সড়ক নয় যেন ধানের চাতাল

ফুলবাড়ী-মধ্যপাড়া-রংপুর মহাসড়কটি এখন কৃষকদের ধান এবং ভুট্টা মাড়াই ও খড় শুকানোর চাতালে পরিণত হয়েছে। সড়কের ওপর সারি সারি ধানের পালা। সারাক্ষণ চলছে ধান ও ভুট্টা মাড়াই। সড়ক জুড়ে শুকানো হচ্ছে ভুট্টা, ধান ও খড়। এতে প্রতিনিয়ত ছোটবড় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর ভুট্টা ও বোরো মৌসুম মে-জুন এই দুই মাস সড়কটি আশপাশের গ্রামের কৃষকদের দখলে থাকে। সড়কটির ফুলবাড়ী থেকে মধ্যপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে গত বছর ১৫ থেকে ২০ জন দুর্ঘটনায় হতাহতের শিকার হয়েছেন। এ বছর গত এক মাসে ১৭টি দুর্ঘটনায় দুই জনের মৃত্যু ও অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুলবাড়ী থেকে মধ্যপাড়া পর্যন্ত অন্তত ১৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে দলদলিয়া, ডাঙ্গাপাড়া, মহেষপুর, তেঁতুলিয়া, চিলাপাড়া, ভাগলপুর, ভালকা জয়পুর, মহিষবাতান, রসুলপুরসহ প্রায় ১০ গ্রামের কৃষক পুরো সড়কটি দখলে নিয়ে মাঠ থেকে ধান কেটে সরাসরি মহাসড়কের ওপর পালা করে রাখছেন। এরপর চলছে যন্ত্র দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ। ধান মাড়াই শেষে সড়ক জুড়ে ধান ও খড় শুকানো হচ্ছে। এতে বিশাল প্রশস্তের মহাসড়কটি এখন সরু সড়কে পরিণত হওয়ায় ফাঁক-ফোকড় দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে ছোটবড় যানবাহন। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বড় যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল সীমিত হওয়ায় এবার হতাহতের সংখ্যা কমে এসেছে।

উপজেলার জিয়ার মোড়ের কৃষক নুরল ইসলাম বলেন, আগের মতো বাড়ির সামনে গৃহস্থরা ফাঁকা জায়গা ফেলে রাখেন না বলে ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর জায়গার অভাবে বাধ্য হয়ে মহাসড়কের ওপরই ধান-ভুট্টা মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করতে হচ্ছে। মধ্যপাড়া পাথরখনির ঠিকাদার শাহিন হোসেন ও বিপুল চৌধুরী বলেন, ব্যাবসায়িক কাজে দিনে তিন থেকে চার বার মধ্যপাড়া পাথরখনিতে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে হয়। মহাসড়কের বর্তমান অবস্থার কারণে বাড়ি থেকে বের হলে মনে হয় না যে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারব।

বেশ কয়েক জন কৃষক, মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসের চালক জানান, আগের মতো মানুষ আর ফাঁকা জায়গায় ধান ফেলে না রেখে সড়কে রাখছে। সড়কটিতে ধান কাটা, মাড়াই মৌসুমে ছোটবড় যানবাহনগুলো প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। মাইক্রোবাস চালক সঞ্জিত প্রসাদ, মো. আলম ও জাকির হোসেন বলেন, এ মহাসড়কে ধান কাটা ও মাড়াই মৌসুমে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। এসবের কারণে কার ও মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে ভয়ে ভয়ে ঐ সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিতি চাকমা বলেন, বার বার নিষেধ করার পাশাপাশি এ প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য বেশ কয়েক জনকে সড়ক বিভাগ থেকে নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর