বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবজির সমারহ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ গাজর, মুলা, শিম, ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ হরেক রকম শীতকালীন সবজিতে হেসে উঠেছে সিরাজগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। তাই জেলার পাইকারি ও খুচরা সবজির বাজারগুলোতে বেড়েছে শীতকালীন শাকসবজির সরবরাহ। এতে কমতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম।

মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে শীতের আগাম শাক-সবজির আশাব্যঞ্জক ফলন না পেলেও এখন সব ধরণের সবজির উৎপাদন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় শীতকালীন শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমি। আর উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার মে. টন।

জেলায় সবজি চাষ বেশি হয় সদর, কামারখন্দ, কাজিপুর, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায়।

এবার জেলার কৃষকরা শীতকালীন আগাম শাকসবজির আবাদ করেও অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সবজির বাজারগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায় শীতকালীন শাকসবজির। অতিবৃষ্টি কাটিয়ে দফায় দফায় চারা তৈরির পর এখন শাকসবজির উৎপাদন বাড়িয়েছেন কৃষকরা।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বেড়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, লাউ, মুলা, শিম, ঢেড়শ, কুমড়া ও বেগুনসহ অন্য শীতকালীন সবজির। শীতের শুরুতে পাইকারি বাজারগুলোতে তেমন সরবরাহ না থাকলেও এখন বাড়ছে সব ধরণের শাকসবজির সরবরাহ।

পাইকারি ক্রেতারা স্থানীয় বাজার থেকে প্রতিদিন ট্রাকযোগে শাকসবজি কিনে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছে।

সরেজমিনে সদর উপজেলার শিয়ালকোল, ছোনগাছা, পিপুলবাড়িয়া ও বাগবাটির সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম থেকে সবজিচাষিরা ভ্যান ও রিকশায় ঝুড়ি ভর্তি বিভিন্ন ধরণের শীতকালীন সবজি নিয়ে হাটে জড়ো হয়েছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের দরদামের ছন্দে বাজারের পরিবেশ হয়ে উঠেছে ছন্দময়।

এ বাজারে কথা হয় কৃৃষক আমজাদ হোসেেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে সিম চাষ করেছি। সিমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারে শিমের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জমির অর্ধেক শিম বিক্রি করে জমির খরচ তুলে ফেলেছি। যার ফলে আমার লাভ ভালোই হবে।

রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রামপাংগাশী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে কুয়াশা ও অতিবৃষ্টির কারণে শীতকালীন সবজির ফলন বেশি হয়নি। তবে ধীরে ধীরে আবহাওয়া অনূকূলে আসায় শীতকালীন সবজিতে হেসে উঠেছে আমাদের ফসলের মাঠ। সব চাষির উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির সমারোহ বেশি। যে কারণে সকল সবজির দাম কম। দাম কম হলেও এবার কৃষকরা লাভবানই হবে।

সবজি কিনতে আসা পাইকারি ক্রেতা মিজান বলেন, এখানকার সবজির আলাদা খ্যাতি রয়েছে। যে কারণে সহজেই আমরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারি। অন্য এলাকার সবজি থেকে এখানকার সবজির দামও কম। তাই আমরা বিভিন্ন সবজির হাট থেকে সবজি কিনে নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করি।

সবজি কিনতে আসা আরেক পাইকারি ক্রেতা মজিবর বলেন, সবজির হাটগুলোতে একসঙ্গে অনেক সবজি পাওয়া যায়। কৃষকরা সরাসরি হাটে সবজি নিয়ে আসার কারণে আমরা কোনো মাধ্যম ছাড়াই সুলভ মূল্যে সবজি কিনতে পারি। এখানকার সবজির গুণগত মান ভালো ও পুষ্টিকর। যার কারণে সহজেই ক্রেতাদের কাছে সবজি বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে কুয়াশা ও অতিবৃষ্টি কাটিয়ে দফায় দফায় চারা তৈরির পর এখন শাক সবজির উৎপাদন বাড়িয়েছেন কৃষকরা। সবজির উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি সপ্তাহেই কমে আসছে সব ধরণের সবজির দাম। সবজির পুরো উৎপাদন শুরু হলে দাম আরও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে, তবে এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর