ভালো নেই ভোলার চরের বাসিন্দারা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ভোলার মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠে ভোলার চর। তবে ভালো নেই এই চরের বাসিন্দারা। বরিশাল ও লক্ষ্মীপুরের সঙ্গে চরের সীমানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এতে যেমন বেড়েছে ভূমিদস্যু তেমনি বেড়েছে ডাকাতের উৎপাত। ভোলার চরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডাকাতরা প্রতিনিয়ত মোটা অংকের টাকা ও ফসলের অর্ধেক দাবি করে আসছে। টাকা আর ফসলের ভাগ না দিলে সব লুট করে নিয়ে যায় তারা।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাদের হামলায় আহত হয়েছেন অনেকেই। প্রতিনিয়ত অনিরাপদ ও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ভোলার চরের মানুষ।

সরেজমিন গিয়ে ভোলার চরের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা নদীর বুকে প্রায় ২০ বছর আগে জেগে ওঠে একটি চর। জেগে ওঠার পর থেকে ভোলা জেলার মানুষ বসবাস শুরু করায় এ চরের নামকরণ করা হয় ‘ভোলার চর’। প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস এ চরে। এখানকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি, মহিষ পালন ও মাছ ধরা।

Bhola-Chor-News-5

তবে শুরুর দিক থেকে ভোলার চরের সঙ্গে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর জেলার সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সীমানা বিরোধকে কেন্দ্র করে চর দখল নিতে দিন দিনই বাড়ছে ভূমি দস্যুদের উৎপাত। চরবাসীর অভিযোগ, চরে বসবাস করতে মোটা অংকের টাকা ও ফসল হলে অর্ধেক দাবি করে করে ডাকাতরা। টাকা ও ফসল দিতে অস্বীকার করলেই তাণ্ডব চালিয়ে মানুষের ওপর হামলা করা হয়। ঘরবাড়ি ভাংচুর, গরু-মহিষ,হাঁস-মুরগি ও ফসল লুট করে নিয়ে যায় ভূমিদস্যুদের ডাকাত বাহিনীরা।

কোনো জায়গা জমি না থাকায় প্রায় ১৫ বছর আগে ভোলার চরে এসে কাঠ, বাঁশ ও খড় দিয়ে কোনো রকম ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন কন্দন নেছা। ধান ও সবজি চাষ এবং হাঁস-মুরগি পালন করে অনেক কষ্ট সংসার চলে তার।

প্রায় ২০ বছর ধরে ভোলার চরে বসবাস করছেন জামাল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কৃষিকাজ করে জীবন চালাচ্ছি। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে বসবাস করার জন্য আমাদের কাছে বার্ষিক চাঁদা ও ফসলের অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছে ডাকাত বাহিনীরা। আমরা তাদের দাবি অস্বীকার করলে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়, ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়, হাঁস-মুরগি লুটপাট করে নিয়ে যায়।’

Bhola-Chor-News-5

শান্তা বেগম বেগম নামের আরেক চরবাসী বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব অনেক বছর আগে মেঘনা নদীর গর্ভে চলে যায়। পরে ভাঙন এলাকায় চরে জেগে উঠলে বাবা ভোলার চরে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। শুরুর দিকে আমরা ভালোভাবে বসবাস করে আসলেও কয়েক বছর ধরে ডাকাত বাহিনীরা আমাদের কাছে চাঁদা চায়, ক্ষেতের ফসলের ভাগ চায় আবার গবাদি পশুরও ভাগ চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চরে বসবাস করা সবাই গরিব মানুষ। ডাকাতদের দাবি পূরণ করব কীভাবে? দাবি পূরণ করতে না পারায় ডাকাতরা আমাদের ঘর ভাঙে, গবাদি পশু লুট করে নিয়ে যায়। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের উপর অমানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এ চরে আমরা খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছি।’

হারিছ সরদার নামের একজন চরবাসী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ভোলার চরে বসবাস করছি। জেলের কাজ করে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেই। একাধিক ডাকাত বাহিনী আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে না পারলে নদীতে হামলা চালায়, মাছ, জাল লুট করে নিয়ে যায়।’

Bhola-Chor-News-5

ভোলার চরে বসবাস করা সবাই অনেক ঝুঁকি নিয়ে অনিরাপভাবে বসবাস করছেন বলে জানান এই চরবাসী। চরবাসীদের নিরাপত্তায় সেখানে একটি পুলিশের ক্যাম্প বা ফাঁড়ির দাবি জানান তিনি।

রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান জানান, ভোলার চরে সীমানা বিরোধ থাকায় ভূমিদস্যু ও ডাকাতদের উৎপাত দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে ভোলার চরের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অনেক ঝুঁকি নিয়ে তারা বসবাস করছেন।

ভোলার চরে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র বা ফাঁড়ি থাকলে মানুষ অনেক নিরাপদে থাকতে পারত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি ভোলার চরে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরের ডাকাতরা লুটপাট চালায়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ডাকাতদের হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত এবং রাকিব ও শেখ ফরিদ নামের দুইজন নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় ভোলা মডেল থানায় ১৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Bhola-Chor-News-5

ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ভোলার চরে দীর্ঘদিন ধরে আদিপত্য বিস্তার ও চর দখল নিয়ে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটছে। গত ২৩ নভেম্বরও একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছি। এছাড়া নিখোঁজদের সন্ধানের চেষ্টা করা হচ্ছে ও মামলাটি তদন্ত চলছে।

তিনি আরও জানান, ভোলার চরে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র বা পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য যে জনবসতি দরকার ভোলার চরে সেটি নেই। তবে চরের মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারকে বিষয়টি জানানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর