প্রেসিডেন্টের মেয়ের যে ছবি নিয়ে তোলপাড়

বাঙালী কণথনিউজঃ কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্ট আলমাজবেকের মেয়ের ছবি নিয়ে আপত্তি উঠেছে। তবে ছবিটি সাধারণ হলেও নেট দুনিয়ায় অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। ছবিটির দৃশ্যে মা তাঁর শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছেন এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

তা হলে আপত্তি কীসের? সমালোচকদের দাবি, মায়ের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। প্রশ্নটা মায়ের পোশাক নিয়ে। শুধুমাত্র অন্তর্বাসে শরীর ঢেকে সন্তানকে দুধ খাওয়াচ্ছেন তিনি। আর প্রশ্নটা ওঠার আর একটা বড় কারণ, এই মা কোনো সাধারণ মহিলা নন। তিনি কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্ট আলমাজবেক আটামবায়েভের সব চেয়ে ছোট মেয়ে আলিয়া।

সন্তানকে স্তন্যপানের সেই ছবি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন গত এপ্রিল মাসে। তাতে বাইরের লোকজন তো বটেই, খেপে গিয়েছিলেন আলিয়ার বাবা-মাও।

প্রেসিডেন্ট কন্যা আলিয়া শাগিয়েভা সম্প্রতি ওই ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘প্রয়োজনমতো যখন খুশি, যেখানে খুশি আমার সন্তানকে স্তন্যপান করাব।’ কিন্তু সেই ছবি থেকে তার বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক আচরণে’র অভিযোগ উঠেছিল। পরে তাই সে পোস্ট সরিয়ে নিয়েছিলেন আলিয়া। পরবর্তীকালে এক ব্রিটিশ সংবাদ চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন আলিয়া। তাঁর মতে, যে সংস্কৃতির মধ্যে তিনি বড় হয়ে উঠেছেন, সেখানে মহিলাদের যৌনতার প্রতীক ছাড়া আর কিছু ভাবা হয় না, সমস্যাটা সেখানেই।

বিশকেকের শহরতলির এক বাড়িতে বসে আলিয়ার অকপট মন্তব্য, ‘যে শরীরের ছবি আমি দিয়েছিলাম, তা অশালীন নয়। সেই শরীরের একটা কাজ রয়েছে। আমার শিশুর খিদে মেটানো। সেই শরীরে যৌনতার চিহ্ন খোঁজার কোনও অর্থ নেই।’ আলিয়ার যুক্তি অবশ্য তার বাবা-মা বুঝতে চাননি। কিরঘিজ প্রেসিডেন্ট আটামবায়েভ এবং স্ত্রী রাসিয়া গোটা বিষয়টি নিয়ে একেবারেই অখুশি। আলিয়া বলেন, ‘ওঁদের ভাল লাগেনি। সেটা আমি বুঝি। নতুন প্রজন্ম তাদের বাবা-মায়ের থেকে কম রক্ষণশীল।’

এই প্রথম নয়। মাঝেমধ্যেই এটা-ওটা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে থাকেন আলিয়া। নিজের শিল্পসৃষ্টি অথবা স্বামী-সন্তান বা নিজের কিছু ব্যতিক্রমী ছবি। সঙ্গে বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর ছবিও। তার কথায়, ‘যখন ওকে স্তন্যপান করাই, তখন মনে হয়, ওকে আমি নিজের সেরাটা দিয়ে দিচ্ছি। লোকে তা নিয়ে কী বলল, তার চেয়েও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সন্তানের যত্ন নেয়া, ওর খেয়াল রাখা।’

এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ কিরঘিজস্তান পরবর্তীকালে স্বাধীন দেশ হলেও সেখানে সামাজিক রক্ষণশীলতা যথেষ্ট প্রকট। এখানকার সাধারণ মুসলিম সমাজে আলিয়ার মতো চরিত্র তাই আলাদা করে চোখে পড়ার মতো। তাকে সাহসিনী বলতে দ্বিধা নেই অনেকের। অথচ তার মা-ই তাকে নিয়ে ক্ষিপ্ত?

এ ব্যাপারে আলিয়া বলেন, ‘মায়ের বন্ধুরা মেসেজ করে এ সব মাকে জানায়। আমি নিজেও এখন মা। তাই বুঝি, আমার মাকে কতটা কষ্ট করে বড় করতে হয়েছে আমাকে।’

রক্ষণশীল কিরঘিজস্তানে প্রকাশ্যে স্তন্যপান করানোয় অবশ্য কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে আলিয়ার মতো ‘উন্মুক্ত’ পোশাক নয়, যথেষ্ট রেখেঢেকে তবেই মহিলারা শিশুদের স্তন্যপান করাতে পারেন। তাই আলিয়ার ওই ছবি নিয়ে হইচই পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিরঘিজস্তান পেরিয়ে সে ছবি ইউরোপের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সংবাদপত্রে ফলাও করে ছাপা হয়। মহিলা শরীর নিয়ে যে ধরনের ‘ছুঁতমার্গ’ কাজ করে, তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আলিয়া যে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করেছেন, তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিদেশের বহু মানুষ।

মাস তিনেক আগে অস্ট্রেলিয়ার সেনেটর ল্যারিসা ওয়াটার্স পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালীন তার সন্তানকে স্তন্যপান করিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন। তবে ‘অশালীনতা বিতর্ক’ তাড়া করেনি তাকে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর