চেরনোবিলে হঠাৎ আবার জীবনের জোয়ার…

সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিলে পারমাণবিক বিপর্যয়ের ৩০ বছর পরে আণবিক চুল্লির চারপাশের এলাকা আজও পরিত্যক্ত, জনশূন্য৷ এই সব এলাকা আজ ইউক্রেন কিংবা বেলারুসের অঙ্গ৷ তেজস্ক্রিয়তার ভয়ে মানুষ উধাও, বাড়িঘর খালি, কিন্তু জীবজন্তুরা ধীরে-ধীরে ফিরতে শুরু করেছে৷

 

‘মানুষ আর কোনোদিনই এখানে থাকতে পারবে না’

 

কিন্তু বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তুর দেখা পাওয়া যাচ্ছে, যেমন ছবিতে এই শেয়াল পন্ডিত৷ ছবিঘরের অন্যান্য ছবিগুলোও রয়টার্সের আলোকচিত্রশিল্পী ভাসিলি ফেদোসেঙ্কোর তোলা, যিনি বেলারুসের মানুষ ও মিন্সকের বাসিন্দা৷ রয়টার্সের বিবরণ অনুযায়ী ইউক্রেনের পরিবেশমন্ত্রী হানা ভ্রন্সকা বলেছেন, ‘মানুষ আর কোনোদিনই এখানে থাকতে পারবে না, আগামী ২৪ হাজার বছরেও নয়৷’

 

স্থানান্তরণ ও পুনর্বাসন

 

চেরনোবিল দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল তারিখে৷ একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলাকালীন প্রিপিয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চার নম্বর চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটে – অথচ রিয়্যাক্টরটি এর মাত্র তিন বছর আগে চালু হয়েছিল৷ বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা নির্গত হয়ে ইউরোপ অবধি ছড়িয়ে পড়ে৷ ১৯৮৬ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে দুর্ঘটনার পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষকে স্থানান্তরিত ও পুনর্বাসিত করা হয়৷

 

অজ্ঞাত ফলশ্রুতি

 

স্থানীয় গাছপালা ও পশুপাখির উপর চেরনোবিল দুর্ঘটনার ফলশ্রুতি সম্পর্কে গবেষকরা একমত নন৷ একদিকে তেজস্ক্রিয়তার নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও, অন্যদিকে মানুষের অনুপস্থিতি প্রকৃতির পক্ষে ইতিবাচক৷ প্রকৃতিকে যে রোখা যায় না, বেলারুসের ড্রনকি গ্রামের কাছে একদল বাইসন, অর্থাৎ বন্য মহিষ তার প্রমাণ৷

 

গাঁ আছে, মানুষ নেই

 

ইউক্রেন আর বেলারুসের সীমান্তে অবস্থিত প্রিপিয়াট শহরের বাড়িঘর দুর্ঘটনায় প্রায় অক্ষতই থাকে, কিন্তু শহরের ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে কেউ আর আজ এখানে বাস করেন না৷ দুর্ঘটনার স্থল থেকে ৩০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে সব এলাকাকে বহিষ্কারের এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়, যেমন বেলারুসের এই পরিত্যক্ত গ্রামটি, যার নাম পোগোনোয়৷

 

শিকার সকলেই

 

বেলারুসের পরিত্যক্ত ওরেভিচি গ্রামে একটি নেকড়ে ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখেছে৷ দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনাপ্রাপ্ত আণবিক চুল্লির কাছাকাছি এখনও নানা ধরনের গাছপালা, ফুলফল, জীবজন্তু রয়েছে; কিন্তু তাদের মধ্যে মৃত্যুহার সাধারণের চেয়ে বেশি ও তাদের নানা ধরনের টিউমার বা অন্যান্য রোগ হয়ে থাকে৷ তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব দৃশ্যত সব প্রজাতির উপর সমান নয়৷

 

‘বহু শতাব্দী ধরে বিপদ থাকবে’

 

জীববিজ্ঞানী টিমোথি মুসো বহু বছর ধরে চেরনোবিল ও ফুকুশিমা থেকে তেজস্ক্রিয়তার ফলে পরিবর্তিত পোকামাকড়, পাখি ও ইঁদুর সংগ্রহ করেছেন৷ মুসো ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্বভাবতই উচ্চ পারমাণবিক দূষণের এলাকাগুলিতে পরিবর্তনশীলতার মাত্রা বেশি৷ বহু এলাকা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিপজ্জনক থাকবে – হয়ত হাজার বছর ধরে৷’ ছবিতে ড্রনকি গ্রামের কাছে মুজ হরিণ৷

 

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে

 

বাবচিন গ্রামের কাছে কাঠঠোকরা৷ এই ধরনের জীবজন্তুদের পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, খাদ্যের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যেতে থাকে৷ চেরনোবিলের চারপাশে যে সব জীবজন্তুকে পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে টিউমার, চোখের ছানি, ছোট সাইজের ব্রেন, এ সবই পরিলক্ষিত হয়েছে৷

 

Great uncertainty

 

অনিশ্চয়তা কিছু বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, চেরনোবিলের কাছাকাছি আজকাল এমন কিছু প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়, যা আগে এখানে ছিল না৷ তবে এর কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই বলে অন্যান্য গবেষকদের এ ব্যাপারে দ্বিধা আছে৷ -ডচভেলে
Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর