শরীরে ব্যথা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  শরীর ব্যথা হচ্ছে বিভিন্ন রোগের একটি সাধারণ উপসর্গ। বেশ পরিচিত রোগ ফ্লু শরীরে ব্যথার উদ্রেক করতে পারে। প্রতিদিনকার কার্যপ্রণালীর কারনেও শরীর ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটলে, দাঁড়ালে বা অনুশীলন করলে।

শরীর ব্যথায় গুরুতর অবস্থা এড়াতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে যেন ভুল না হয়। শরীর ব্যথার বিভিন্ন কারণ বা রোগ সম্পর্কে জ্ঞান আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতার পরিচয় বহন করে। আজ শরীর ব্যথার ১২টি রোগ সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।

১. উদ্বেগ

উদ্বেগে থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। এর ফলে শরীর সংক্রমণ বা ব্যাধির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না। উদ্বেগের কারণে শরীরে প্রদাহ ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। যদি মনে করেন উদ্বেগের কারণে আপনার শরীর ব্যথা করছে, তাহলে জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন আনুন। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন-

* প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য মেডিটেশন করুন। শ্বাসক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দিন এবং উদ্বেগ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা ঘটনাসমূহ মন থেকে তাড়িয়ে দিন।

* হাঁটুন কিংবা উদ্বেগপূর্ণ পরিবেশ ত্যাগ করুন।

* উদ্বেগের কথা বিশ্বস্ত কাউকে বলুন যাতে উদ্বেগের কারণ স্পষ্ট হয়।

* উদ্বেগের কারণে ঘুম ব্যাহত হলে ঘুমানোর আগে উদ্বেগ শিথিলকরণ পদ্ধতি মেনে চলুন।

২. ডিহাইড্রেশন

শরীরকে স্বাভাবিক ও সুস্থ রাখতে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ছাড়া শরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া (যেমন- শ্বাসক্রিয়া, পরিপাকক্রিয়া ইত্যাদি) সম্পন্ন করতে পারে না। ঠান্ডা কিংবা গরমে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করলে ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাবেন। প্রতিদিন ৮ আউন্স গ্লাস পানি পান করা উচিত। এর চেয়েও বেশি পান করুন যদি আপনি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন ও ঘামেন।

ডায়রিয়ার কারণে ডিহাইড্রেটেড হয়ে থাকলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। অতিরিক্ত ইলেক্ট্রোলাইটযুক্ত পানি বা তরল পান আপনাকে হাইড্রেটেড রাখবে ও ইলেক্ট্রোলাইট ডায়রিয়াকে দূর করবে। শরীর পানি ধরে রাখতে না পারলে বা অতিমাত্রায় ডিহাইড্রেটেড এড়াতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

৩. ঘুমের অভাব

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়বে। র‍্যাপিড আই মুভমেন্টসহ প্রতিরাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। শরীরের টিস্যু ও কোষের যথাযথ ঘুম দরকার যাতে তারা সুস্থ থাকে। ব্রেইনকে সতেজ ও সতর্ক রাখতে ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুম ছাড়া শরীর বিশ্রাম নিতে পারে না এবং প্রয়োজনীয় শক্তি ও প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হতে পারে না। এ কারণে শরীরে ব্যথা হয়।

প্রতিরাতে পর্যাপ্ত ঘুমের সূচি অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। শরীরের ছন্দ বা তাল বজায় রাখতে কিংবা ২৪ ঘণ্টার প্রাকৃতিক চক্র (সার্কাডিয়ান রিদম) ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে।

রিল্যাক্স হতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন-

* গরম চা কিংবা অন্যান্য গরম তরল পান করুন।

* মেডিটেশন করুন।

* গান শুনুন।

* রুমের হোয়াইট নয়েজ (যেমন- ফ্যানের শব্দ) শুনুন।

৪. ঠান্ডা বা ফ্লু

ঠান্ডা ও ফ্লু উভয়েই ভাইরাল বা ভাইরাসঘটিত ইনফেকশন যা প্রদাহ সৃষ্টি করে। এসব ইনফেকশন শরীরকে আক্রমণ করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এদেরকে হটানোর চেষ্টা করে। প্রদাহ, বিশেষ করে গলা, বুক ও ফুসফুসের প্রদাহ বেদনাদায়ক হতে পারে। শরীরের অন্যান্য অংশেও ব্যথা হতে পারে, কারণ শরীর ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

আরাম পেতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। গলা ব্যথা কমাতে উষ্ণ লবণ পানি দিয়ে কুলকুচা করুন। এতে ঠান্ডাজনিত রোগ বা ফ্লু দ্রুত সেরে যাবে। ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ (যা কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না) সিউডোফেড্রাইন ও ইবুপ্রোফেন উপসর্গ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে যদি ঠান্ডা বা ফ্লু থাকে কিংবা খেতে না পারলে, পান করতে না পারলে বা শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে যান।

৫. অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা

শরীরে লোহিত রক্তকণিকার অভাব হলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাস্বল্পতা হয়। অ্যানিমিয়া হলে দেহের টিস্যু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। অ্যানিমিয়ার কারণে শরীরের অনেক অঙ্গ বিবশ হয়ে যেতে পারে, কারণ সুস্থ থাকার জন্য বা ক্রিয়া সুসম্পন্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট অক্সিজেন তারা পায় না।

বিভিন্ন কারণে অ্যানিমিয়া হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত লৌহ, ফোলেট বা ভিটামিন বি-১২ এর অভাবে অ্যানিমিয়া হয়। এসবের ঘাটতি পূরণে সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। সাপ্লিমেন্টে কাজ না হলে পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হোন।

৬. ভিটামিন ডি ঘাটতি

শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে হাইপোক্যাসিমিয়া (রক্তে ক্যালসিয়ামের অভাব হওয়া) হয়ে থাকে। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ (যেমন- কিডনি, পেশি ইত্যাদি) যথাযথভাবে কাজ করার জন্য ক্যালসিয়ামের ওপর নির্ভর করে। হাড়ের সুস্থতার জন্যও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি এর অভাবে ক্যালসিয়াম শোষিত হয় না যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও হাড়ে ব্যথা হয়।

৭. মনোনিউক্লিওসিস

মনোনিউক্লিওসিস মনো নামে বেশ পরিচিত। মুখের লালার মাধ্যমে এটি ছড়ায়। তাই একে চুম্বন রোগও বলে। এটি একপ্রকার ইনফেকশন যা এপস্টেইন-বার নামক ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। এটি খুব ছোঁয়াচে। এর সবচেয়ে কমন উপসর্গ হচ্ছে শরীর ব্যথা।

৮. নিউমোনিয়া বা ফুসফুস প্রদাহ

নিউমোনিয়া বা ফুসফুস প্রদাহ হল ফুসফুসের ইনফেকশন। ফুসফুসে ইনফেকশন হলে পুরো শ্বসন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নিউমোনিয়া হলে শ্বাসকষ্ট হয় এবং অতিরিক্ত ঘাম বের হয়। ভালোমত শ্বাস নিতে না পারলে লোহিত রক্তকণিকা ও টিস্যুকে সুস্থ রাখার জন্য শরীর যথেষ্ট অক্সিজেন পায় না। এ রোগ সারা শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

৯. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

ফাইব্রোমায়ালজিয়া হলে পুরো শরীর বা শরীরের বিভিন্ন অংশ (যেমন- পেশি, হাড় ইত্যাদি) ক্লান্ত বা অবসাদগ্রস্ত, ব্যথাক্লিষ্ট ও সংবেদনশীল হতে পারে। এ রোগের কারণ এখনও অজ্ঞাত। তবে চাপপূর্ণ ঘটনা, যেমন- শারীরিক আঘাত বা অসুস্থতা, সার্জারি এবং ইনফেকশনের কারণে এটি হতে পারে।

১০. ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি

ক্রনিক ফ্যাটিক সিনড্রোম হলে আপনি ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যাবেন। বিশ্রাম বা ঘুমের তারতম্যের ওপর এটি নির্ভর করে না। তাই বেশি বিশ্রাম বা ঘুমিয়েও ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করা যায় না। এ রোগ শরীরকে অবসাদগ্রস্ত রাখে বলে পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।

১১. আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহ

শরীরের জয়েন্ট বা সন্ধির প্রদাহকে আর্থ্রাইটিস বা সন্ধিপ্রদাহ বলে। এ রোগের ফলে জয়েন্টে ব্যথা হয় ও চলাচল সীমিত হয়ে যায়। নিম্নলিখিত কারণে এ রোগ হতে পারে-

* জয়েন্টের তরুণাস্থি বিকল হলে (অস্টিওআর্থ্রাইটিস)

* জয়েন্টে ইনফেকশন হলে

* অটোইমিউন অবস্থা যা জয়েন্টের আস্তরণকে ক্ষয় করে (রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস)।

১২. লুপাস

শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা শরীরের টিস্যু আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে লুপাস বলে। এর ফলে দেহের যেকোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। এ রোগের একটি সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে শরীর ব্যথা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর