ভারতে তরুণীকে নির্যাতন: রুবেলের দায় স্বীকার, সোনিয়া কারাগারে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিনের নির্যাতনের পর কৌশল দেশে ফিরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় এক তরুণীর মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলায় আসামি রুবেল ওরফে রাহুল দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। একইসঙ্গে রিমান্ড শেষে রুবেলের স্ত্রী সোনিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিন রিমান্ড শেষে দুই আসামিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আসামি রুবেল স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপর আসামি সোনিয়াকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে পাচার হওয়ার পর ৭৭ দিনের নির্যাতন ও বন্দীদশা থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে গত ১ জুন রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন ওই তরুণী। মামলায় মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- রিফাদুল ইসলাম হৃদয়, আনিস, আবদুল কাদের, মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন, হারুন, বকুল ওরফে ছোট খোকন, সবুজ, রুবেল ওরফে রাহুল, সোনিয়া, আকিল ও ডালিম।

মামলা দায়ের করা হলে সেদিন রাতেই সাতক্ষীরা থেকে ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- মেহেদী হাসান বাবু, মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদের। এরপর গত ৩ জুন  মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালত তিন আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর গত ৯ জুন আসামি মেহেদী হাসান বাবু ও মহিউদ্দিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার সূত্রে জানা যায়, পাচারের শিকার কিশোরীর সঙ্গে ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে টিকটক হৃদয় বাবুর পরিচয় হয়। কখনো টিকটক স্টার বানাতে চেয়ে বা ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে কিশোরীকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে হৃদয় বাবু। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের এডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে ৭০-৮০ জনকে নিয়ে ‘টিকটক হ্যাংআউট’ এবং ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে ৭০০-৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে পুল পার্টির আয়োজন করে হৃদয় বাবু।

এ বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই মানব পাচারকারীর চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় কৌশলে ওই কিশোরীকে ভারতে পাচার করে হৃদয় বাবু। পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পরার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত তার অপর লোমহর্ষক নির্যাতন চালানো হয়।

মামলা সূত্রে আরো জানা যায়, ভারতে পাচারের পর কিশোরীটিকে ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। বাসাগুলোতে হাতিরঝিল এলাকার আরো কয়েকজন তরুণী ও কিশোরীর সঙ্গে দেখা হয় ওই কিশোরীর। এদের মধ্যে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর নির্যাতিত তরুণীও ছিলেন, যাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর