সাবিনাদের হাত ধরে রঙিন এক বছর

সারা বছর জুড়ে নানা ঘটনায় আলোচনায় ছিল ফুটবল। সকল আলোচনা ছাপিয়ে গেছেন সাবিনা-মারিয়ারা। সেপ্টেম্বরে নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। যা দেশের ফুটবলে অন্যতম বড় অর্জন।

সাবিনাদের সেই অর্জনে মেতেছিল পুরো দেশ। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল খুব স্বল্প সময়ে ছাদ খোলা বাসের আয়োজন করেন। বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত ছাদখোলা বাসে এসেছেন ফুটবলাররা।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা এত দিন বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছেন। সিনিয়র পর্যায়ে কোনো শিরোপা ছিল না। সেই অপূর্ণতা এবার পুরণ করেছেন সাবিনারা। ফাইনালের দিন মিডফিল্ডার সানজিদা আক্তারের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে পুরো দেশে আলোড়ন তুলে। পুরো দেশের বাংলাদেশ কাঠমান্ডুতে জেতার পর উৎসবের উপলক্ষ্য তৈরি হয়। পুরো দেশজুড়ে চলেছে এই শিরোপা উৎসব। চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলারদের নিজ নিজ জেলায় বিশিষ্টজনরা তাদের পরিবারকে শুভেচ্ছা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সাফ শিরোপা জয়ী দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, সংস্থা সাবিনাদের সংবর্ধনা দেয়।

সাবিনারা যেমন ছিলেন সফল এর উল্টো অবস্থানে জামাল ভূইয়াদের। এই বছরের শুরুতে তারা নতুন গুরু হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরাকে পেয়েছিলেন। নতুন গুরুর মূল মিশন ছিল এশিয়া কাপ বাছাই। করোনার কারণে এবার এশিয়া কাপ বাছাই হয়েছে একটি কেন্দ্রীয় ভেন্যুতে এবং রাউন্ড রবিন  পদ্ধতিতে। চার দল নিয়ে ছিল প্রতিটি গ্রুপ। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল এশিয়া কাপ খেলার সুযোগ ছিল। হ্যাবিয়ের ক্যাবরেরার বাংলাদেশ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ পরাজিত হয়েছে।

এশিয়া কাপ বাছাইয়ে হ্যাভিয়ের ব্যর্থ হলেও ফিফা প্রীতি ম্যাচে ড্রয়ের কৃতিত্ব রয়েছে এই স্প্যানিয়ার্ডের। তার চুক্তির মেয়াদ ছিল নভেম্বর পর্যন্ত। চুক্তির মেয়াদ বাড়বে কিনা এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে জল্পনা কল্পনা ছিল অনেক। শেষ পর্যন্ত হ্যাভিয়েরের চুক্তি বাড়িয়েছে বাফুফে। আগামী বছরও তাকে ডাগআউটে দেখা যাবে। তিন বছরের বেশি সময় জামালদের কোচিং করিয়েছেন ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। এক বছরের বেশি সময় তিনি বাংলাদেশ থেকে বিদায় হয়েছেন। বছরের শেষভাগে আবার আলোচনায় এসেছেন এই বৃটিশ। বাফুফের সঙ্গে দেনা-পাওনা ইস্যুতে ফিফায় আবেদন করেছিলেন। জেমির আবেদন আমলে নিয়ে ফিফা বাফুফেকে জরিমানা করেছে।

ক্লাব ফুটবলে ইতিহাস করেছে বসুন্ধরা কিংস। প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকের পরই হ্যাটট্রিক শিরোপা নেই কোনো দলের। বসুন্ধরা কিংস ঘরোয়া ফুটবলে সেই রেকর্ড করেছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি আবাহনী লিমিটেড স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ জিতলেও লিগে কিংসের অনেক দূরেই ছিল।ঘরোয়া পর্যায়ে বসুন্ধরা কিংস দোর্দন্ড প্রতাপ দেখালেও দক্ষিণ এশিয়ার মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে পারেনি। এএফসি কাপে কলকাতায় ভারতের মোহনবাগানের বিপক্ষে হেরে গ্রুপ থেকেই বিদায় হয় কিংসের। ঢাকা আবাহনী প্লে অফের পর্ব পার হতে পারেনি।

ঘরোয়া ফুটবলে রেফারিং নিয়ে প্রশ্ন ছিল বছর জুড়েই। তেমনি রেফারিরা দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন অনেক। লিগের অনেক ম্যাচ বয়কট করেছেন রেফারিরা বকেয়া ও ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে। আবার এর বিপরীতে ফেডারেশনও রেফারিদের বহিষ্কার করেছে।

বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ম্যাচ ফিক্সিং ছিল আলোচনার অন্যতম বিষয়। আজমপুর ক্লাবের কোচ সাইফুর রহমান মনি ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনে সরে যান দায়িত্ব থেকে। সেই আজিমপুরকে বাফুফে বেকসুর খালাস দিলেও উত্তর বারিধারাকে ম্যাচ পাতানোর শাস্তি দিয়ে ফুটবলাঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় বিভাগেও পাতানোর ঘটনা  ঘটেছে।

ঘরোয়া ফুটবলে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়ন এক বছর পর আবার ফুটবলে ফিরেছে। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে এবার তারা অংশগ্রহণ করছে। এক মৌসুম আগে প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হয়েছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। গত বছর চ্যাম্পিয়নশীপ লিগে খেলেনি। এই বছর তাদেরকে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলার অনুমতি দিয়েছে ফেডারেশন। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ব্রাদার্স যেমন এক বছর পর ফুটবলে ফিরেছে তেমনি স্বাধীনতার পর থেকে ফুটবলের সঙ্গে থাকা অগ্রণী ব্যাংক এবার ফুটবল থেকে সরে গিয়েছে। আর্থিক কারণে তারা এবার চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে দল গড়েনি।

অগ্রণী ব্যাংকের মতো ফুটবল থেকে সরে গেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবও। বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথম কর্পোরেট দল ছিল সাইফ স্পোর্টিং। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া এই ক্লাবে অধিনায়কত্ব করেছেন দীর্ঘদিন। এই ক্লাব তাদের সেরা সাফল্য করেছিল গত লিগে। এরপরও বৈশ্বিক মন্দার কারণে তারা ফুটবল থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। দ্বিতীয় বিভাগ লিগেও তাদের একটি দল ছিল। সেই দলের দলবদল হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ঐ লিগে খেলে সাইফ যুব দল এবং শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নও হয় তারা।

এক যুগের বেশি সময় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ব্যস্ততা থাকায় তিনি এই পদ থেকে সরে দাড়ান। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নিজেই এই দায়িত্ব নিয়েছেন। কাজী সালাউদ্দিন লিগ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর এটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট কমিটি করেছেন। প্রথমবারের মতো ইউরোপের আদলে ফেডারেশন কাপ ও লিগ এক সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশে।

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন চতুর্থবারের মতো সাফের সভাপতি হয়েছেন। এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে সর্বোচ্চ প্রশাসক হয়েছেন বাংলাদেশের ফুটবল কিংবদন্তি। সালাউদ্দিন আমলে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশে এসেছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। ২০১৩ সালের পর এই বছর বাংলাদেশে এসেছিল ফিফা-বিশ্বকাপ ট্রফি।

ফিফার মাধ্যমে কক্সবাজারে বাফুফে সেন্টার অফ এক্সিলেন্স গড়তে চায়। রামুতে বাফুফের পাওয়া সেই জায়গা বন অধিদপ্তরের সংরক্ষিত এলাকায় হওয়ায় এটা নিয়ে নাগরিক সমাজে অনেক সমালোচনা করছে ।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর