আমাদের কাউকেই বাবার কবর দেখতে দেওয়া হয়নি সৈয়দ আশরাফ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাবাকে (জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম) হত্যার পর আমাদের কাউকেই তার কবরও দেখতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বাবাকে হত্যার পর তৎকালীন সামরিক সরকার প্রাথমিকভাবে আমাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়। সেই দিবসটিই এখন জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে উচ্চতর শিক্ষার জন্য লন্ডনে পাঠানো হয়। তার এক ঘনিষ্ট আত্মীয় বলেন, কারাগারে বাকি জাতীয় তিন নেতার সঙ্গে বাবার হত্যার খবর পেয়ে তিনি (সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম) দেশে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু তৎকালীন সামরিক সরকার তাকে দেশে আসতে দেয়নি। তিনি আরও বলেন, তবে একই বছরের ৫ নভেম্বর তিনি দেশে ফেরার অনুমতি পান। এর এক সপ্তাহ পর অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষ না করেই তাকে আবারও লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে পরবর্তীতে দেশে ফিরতে তাকে জটিলতার মুখে পড়তে হয়।

জানা গেছে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের এক নম্বর সেলে রাখা হয়। ওই সেলে তার সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ, আসাবুল হক, কোরবান আলী এবং অন্য চার নেতা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে তাজউদ্দিন আহমদ ও এম মনসুর আলীর পরিবার সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার কারও সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পায়নি।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম বলেন, ৪ নভেম্বর খবর শোনার আগ পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি যে, কিভাবে বাবাকে হত্যা করা হয়। তিনি আরও বলেন,আমরা বাবাকে দোয়েল চত্বরে দাফন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। পরে বাবাকে বনানী কবরস্থানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দাফন করা হয়। সেখানেও কবর দেখতে ও বাবার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করতে আমাদের কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের এক আত্মীয় জানান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ কয়েকবার সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম বিষয়টি এড়িয়ে যান। এমনকি তিনি তার স্ত্রীকে দিয়ে টেলিফোনে জানিয়েছিলেন তিনি এখন বাসায় নেই। শাফায়েত বলেন, মোশতাক আহমেদ আমাদের সতর্ক করে জানিয়েছিল, যদি আমার বাবা তাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা না করে, তবে তার জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে।

সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যার পর সরকার তাদের বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করেছিল, যাতে তারা বাড়িটি ছেড়ে দেয়। মোশতাক বাহিনী নজরুল ইসলামের স্ত্রীকে ময়মনসিংহে চলে যেতে চাপ দিতে থাকে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালে কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি তার ভাই সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলাম ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের আগে সৈয়দ আশরাফ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বৃহত্তর ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহকারী প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর সপ্তম সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল গ্রেফতার হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফ দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন এবং ২০০৯ সালে তাকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে তার স্থলাভিষিক্ত হন ওবায়দুল কাদের। বর্তমানে তিনি সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এম মনসুর আলী ও এইচএম কামরুজ্জামান। তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব ঘনিষ্ট ছিলেন। বর্তমানে ওই চার নেতার পরিবারের মোট ৯ জন সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে ও বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর