য শহরে অবাসন ও বৃত্তির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু হাওরবাসী শিক্ষার্থীর জন্য নেই সেই ব্যবস্থা।

কিশোরগঞ্জের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের যে হোস্টেলে থেকে আমি লেখাপড়া করেছি বা মাঝে মাঝে গিযে শহীদী মসজিদ সংলগ্ন ইসলামিয়া বোর্ডিং এ থাকতাম, সেটি এখন অন্যের দখলে বা মার্কেট এ রূপান্তর করা হয়েছে। অথচ এ দু’টি হোস্টেল করাই হয়েছিল মূলত হাওরবাসি শিক্ষার্থীর জন্য। আমি আমার হাওরবাসীসহ সব শিক্ষার্থীর জন্য এ দু’টি হোস্টেল ফেরত চাই। এ জায়গায় নতুন বহুতলা বিশিষ্ট হোস্টেল চাই।

দেশে আইলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অগ্নিকান্ড, পাহাড় বা বিল্ডিং ধ্বসে বিপুল ক্ষতিতে সারা দেশের মানুষের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সর্বোচ্চ ব্যক্তিবর্গ মর্মাহত। মর্মাহত আমরাও। আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা দিয়ে তাঁদের পার্শ্বে দাঁড়ানো কর্তব্য।

মঙ্গা মোকাবেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অভাব দুরীকরণে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সত্যিই প্রসংশণীয়। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, সমাজ উন্নয়নসহ সহায়ক বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।

আমাদের উন্নয়ন সহযোগি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দৌড়ঝাঁপ অনেকক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্যও বটে। কিন্তু হাওরের ফসলডুবিতে বিপন্ন, সর্বহারা কৃষকের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ন বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করছি।

এ ক্ষেত্রে জাতির বিবেক যেন মুখে কচ্ট্যাপ দিয়ে বোবা হয়ে আছে। দেখেও না দেখার ভান করছে। সবহারা এতিম মেয়েদের মমতাময়ী মা’এর মতো রাজকীয় বিয়ে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহানুভবতার পরিচয় দিযেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, যা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।

আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আইলা আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা রি-সিডিউল করে তাদের পাশে সহায়তা দিয়ে আগলিয়ে রেখেছেন। যা আমাকে বিমোহিত করেছে। কিন্তু অবাক হয়ে ভাবি, হাওরের ফসলহানিতে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশী শিক্ষার্থীর জীবনে ছন্দপতন ঘটতে যাচ্ছে। তাদের বাহ্যিক কোন ক্ষতি হয়নি সত্য কিন্তু পড়ার রসদ যোগানের উৎসে টান পড়েছে।

আমি হিংসা করে এ কথা বলছি না। প্লিজ, দয়া করে ভুল বুঝবেন না। নিরবতা এক ধরণের অবহেলাও বটে। সারা দেশের সুষম উন্নয়নই সকলের কাম্য। কোন একটি অংশকে অবহেলা ও বঞ্চিত রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উচিতও নয়। আইলা, পাহাড় ধ্বস বা অগ্নিকান্ডের রেশ চোখে দেখা যায়, ধ্বংসের লীলা খেলার অবশেষ থাকে। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা বেঁচে গেছেন। কিন্তু হাওরের ফসলহানির ফলে প্রত্যেকটা কৃষক এক একটা জিন্দা লাশে পরিণত হয়েছে। না পারা কষ্টের বোঝা, বোবা কান্না তাঁদের বহন করতে হচ্ছে। আগামী দিনের চলার দুঃচিন্তার সাথে সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষৎ তাঁদের গ্রাস করতে বসেছে। বানের গোলা জল, আর চোখের লোনা জলে সব ভেসে গেছে।

হাওরবাসী সবচেয়ে বেশী অবহেলিত ও বঞ্চিত শিক্ষার সুযোগ হতে। হাওর এলাকায় দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা, অনিয়মিত পাঠদান, সুষ্ঠু তদারকি, ভাল শিক্ষকের অভাব, পৃষ্টপোষকতা ও উৎসাহদানের অভাব, শিক্ষার পরিবেশ ও উপকরণের অভাবেও ছাত্র-ছাত্রীদের ‘ফাউন্ডেশন’ দুর্বল করে দিচ্ছে। ফলে, প্রতিযোগিতায় হাওরের সম্ভাবনাময় তারুণ্য তলিয়ে যাচ্ছে, টিকতে পারছে না প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।

এই তো কয়েক বছর আগেও অধিকাংশ হাওরের উপজেলায় ছিল না কোন কলেজ। যোগাযোগই হচ্ছে হাওরের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ভাল স্কুল তো কল্পনা-বিলাস, স্কুলই নেই। হাতে গোনা যে ক’টা স্কুল-কলেজ রয়েছে তারও রয়েছে হাজারো সমস্যা। ভাল শিক্ষক নেই, অর্থ নেই। চেয়ার আছে তো টেবিল-বেঞ্চ নেই। নেই পর্যাপ্ত ছাত্রও। হাওরের ‘আফাল’ এর তাফালিং-এ স্কুল কলেজের ভিটে মাটি ভেসে যায় ।

সংকীর্ণ পরিসরে, ঘরে বেড়া-চালবিহীন ল্যাংটা স্কুল ঘর আমাদের শুধু পরিহাসই করে। অভাব, পৃষ্টপোষকতা ও প্রপার গাইডেন্সের অভাবে কত শত সম্ভাবনাময় তরুণ ঝরে যায়, তার হিসাব কে রাখে? ভাল শিক্ষকদের জন্য ভাল বেতন কাঠামো ও পরিবেশের অভাবও ভাল শিক্ষাদানের আর একটা অন্তরায়। হাওরের কাদা জল-ঢেউ, প্রতিষ্ঠানের অভাব আর আর্থিক প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে প্রবল প্রতিযোগিতায় বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার দ্বার প্রান্তে পৌঁছানো হাওর সন্তানদের পক্ষ্যে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

নারী শিক্ষার অবস্থা আরও ভয়াবহ ও করুণ। বর্তমান দুরাবস্থায় প্রতিযোগিতা তো দুরের কথা, টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ বাঁধা অতিক্রান্তে সরকারি পৃষ্টপোষকতা অপরিহার্য। বেসরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। তবে আশার কথা, বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার হাওরে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে ।

‘হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন অধিদপ্তর’কে পাহাড়ি বোর্ডের মতো পরিপুর্ণ জনবল, ক্ষমতা, বাজেট ও পরিকল্পনা দিয়ে হাওরবাসীর বিভিন্নমুখী কর্মকান্ড সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। মিশন ও সুদুর প্রসারি ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাবে এ বোর্ড। শিক্ষা সহায়ক বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দেবে এ বোর্ড।

হাওরের প্রত্যেকটি উপজেলায় ১টি ছেলে এবং ১টি মেয়েদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত কারিগরি আবাসিক কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য এ বোর্ড থেকে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হরে। স্কুল-কলেজের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা নিবে এ বোর্ড। ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সহায়ক কর্মসূচী এতে থাকবে। থাকবে বৃত্তি প্রদান, যোগাযোগের ব্যবস্থাকরণ, টিফিন ও বই খাতা কলম সরবরাহের ব্যবস্থাও।

সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবছরের আকালের ধাক্কা সামলিয়ে অভাবি শিক্ষার্থীদের বিশেষ মাসোয়ারী বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে চলমান/বেগবান রাখতে হবে। দেশে-বিদেশের দানশীল, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বদের সুসংগঠিত করে একটা স্থায়ী ফান্ড তৈরী করে বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী উপার্জনক্ষম হলে সম পরিমাণ টাকা এ ফান্ডে সে জমা দেবেন। ফলে, চক্রাকারে চলমান এ পদ্ধতিতে একটা স্থায়ী ফান্ড ও জনবল তৈরী হবে।

আওয়ামীলীগ কৃষক বান্ধব দল, আর হাওরবাসি অওয়ামীলীগকে পছন্দ করে বেশী। তাই, বর্তমান সরকারের দায়বদ্ধতাও বেশী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হাওর এলাকায় অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সব স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য বোর্ডের উদ্যোগে নিরাপদ ও নি-খরচায় যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের আনা নেয়ার জন্য হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের অর্থায়নে নৌকার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

শহরাঞ্চলে অবস্থানের জন্য হাওরবাসী শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও মাতৃ-স্নেহে ভরপুর হোস্টেল/আবাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থাও গড়ে তুলা যেতে পারে। শিক্ষার বিষয় হতে হবে পেশাভিত্তিক ও প্রায়োগিক। বেকার তৈরীর শিক্ষা নয়। দারিদ্র দূরীকরণের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। তাদের যথাযথ শিক্ষা ও পথনির্দেশ দিন, সব সমস্যার সমাধান হবে, নিজেদের পথ নিজেরাই খুঁজে নিবে।

জনবল, বড় বল। দক্ষ মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। আগামী দিনের কর্ণদ্ধার, তরুণ প্রজন্মের পিছনে, লেখাপড়ায় অর্থ লগ্নি করুন। দেখবেন, তারা আপনাকে কত ভাবে সহযোগিতা দেবে, তা কল্পনাও করতে পারবেন না। সরকার এ বিষয়ে বড় বাজেট বরাদ্দও রেখেছে।

শিক্ষায় বিনিয়োগে রিটার্ন বেশী। হাওর শিক্ষার্থীর এ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের কর্তব্য। হাওর কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে বিকল্প কর্মসংস্থান-হাওর ইপিজেড, শিল্প পার্ক বা বিসিক শিল্প নগরী স্থাপন করা যেতে পারে।

মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ উপযোগি প্রায়োগিক প্রযুক্তি দরকার। পর্যটন খাতে হতে পারে কর্ম সংস্থান। অর্থনৈতিক মুক্তি আসলে অনেক সম্যাস্যারই হয় । আগামী ফসল বোনার জন্য বীজ, সার, সেচ ও কর্ষণ, রোপণ, কর্তন যন্ত্র সুবিধা, কৃষিঋণ প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে। হাওরবাসীর ক্ষতি এবং ঝুঁকি কমাতে ফসল বৈচিত্রময়করণ প্রকল্প চালু করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের এ বিনিযোগ করতেই হবে। হাওর এলাকা হচ্ছে একটি বিশেষাযিত ও অবহেলিত, অনুন্নত এলাকা। এ এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনান্তে পাহাড়ী জনপদের ন্যায় হাওরবাসী চাকরিপ্রার্থীদের জন্যও “বিশেষ কোটা” ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ সুযোগে স্কুল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও চালু করা যেতে পারে। কারণ, হাওর এলাকা পাহাড়ি এলাকা হতে আয়তনে এবং লোক সংখ্যায় অনেক বেশি।

উন্নয়ন, শিক্ষা ও সুযোগ সুবিধায় অনেক পিছিয়ে আছে হাওর। হাওর এলাকা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হতেও বেশী দুর্গম, বন্ধুর এবং সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত। এখন আর পাহাড়ে পোস্টিং কে পানিশম্যান্ট পোস্টিং বলা হয় না বরং হাওর পোস্টিংকে পানিশম্যান পোস্টিং হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেক উপজেলায় উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে বসবাস ও শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

দেশের উন্নয়নে শুধু মৎস্য ও ধান সম্পদ দিয়ে জাতীয় উন্নয়নে হাওরবাসী যে ভূমিকা রাখে, বিনিময়ে হাওর উন্নয়নে তার সহস্র ভাগের এক ভাগও ব্যয় করেই এর চেহারা পাল্টিয়ে দেয়া সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে, শক্তির পরিমাপ হয় ধ্বংসের ক্ষমতা দিয়ে।

এবছর হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি, সহায়তা করা এবং শিক্ষার সকল প্রতিবদ্ধকতা দূর করে অধিক হারে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার সম্প্রসারণ, ভর্তি, বৃত্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি এবং উদ্বুদ্ধকরণে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ হাওরবাসীর প্রাণের দাবি।
লেখক: কৃষি প্রকৌশলী, হাওর ভূমিপুত্র, কৃষি সাংবাদিক। সাবেক ভিপি, ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বর্তমানে সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার, ঢাকায় কর্মরত।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর