যমুনার পাড়ে বাতাসে ইলিশের গন্ধ…

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে রাতের আঁধারে প্রতিদিনই চলছে মা ইলিশ ধরার মহোৎসব। মৎস্য সম্পদ রক্ষা এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার ইলিশ প্রজনন মৌসুম (১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত) ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে মা ইলিশ ধরার মহোৎসব।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে বাচামারা, বাঘুটিয়া ও চরকাটারী ইউনিয়নের যমুনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে ধরা হচ্ছে মা ইলিশ মাছ। এই তিনটি ইউনিয়নে বিভিন্ন হাট বাজার, গ্রামে গ্রামে ও যমুনা নদীর পাড়ে প্রতিদিন অবাধে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ। বড় ইলিশের সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ছোট আকারের জাটকাও। এসব ইলিশ আকার ভেদে ২০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রিও হচ্ছে প্রকাশ্যেই। একটু কম দামে কেনার আশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনের আলোতেই নদীতে ইলিশ ধরছে জেলেরা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের ঝটিকা অভিযান হলেও থামছে না মা ইলিশ ধরার অবৈধ কার্যক্রম। তবে সরকারিভাবে এই সময়ে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত কোনো ধরনের সহায়তা পাননি বলে দাবি করেছে জেলেরা।

এদিকে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সুযোগে পয়সা কামানোর আশায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেছিল কতিপয় সরকার দলীয় নেতাকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এক শ্রেণীর হলুদ সাংবাদিক। এদের ছত্রছায়ায় মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনা থেকে নির্বিচারে প্রচুর পরিমাণে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরে বিক্রি করে কয়েকদিনে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে মৌসুমী জেলেরা।

জানা যায়, পদ্মা, যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪০টি মোবাইল কোর্ট এবং ৬১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে প্রায় আড়াই মেট্রিক টন মাছ উদ্ধার করা হয়, যার মূল্য প্রায় কিন লাখ টাকার মতো। মামলা হয়েছে কমপক্ষে তিন শতাধিক, জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা, মোট ১৫৪ জনকে জেল -জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও থামানো যাচ্ছে না এই ইলিশ শিকারীদের তৎপরতা।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য অফিস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রায় রাতেই যমুনা নদীতে ইলিশ মাছ নিধন বিরোধী অভিযান চলছে। জেলেদের আটক ও মাছ- জাল জব্দ করাও হচ্ছে।

একটি সূত্র জানায়, রহস্যজনক কারণে স্থানীয় মিডিয়া কর্মীদের মাছ সম্পর্কে অবগত কিংবা অভিযানে না নিয়ে শুধুমাত্র আটককৃত জেলেদের ছবি তোলার জন্য সংবাদিকদের ডাকা হচ্ছে! এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দেখানো হচ্ছে না জব্দকৃত ইলিশ মাছ। অভিযোগ রয়েছে, জব্দকৃত ইলিশ মাছগুলো নামে মাত্র দুই-তিনটি মাদ্রাসায় মধ্যে বিতরণ করে বাকি ইলিশগুলো উধাও করা হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার সরজমিনে দেখা গেছে, বাচামারা, বাঘুটিয়া ও চরকাটারী ইউনিয়নের নদীর পাড়ে নৌকায় ও ঘাটে বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার মা ইলিশ মাছ।

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার জানান, সামনের অভিযানে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নেয়ার কথা ভাবছি। উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে ইলিশ নিধন বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে ইলিছ মাছ ধরায় জেলেদের আটক ও জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে জব্দ করা নিষিদ্ধ মা ইলিশ মাছগুলো এতিমখানায় ও মাদ্রাসার ছাত্রদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে।

মাছ উধাওয়ের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, জব্দকৃত মাছগুলো ইউএনও সাহেবের সামনে হাজির করার পর তিনি নিজেই মাছগুলো এতিমখানা ও দুঃস্থদের মাঝে বিতরন করেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় যে সব জেলেরা সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশকে টাকা দিয়ে নদীতে নেমেছে তারা ধরা পরেনি। আর যারা টাকা দেয়নি তারাই ধরা পড়েছে। এর মধ্যে অনেকেই দালাল ধরে তদবির করে জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। আর যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের জেল হয়েছে। জেলেদের ছাড়ানোর জন্য তদবির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় বিশেষ কিছু ব্যক্তি। এরমধ্যে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকার দলীয় নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর