এখন রাজনীতি বলে কিছু নেই, চলছে অপরাজনীতির চর্চা

ড. গোলসান আরা বেগমঃ আমাদের মুজিবীয় আদর্শের ত্যাগী, নীতিবান নেতারা হাইব্রীড নব্য  মুজিব কোডধারীদের লাফালাফি দেখে ত্যাক্ত বিরক্ত। অনেকেই রাজনীতি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে  মান সন্মান খোয়া যাওয়ার ভয়ে । সততার রাজনীতি করতে গিয়ে বহুজন হিমসিম খাচ্ছে,মুখ খুলে সত্যের পক্ষে  অসহনীয় কথা বলতেও পারছে না। রাজনীতির ধরন, পথচলার দৃশ্য এমন হওয়া কি মঙ্গল জনক? জনগন সকল ক্ষমতার উৎস এই কথাটি মনে রেখেই রাজনীতি করা উচিৎ। জনগণের রাজনীতি করা উচিৎ।
আমরা জানি ১৯৪৭ এর পর রাজনীতির উৎপত্তিস্থল হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বারাবরই সমাজ বির্নিমানে, জনগণের অধিকার আদায়ের পক্ষে রাজনৈতিক চর্চা সেখানেই হয়ে আসছে। বাংলা ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনে গৌরবজনক ভুমিকা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র সমাজের। সাধারন জনগণের গভীর আস্থা ছিলো ঐ বিদ্যাপিঠের রাজনৈতিক কর্ম পরিকল্পনার উপর।
কিন্তু এখন এক ধরনের হতাশা, অনাস্থা চেপে বসেছে রাজনীতির ঘাড়ে। একারনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন দৈনিক প্রতিদিনকে — এখন রাজনীতি বলে কিছু নেই,চলছে অপরাজনীতি। বাস্তবতা যদি তাই হয়- তা হলে দেশ ও দশের ভাবনা কোথায় দাঁড়িয়েছে? কেন জনগণের রাজনীতি অন্তসার শূন্য হবে। নানা অপরাজনীতি ক্ষমতার বন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধে বসবে।
চারিদিকে কি দেখছি- পেশীশক্তির দাপট,দম্ভ অহমের লড়াই, তৈলবাজি, জমি দখল,পদ পদবি দখলের লড়াই, দুর্নীতি, লুটপাট,নির্দয় রাজনীতির মহড়া, এ ওরে ল্যাঙ মারামারির চর্চা। অথচ জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটা বিষয়ে রয়েছেন সচেতন ও কঠোর অবস্থানে। কাউকে ছাট দিচ্ছেন না। তারপরও মানুষের মনে মানবীয় মূল্যবোধের উদয় হয় না কেন? সবাই যে খারাপ করছে তা নয়। এক ঝুড়ি আমের মধ্যে একটা পঁচে গেলেই তো সব আম পঁচে যায়। ঠিক তেমনি কয়েক জনের জন্যই পুরো রাজনীতি কলঙ্কের মুখে পড়ছে।
কারো কারো গর্ব অহংকারের কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। বর্ষীয়ান একজন রাজনীতিবিদ বলছেন  বহু মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে– আমি ৩২ বছর যাবৎ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি, আমাকে ৪ বার স্বয়ং মহামান্য  রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন। জানি না এ সব কথা সঠিক কি না। কি করে এতো বছর একই পদে রাজত্ব করে? এটা কি বর্বর প্রাগৈতিহাসিক যুগ? গণতান্ত্রিক দেশে এমন তো হওয়ার কথা না। আরো মজার ব্যাপার হলো – কেউ মারা গেলে কবর থেকেও সে পদ ধরে রাখে। ওখানে নতুন কাউকে প্রায় ক্ষেত্রেই পদায়ন করা হয় না।এই হলো মগের মুল্লুকের রাজনীতি।
প্রশ্ন হলো দেশে কি ত্যাগী নেতার এতই অভাব। দীর্ঘদিন সে পদে তাকেই রাখতে হবে। কেন রাজনীতির এই দুর্বৃত্তায়ন? একারনেই সেখানে তৈরী হয়েছে আরো একটি প্যারালাল কমিটি, ছড়িয়ে পড়ছে ছাই চাপা ক্রোধ। এ সব তথ্য আদর্শিক রাজনীতির জন্য মঙ্গল জনক নয়। এখনই এই সমস্ত জঞ্জাল পরিস্কার করতে হবে। ঝরা পাতা ঝরে যাবে। হবে নতুনের সমারোহ এটাই তো বিধির বিধান। জোড় যার মুল্লুর তার, তা চিরস্থায়ী হয় না। রয়েছে তার ভুরি ভুরি উদাহারণ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন – ক্ষমতার চেয়ার ও কারাগার পাশাপাশি অবস্থান করে। ক্ষমতা এনজয় করার সময় কারাগারের ছবিটি চোখের সামনে রেখে চলা উচিৎ। তা হলে কেউ দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে পারবে না। আরো মনে রাখতে হবে মরণকালে হাত পা ছাড়া কিছুই সঙ্গে যাবে না। তাহলে কেন, কি প্রয়োজনে করি বাহাদুরী ও পুকুর চুরি।
আমাদের মনে রাখা উচিৎ – ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের ও জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। যে দেশের জাতির পিতা ও অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, ৭ মার্চের ভাষণের মর্মবোধ থেকে ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। লুটপাটকারীদের ব্যক্তি স্বার্থে এর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আদর্শ, কোন অর্থেই ম্লান হতে দেয়া যাবে না।
বাংলাদেশের জন্মের পর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি।২০২১ রুপকল্প বাস্তবায়িত হলে, শেখ হাসিনার মেগা প্রকল্প বাস্তবতা পেলে বাংলাদেশ উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। সেই মহূর্তে অপরাজনীতির চর্চা বন্ধ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করতে হবে।
 রাজনীতির প্রতি উদাত্ত আহবান রেখে বলছি –“ভেঙ্গেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোর্তিময়,তোমারি হউক জয়”। যে যা বলে বলুক আসুন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির জয় হউক এই মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করি।অপরাজনীতির চর্চা বন্ধ হউক।
এখানে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট জো বাইডেনের উক্তি সংযোজন করতে চাই– আমি রাজনীতি করতে এসেছি,ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ানোর জন্য নয়।যদি ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ানোর ইচ্ছা থাকতো ব্যাবসায়ি হতাম, রাজনীতিবিদ নয়। রাজনীতি হলো বিলিয়ে দেয়ার জায়গা,বিলিয়নিয়র হবার নয়। ব্যবসায় মুনাফা থাকে, বাজনীতিতে থাকে বিলিয়ে দেবার সেবা। এই সেবাটা হলো আমার জীবনের সব চেয়ে বড় মুনাফা।
লেখকঃ কবি,কলামিস্ট,উপদেস্টা সদস্য, বাংলাদেশ কৃষকলীগ। 
Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর