২ সপ্তাহের জামিন পেলেন ইমরান খান

আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দু’সপ্তাহের জামিন পেয়েছেন ইমরান খান। শুক্রবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি মিয়াগুল হাসান আওরঙ্গজেব এবং বিচারপতি সামান রাফাত ইমতিয়িাজের একটি বেঞ্চ এই জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানিয়েছে দেশটির দৈনিক ডন।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী রাজধানী ইসলামাবাদের পুলিশ লাইন অতিথি ভবনে রাত্রিযাপনের পর শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ভবনে পৌঁছান ইমরান খান। রাজধানী পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের একটি দল এ সময় তার চারপাশ ঘিরে ছিল।

ডন নিউজ টিভির ফুটেজে দেখা গেছে, পাকিস্তান তেহরিকই-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে বহনকারী গাড়িটি হাইকোর্ট চত্বরে প্রবেশমাত্র সেখানে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন আইনজীবীর একটি দল ইমরানের সমর্থনে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।

তবে গাড়ি থেকে নামার পর ওই আইনজীবীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে পারেননি তিনি। তার আগেই তাকে ঘিরে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীর দলটি তাড়াহুড়ো করে তাকে নিয়ে হাইকোর্টের ২ নম্বর কোর্টরুমে প্রবেশ করে।

ইমরান খান সময়মতো আদালতে প্রবেশ করলেও তার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টার পর। এই সময়ে আদালত এলাকার নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ ও রেঞ্জার্স সদস্যরা তৎপর ছিলেন।

দুপুর ১ টার কিছু আগে শুনানি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জুমার নামাজের বিরতি শুরু হয়। সেই বিরতি শেষে ফের এজলাস বসে দুপুর আড়াইটার পর। ইমরান খানকে এ সময় তার আইনজীবী টিমের সঙ্গে বসে থাকতে দেখা গেছে।

শুনানি শুরুর পর ইসলামাবাদ হাইকোর্টে ইমরানের প্রধান আইনজীবী খাজা হারিস আলোচিত আল-কাদির দুর্নীতি মামলায় ইমরানের জামিনের আর্জি জানান এবং তার পক্ষে যুক্তিতে বলেন, ন্যাবের যে পরোয়ানার ভিত্তিতে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা অবৈধ। কারণ আইন অনুযায়ী, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে ন্যাব তা প্রথমে অনুসন্ধান করে এবং অনুসন্ধানে অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পরে।

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ন্যাব এখনও অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে বলে দাবি করেন খাজা হারিস।

হারিসের যুক্তি খণ্ডন করতে ন্যাবের আইনজীব পাল্ট যুক্তি দিয়েছেন কিনা—জানা যায়নি। তবে হারিসের আর্জি ও যুক্তিকে আমলে নিয়েই উচ্চ আদালত ইমরান খানের জামিন মঞ্জুর করেন।

গত মঙ্গলবার দু’টি মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ইমরান খান। সেখান থেকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো’র (ন্যাব) একটি যৌথ দল। গত ১ মে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ন্যাব।

ন্যাবের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাজির আহমেদ বাট স্বাক্ষরিত ওই পরোয়ানায় বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সোহাওয়া শহরে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের নামে ব্রিটেনের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে রাষ্ঠীয় কোষাগার থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিয়েছিলেন ইমরান খান, তার বর্তমান স্ত্রী বুশরা বিবি এবং ইমরানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের কয়েক জন জেষ্ঠ্য নেতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে জমি বরাদ্দ নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকেও ইমরান ও বুশরা বিবি অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় পরোয়ানায়।

মঙ্গলবার ইমরানকে গ্রেপ্তারের পর নজিরবিহীন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পাকিস্তান। দেশজুড়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় পিটিআই নেতাকর্মীদের, রাজধানী ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের বিভিন্ন শহরে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ভবন, সেনানিবাস ও সেনাদপ্তরে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।

পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিতে থাকায় মঙ্গলবার ইসলামাবাদ, পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে সেনা মোতায়েন করা হয়।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ইমরান খানকে সর্বোচ্চ আদালতের এজলাসে উপস্থিত করে ন্যাব। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট ন্যাবের এই গ্রেপ্তারি অবৈধ ঘোষণা করে আগামীকাল শুক্রবার ইমরানকে ফের ইসলামাবাদ হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেন, যতদিন আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানের জামিন না হবে, ততদিন তিনি ইসলামাবাদ পুলিশ লাইন্স অতিথি ভবনে অবস্থান করবেন। এই আদেশ মেনে বৃহস্পতিবার সেই অতিথি ভবনেই রাত্রিযাপন করেছেন পিটিআই চেয়ারম্যান।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর