ক্লাসে ফেরা অনিশ্চিত করোনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনায় স্কুল বন্ধ থাকার সময় পাবনায় অনেক শিক্ষার্থী বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন কাজে যোগ দেয়। অনেক মেয়ে শিশুর বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এসব শিক্ষার্থী আর স্কুলে যাচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে স্কুল খোলা হলেও তাদের উপস্থিত হতে দেখা যায়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কত শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না তা নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্টরা বলতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে কয়েক হাজার হবে।

পাবনা সদর উপজেলার সাদিপুর গ্রামের শিশু রাহাদ এখন পশ্চিম সাধুপাড়া এলাকার একটি গেঞ্জির কারখানায় কাজ করে। সে গত শিক্ষাবর্ষেও মধ্য শহরের গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশনে ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ত। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবার তাকে গেঞ্জির কারখানায় কাজ শিখতে দেয়। তিন দিন হলো স্কুল খুলেছে। কিন্তু পরিবারের তেমন ইচ্ছে নেই রাহাদকে আর ক্লাস করতে পাঠাতে।

মঙ্গলবার কারখানায় কাজ করার সময় শিশু শ্রমিক রাহাদ জানায়, প্রতি মাসে তার বেতন ৬ হাজার টাকা। ওভারটাইম করলে আরো বেশি হয়। নিজের হাত খরচের পাশাপাশি তার আয়ের ওপর নির্ভরশীলতা এসেছে পরিবারেও। এখন স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। পশ্চিম সাধুপাড়া এলাকার হোসিয়ারি মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় গ্রাম এলাকার অধিকাংশ বাচ্চাই মোবাইল ফোনের গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছিল। বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কায় অনেক শিশুর বাবা-মা এসে আমাদের অনুরোধ করে অনেকটা জোর করেই কাজে দিয়ে গেছেন। এখন স্কুল খোলার পরেও তারা কাজ ছাড়তে চাইছে না। কিসমত প্রতাপপুর গ্রামের মোটরসাইকেল মেকার আবদুল্লাহ জানান, করোনার বিরতিতে আমাদের এলাকার মাধ্যমিক পর্যায়ের অনেক মেয়েকে গোপনে তাদের বাবা-মা বিয়ে দিয়েছেন। এখন সংসারে ব্যাঘাত ঘটিয়ে তারা আর পড়াশোনায় ফিরবে কি না, সন্দেহ আছে। শহরের পশ্চিমে বালিয়াহালট গোরস্থান সংলগ্ন নাজিফা কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক আব্দুল মজিদ তালুকদার জানান, করোনাকালে তাদের প্রতিষ্ঠানে পাঠদান হয়নি। অনলাইন ক্লাসে সাড়া মেলেনি শিক্ষার্থীদের। পাওয়া যায়নি বেতন ভাতাও। ধারদেনা করে শিক্ষকদের আংশিক বেতন পরিশোধ করেছেন তিনি।

জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন ও ননএমপিও শিক্ষক সমিতি সূত্রে জানা যায়, করোনার টানা বন্ধে পাবনায় কমপক্ষে ১৫০টি নন এমপিও স্কুল ও ৫৫টি কিন্ডারগার্টেন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন স্কুল খুললেও নষ্ট আসবাবপত্র মেরামতের সামর্থ্যও নেই এসব প্রতিষ্ঠানের। অনিশ্চয়তায় পড়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে মজিদ মুরাদ বলেন, তাদের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, অনেক শিক্ষক এখন সবকিছু হারিয়েছেন। সবজি বিক্রি করছেন, অটোরিকশা চালাচ্ছেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, করোনায় বাল্যবিবাহ ও শিক্ষার্থীদের আর্থিক কাজে জড়ানোর খবর পেলেও সঠিক পরিসংখ্যান তার জানা নেই। তবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বাল্যবিবাহে জড়িয়ে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে প্রায় ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সবে স্কুল খুলল। এখন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা করে, অভিভাবকদের বুঝিয়ে তাদের শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের সহায়তার জন্য তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর