কঠিন সময়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের দেখার কেউ নেই

কাজ ছাড়া দীর্ঘ সময় চলার মতো যথেষ্ট সরকারি সহায়তা নেই। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে আরোপিত বিধি-নিষেধ মারাত্মক আঘাত হয়ে এসেছে দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের উপর।

গত বছর এই করোনার কারণেই ২৬ মার্চ থেকে মে’র শেষ পর্যন্ত ঘোষিত সাধারণ ছুটির ভেতর এই খাতের শ্রমিকরা কঠিন সময় পার করেছেন। যে কারণে মহামারির মধ্যে তাদের জীবনযাত্রার মানও নেমে গেছে ভয়াবহভাবে।

বাংলাদেশ হকার ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সভাপতি মো. মুরশিকুল ইসলাম বলছিলেন, ‘গত বছরে চলা লকডাউনের সময় কিছু সংস্থা ও মানুষ ত্রাণ সহায়তা নিয়ে শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। এ বছর তার কিছুই নেই।’

‘আমাদের জীবন পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু, বেঁচে থাকার জন্য আমরা কীভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি, তা নিয়ে কেউ ভাবছে না। সরকারের কাছ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি। তাহলে বাঁচব কীভাবে?’ বলেন মুরশিকুল।

এ অবস্থা কেবল হকারদের না। নগরের পরিবহন শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে কাজ করা ব্যক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদেরও এখন একই দশা। যারা কোনো ধরনের সামাজিক সুবিধা, আইনি নিরাপত্তা কিংবা কর্মক্ষেত্রের আনুষঙ্গিক সুবিধা ছাড়াই বিরূপ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।

এই খাতের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, ক্ষুধা এখন তাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, যদিও এর মধ্যে কেউ কেউ সরকারের তরফ থেকে দরিদ্রদের জন্য দেওয়া আর্থিক সুবিধা পাবেন, তারপরেও এই অর্থের পরিমাণ ও সহায়তাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা এত কম হবে যে, এত বড় একটা খাতে তার কোনো প্রভাবই পড়বে না।

মুরশিকুল জানান, ব্যবসার জন্য ঈদকে সামনে রেখে হকারদের একটা বড় অংশ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়েছেন।

হকারদের এই নেতা বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদে হকারদের বড় উপার্জনটা হয়। গত ঈদে লকডাউনের কারণে আমরা সেই সুযোগটা হারিয়েছি। তখনই আমাদের সব সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে।’

মুরশিকুলের হিসাবে, সারাদেশে হকারের সংখ্যা ১০ লাখের কাছাকাছি। তাদের কেউই এখন পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে পারছেন না।

মহামারির ভেতর সরকার এর মধ্যে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশের বেশি। কিন্তু, এসব প্যাকেজের বেশিরভাগ তৈরি করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতকে সহযোগিতার জন্য।

২০১৬ থেকে ১৭ সালের মধ্যে পরিচালিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা ৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৮৫ দশমিক ১ শতাংশই কাজ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে।

অর্থনীতিতে এই খাতটি ৫০ শতাংশের মতো অবদান রাখলেও, এর শ্রমিকরা সরকারের সব সহায়তামূলক কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে গেছেন।

এর বড় একটা কারণ হচ্ছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা শ্রমিকদের সরকারি কোনো তথ্যভাণ্ডার নেই। এমনকি সারাদেশে এই খাতে কত সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন তারও কোনো সাম্প্রতিক হিসাব নেই।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম জানান, সরকার এখন ত্রাণ কর্মসূচিগুলো চালাচ্ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা শ্রমিকদের কোনো তথ্যভাণ্ডার নেই, তাই তাদের চিহ্নিত করার ব্যাপারটা খানিকটা কঠিন।’

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন জানান, তাদের হিসাবে মহামারির কারণে ও বিদ্যমান আর্থিক পরিস্থিতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অন্তত ৬০ শতাংশ শ্রমিক তাদের কাজ হারিয়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারির যে অভিঘাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়েছে, তার কারণে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ঠিক কত সংখ্যক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, তার কোনো সরকারি জরিপ নেই। তারপরেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার কর্মসংস্থান বিভাগের সাবেক বিশেষ পরামর্শক রিজওয়ানুল ইসলামের অনুমান, গত বছর অচলাবস্থা চলাকালীন এই খাতের কাজ হারানো শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ।

রিজওয়ানুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। তিনি এই হিসাবটি করেছেন ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে তার ‘শকস অব করোনাভাইরাস অন দ্য ইকোনমি অ্যান্ড লেবার মার্কেট’ শীর্ষক এ সংক্রান্ত একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে।

শ্রমিকের দুঃখগাথা

বাংলাদেশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট-বেকারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আক্তারুজ্জামান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মহামারির শুরু থেকে এই ইউনিয়নের কোনো শ্রমিক এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাননি।’

আক্তারুজ্জামানের হিসাবে, এই খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। যারা প্রত্যেকে ভয়ানক আর্থিক সংকটে আছেন।

গত বছরের লকডাউনে সারাদেশের প্রায় সব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। এদিকে, গত ৫ এপ্রিল থেকে সরকার চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর পরিস্থিতি আবার আগের মতো দাঁড়িয়েছে।

আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে গত বছর প্রধানমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বরাবর আমরা চারটি বিবৃতি দিয়েছি। কিন্তু, আমাদের দুঃখের দিকে সরকার নজর দেয়নি।’

তার ভাষ্য, এই খাতের কাজ হারানো অন্তত ৪২ শতাংশ অর্থাৎ ১২ লাখ শ্রমিক এখনো বেকার। গত বছর জুন থেকে চলতি বছরের মার্চের মধ্যে কর্মচ্যুতির শিকার এই শ্রমিকরা পুনরায় কোনো কাজে ঢুকতে পারেননি। কারণ, লকডাউন শিথিলের পরেও অনেক রেস্তোরাঁ মালিক তাদের লোকবল কমিয়ে দিয়েছেন।

তাই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এই খাতের প্রত্যেক বেকার শ্রমিককে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান আক্তারুজ্জামান।

চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ, ইফতার সামগ্রী বিক্রির জন্য খুব অল্পসংখ্যক রেস্তোরাঁ এখন খোলা আছে।’

বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই খাতের শ্রমিকদের জন্য সরকারি সহায়তা চাওয়ার ব্যাপারে তার সংগঠন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

রাজ্জাক বলেন, ‘এর আগে অনেকবার সরকারের কাছে সহযোগিতার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’

তিনি জানান, গত বছর অল্প কিছু নির্মাণ শ্রমিক বিভিন্ন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছিলেন। তার মতে, চলাচলের ক্ষেত্রে চলমান বিধিনিষেধের কারণে এই খাতের অন্তত ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

‘এই শ্রমিকরা এখন একটা গুরুতর অবস্থার মধ্যে আছেন। কারণ, কেবল নিজের শ্রম বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপার্জনের পথ তাদের নেই। যার বেশিরভাগই এখন বন্ধ’, বলেন রাজ্জাক।

গত ৩০ অক্টোবর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে এই খাতের প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে তাদের জীবন-জীবিকাও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।’

ওসমান বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এই শ্রমিকেরা এখন দুর্দশাগ্রস্ত জীবন কাটাচ্ছেন।’

পরিবহন খাতের কিছু সংগঠন সম্প্রতি সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য রেশন চালু করার দাবি জানিয়েছে। যার মধ্যে বাস টার্মিনালগুলোতে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিক্রির দাবিও আছে।

এ ছাড়া, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দ্রুততার সঙ্গে গণপরিবহন চালুর ব্যাপারেও দাবি জানানো হয়। চলমান বিধি-নিষেধের আওতায় যা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

নগদ সহায়তার পরিমাণ খুবই কম

গত বছরের মতো এবারও সরকার মোবাইলের মাধ্যমে পরিবারপ্রতি আড়াই হাজার টাকার নগদ সহায়তা দিচ্ছে। আগে যে পরিবারগুলো এ সহায়তা পেয়েছিল, তারাই আবার তা পাচ্ছে।

গত বছর ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার পরিবার এই সহায়তা পেয়েছিল।

এই কর্মসূচির সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছিল রিকশাচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষক, দোকান কর্মচারী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পরিবহন শ্রমিক।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তার পরিমাণ আসলে যথেষ্ট না।’

তার ভাষ্য, সরকার যদি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যথেষ্ট পরিমাণ সহযোগিতা না করে, তাহলে কোনো লকডাউনই কার্যকর হবে না।

২০১৬ সালে বিবিএসের সর্বশেষ খানার আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপের তথ্য তুলে ধরে নাজনীন বলেন, ‘নগর এলাকায় চার সদস্যের একটি পরিবার চালানোর মাসিক খরচ অন্তত ৬ হাজার টাকা।

কিন্তু, এই পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সক্ষমতার ঘাটতি আছে। সুতরাং বিধিনিষেধ শিথিল করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের অনুমতি দেওয়া উচিত।’

‘কেননা, মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি’, যোগ করেন নাজনীন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের যে পরিসর, তার তুলনায় এর শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা- দুটোই খুব কম।’

তার মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তারপরও সরকারি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই খাতের শ্রমিকরা অবহেলার শিকার হচ্ছেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এমনিতে আইনি সুরক্ষা পাওয়ার ব্যাপারটিতে ঘাটতি থাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের তাদের নিয়োগকর্তার দিক থেকে নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। কোভিড পরিস্থিতি তাদের এই পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। অনেকে সরাসরি চাকরি হারিয়েছেন।’

তিনি মনে করেন, এ দফায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের গত বছরের তুলনায় অন্তত তিন গুণ টাকা দেওয়ার একটা পরিকল্পনা করা উচিত। যা তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। সার্বিক অর্থনীতিতে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

সরকারের কাছ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক খাত প্রণোদনা প্যাকেজের যে তহবিল পেয়েছে, তার তুলনায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য বরাদ্দ নগদ অর্থ সহায়তার পরিমাণ খুবই কম।

খন্দকার মোয়াজ্জেমের পরামর্শ, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সহযোগিতায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য একটা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা উচিত সরকারের । সে ক্ষেত্রে এই খাতের শ্রমিকদের চিহ্নিত করে যথাযথ লোকের হাতে নগদ সহায়তা পৌঁছানোর কাজটি করা যাবে।

এমন একটা তথ্যভাণ্ডার তৈরির জন্য সরকার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কী না- জানতে চাইলে শ্রমসচিব কে এম আব্দুস সালাম  জানান, এমন একটা পদক্ষেপ তারা নিয়েছেন।

দ্য ডেইলি স্টার

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর