বর্ষার ফলে ভিটামিন ‘সি’

বাঙালি কণ্ঠ ডেস্কঃ  শরীর সুস্থ, সতেজ, রোগমুক্ত ও সুন্দর রাখার জন্য ভিটামিন-সি খুবই প্রয়োজন। ভিটামিন-সি’র প্রধান উত্স বর্ষাকালের ফল। ভিটামিন-সি’র অভাবে অনেক জটিল রোগ হয়। এজন্য নিয়মিত পরিমাণমতো ভিটামিন-সি জাতীয় ফল খেতে হবে। ভিটামিন-সি’র (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) প্রধান উত্স ফল ও শাক-সবজি। কিন্তু ভিটামিন-সি পানিতে দ্রবণীয় এবং তাপে নষ্ট হয় বলে শাক-সবজি ধোয়া এবং রান্নার সময় নষ্ট হয়। তাই এর একমাত্র উত্স ফল। তবে বর্ষাকালীন ফলেই ভিটামিন-সি বেশি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আহারোপযোগী আমলকীতে ৪৬৩, জাম্বুরায় (লাল) ১০৫, পেয়ারায় ২১০, লেবুতে ৬৩, জামে ৬০, কামরাঙ্গায়, ৬১, আমড়ায় ৯২, জলপাইয়ে ৩৯, পেঁপেতে (পাকা) ৫৭, আমে (পাকা) ৪১, আনারসে ২৬, বরইয়ে ৫১, লিচুতে ৩১, কমলাতে ৪০, মাল্টায় ৮৪, কাঁচামরিচে ১২৫ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন-সি থাকে। এছাড়া সব ফলেই কম-বেশি ভিটামিন-সি থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক প্রতিদিন তিন-চারটি আমলকী বা মাঝারি আকারের একটি পেয়ারা বা বড় আকারের দুটি আমড়া বা বড় একটি কামরাঙ্গা খেলে প্রতিদিনের ভিটামিন-সি’র অভাব পূরণ হবে। গাছ থেকে ফল ও শাক-সবজি সংগ্রহের পর থেকেই গরমে ভিটামিন-সি নষ্ট হতে থাকে। এজন্য ফল এবং সবজি যতটা সম্ভব টাটকা খাওয়া উচিত। তবে গোলআলুতে বিদ্যমান অ্যাসকরবিক অ্যাসিড তাপে স্টার্চের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জটিল যৌগ গঠন করে, যা তাপে নষ্ট হয় না। পুষ্টিবিদের মতে, দেহে ভিটামিন সি’র চাহিদার ৬৫ ভাগ ফল থেকে, ২৫ ভাগ শাক-সবজি থেকে, ১৫ ভাগ গোলআলু থেকে পাই। গোলআলুতে রান্নার আগে ভিটামিন-সি থাকে ২০ মিলিগ্রাম, রান্নার পর থাকে ১৬ মিলিগ্রাম। প্রয়োজনীয়তা # ভিটামিন-সি স্কার্ভি রোগের উপশম ও প্রতিরোধ করে। # দাঁত ও হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে এবং পুষ্টিসাধন করে। # দেহে লৌহ ও ক্যালসিয়ামের বিপাকে সহায়তা করে। # বিভিন্ন রকম ভাইরাল ইনফেকশন, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধ এবং নিরাময় করে। # দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। # দেহের ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। # পাকস্থলী সুস্থ রাখে। # চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং হূদরোগ থেকে রক্ষা করে। # দেহের ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। # কোষের ক্ষয়রোধ এবং গলনালি, মুখগহ্বর, পাকস্থলী, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। অভাবজনিত লক্ষণ ভিটামিন-সি’র অভাবে দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ে, মাড়ি ফুলে ওঠে, গায়ে কালশিরা পড়ে, গোড়ালি ও কব্জি ফুলে ওঠে, ত্বক শক্ত ও খসখসে হয়, অ্যানিমিয়া ও দুর্বলতা দেখা দেয়, ক্ষত সারতে এবং ভাঙা হাড় জোড়া লাগাতে বিলম্ব হয়, রক্তপাত বন্ধ হয় না। রক্তে অণুচক্রিকা ও লোহিত কণিকার সংখ্যা হ্রাস পায়, শিশুদের দেহ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ওজন হ্রাস পায় ইত্যাদি। মাত্রা দৈনিক ভিটামিন-সি’র প্রয়োজন প্রতি শিশু (০-১২ মাস) ২০ মিলিগ্রাম, প্রতি বাচ্চা, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী (১-১৮ বছর বয়স) ৪০ মিলিগ্রাম, প্রতি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রীলোক ৪০ মিলিগ্রাম, প্রতি গর্ভাবস্থায় ৩০০ মিলিগ্রাম, প্রতি প্রসূতি ১৫০ মিলিগ্রাম। ভিটামিন-সি অতিরিক্ত খেলে লাভ হয় না প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অতিরিক্ত ভিটামিন-সি গ্রহণ কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। আধুনিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় ভিটামিন-সি’কে নষ্ট থেকে রক্ষার জন্য শাক-সবজি ও ফলমূল প্রক্রিয়াজাত করা যায়। ভিটামিন-সি’র চাহিদার প্রধান উত্স বর্ষাকালের ফল থেকে সহজেই পূরণ করা যায়। যেহেতু অতিরিক্ত ভিটামিন-সি দেহে সঞ্চিত থাকে না, তাই নিয়মিত প্রতিদিন পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর