সংসদে শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা দিলেন অর্থমন্ত্রী

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সোমবার (১০ জুলাই) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সংসদে প্রশ্নের জবাব দেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

ওই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী শীর্ষ ঋণ খেলাপি ১০০টি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির তালিকা সংসদে তুলে ধরেন। মন্ত্রীর তালিকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেড ও যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যালের নাম ‍দু’বার উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও এই তালিকায় দুজন ব্যক্তির নাম রয়েছে। তারা হচ্ছেন এমদাদুল হক ভুইয়া ও মুজিবুর রহমান খান।

মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত শীর্ষ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রা.লি., জেসমিন ভেজিটেবলস, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা ট্রেডিং হাউস, আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস, এমএম ভেজিটেবলস অয়েল প্রোডাক্ট, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, হল মার্ক ফ্যাশন, মুন্নু ফেব্রিক্স, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স, সাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল, নূরজাহান সুপার অয়েল, সালেহ কার্পেট মিলস, এস কে স্টিল, চৌধুরী নিটওয়্যারস, রনকা শোয়েল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, টি অ্যান্ড ব্রাদার নিট কম্পোজিট, তানিয়া এন্টারপ্রাইজ ইউনিট, রহমান স্পিনিং মিলস, এস স্পিনিং লাইন, হাজী ইসলাম উদ্দিন স্পিনিং মিলস, গ্রাম বাংলা এমপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, টেলিবার্তা লিমিটেড, কটন করপোরেশন, ভারগো মিডিয়া, সোনালী জুট মিলস, এক্সপার টেক, এমবিএ গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, ওয়াল মার্ট ফ্যাশন, ওয়ান ডেনিম মিলস, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, হিমালয় পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, এম কে শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড স্টিলস, রনকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস, ম্যাক শিপ বিল্ডার্স, বিশ্বাস গার্মেন্টস, মাস্টার্ড ট্রেডিং, হিন্দুল ওয়ালি টেক্সটাইল, ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম, ক্যাপিটাল বনানী ওয়ান, মেরিন ভেজিট্যাবল অয়েল, অর্জন কার্পেট অ্যান্ড জুট ওয়েভিং, এ জামান অ্যান্ড ব্রাদার্স, অরনেট সার্ভিসেস, দোয়েল অ্যাপারেল, আশিক কম্পোটিজ টেক্সটাইল মিলস, মুন বাংলাদেশ, মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স, এইচআর স্পিনিং মিলস, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, তাবাসসুম এন্টারপ্রাইজ, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, দ্যা ওয়েল টেক্স, ডেল্টা সিস্টেমস, জাহিদ এন্টারপ্রাইজ, হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থা, নিউ রাখী টেক্সটাইল মিলস, আলী পেপার মিলস, অল টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দার্ন ডিস্টিলারিজ, লাকি শিপ বিল্ডার্স, যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যাল, মাকসুদা স্পিনিং মিলস, শাপলা ফ্লাওয়ার মিলস, সিদ্দিক অ্যান্ড কোম্পানি, মনোয়ারা ট্রেডিং, একে জুট ট্রেডিং কোং, মাহাবুব স্পিনিং, আলামিন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, প্রফিউশন টেক্সটাইল, মা টেক্স, সুপার সিক্স স্টার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, টেকনো ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ন্যাম করপোরেশন, জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পিএ, সর্দার অ্যাপারেলস, জেড অ্যান্ড জে ইন্টারন্যাশনাল, বিশ্বাস টেক্সটাইলস, মডার্ন স্টিল মিল, নিউ অটো ডিফাইন, অনিকা এন্টারপ্রাইজ, ডি আফরোজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ, মোবারক আলী স্পিনিং মিলস, আফিল জুট মিলস, রেজা জুট ট্রেডিং, আর কে ফুডস, আলফা টোবাকো ম্যানুফ্যাক্সারিং, ফেয়ার এক্সপো ওয়েভিং মিলস, কেয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার ও ফিয়াস এন্টারপ্রাইজ।

চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ৪৯ লাখ ৫ হাজার বার লেনদেন হয়। এতে গড়ে দৈনিক ৮৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার লেনদেন হচ্ছে। বর্তমানে এমএফএসের এজেন্ট সংখ্যা সাত লাখ ৪৬ হাজার ও গ্রাহক পাঁচ কোটি ২৬ লাখ। সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭টি। সরকারি দলের এমপি তানভীর ইমামের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, সরকারের দুই মেয়াদে (২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত) অবৈধভাবে আসা চার হাজার ৪৯০ কেজি ৪৯৩ গ্রাম স্বর্ণ আটক করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০০৯-১০ সাল থেকে  চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে দুই হাজার ৪৫৫ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় বাবদ এক হাজার ১২৩ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে এক হাজার ৩৩১ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার। ৬টি দেশ বা সংস্থা খাদ্য সংরক্ষণ এবং ২১টি দেশ বা সংস্থা মানবসম্পদ উন্নয়নে অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে করদাতার সংখ্যা ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৩। জাতীয় রাজস্বের ৩৭ শতাংশ আয়কর থেকে আসে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, কর দেওয়া এখন আর  তরুণ প্রজন্মের কাছে ভয়ভীতি বা হয়রানি বলে মনে হয় না। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে মুহিত জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ৭২৫টি শাখার মধ্যে ৩ হাজার ২৮১টি (৮৮%) গ্রাহকদের পরিপূর্ণ অনলাইন সেবা দিচ্ছে।

জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশ থেকে ১৪ হাজার ৯৩১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ৩৭ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠানো হয়। ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে মুনাফার একটি অংশ এ খাতে ব্যয় করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সিএসআর খাতের ৩০ শতাংশ শিক্ষা, ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য এবং বাকি অংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব পণ্য ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গৃহীত খাতে ব্যয় করতে হয়।

নজরুল ইসলাম বাবুর প্রশ্নের জবাব মুহিত বলেন, আর্থিক খাত ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাতে সন্ত্রাসে অর্থায়ন, মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচার করতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশনা অনুযায়ী আর্থিক খাতসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যথাযথ গ্রাহক পরিচিতমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও একটি শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। আব্দুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এডিপির প্রায় ৫১ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্য থেকে অর্থায়ন হতো। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা হ্রাস পেয়ে ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর