চাকরিতে ফেরা অনিশ্চিত এসপি বাবুলের

বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার? স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়া বাবুল পুলিশ বাহিনীতে নিয়মিত সদস্য হিসেবে থাকতে চাইছেন না। একাধিক সূত্র বলছে, উচ্চতর ডিগ্রি নিতে বিদেশে চলে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহই বাবুলের। শিগগিরই বাবুল এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে এ-সংক্রান্ত আবেদন করবেন। অন্যদিকে জিজ্ঞাসাবাদে বাবুলের অনেক প্রশ্নের উত্তরই সন্তোষজনক ছিল না। বাবুল বার বারই দাবি করেছিলেন, আবু মুসা তার সোর্স হিসেবে কাজ করলেও শেষ দিকে এসে মুসার সঙ্গে তার সমস্যা হয়েছে। মুসা কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। উপরিউক্ত তথ্যগুলোর বাইরেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, পুলিশ বিভাগে ইতিমধ্যে বাবুল আক্তারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানামুখী বিতর্ক। এই পরিবেশে বাবুল অভিযুক্ত না হলেও তিনি চাকরি অব্যাহত রাখতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি এমনটা বলেছিলেন। এদিকে এসপি বাবুল নজরদারিতে নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেফতার ওয়াসিম ও আনোয়ারের তথ্য অনুযায়ী মিতু হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়ক আবু মুসার তদারকিতেই তারা অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে আবু মুসা কার ইন্ধনে কাজটি করেছিলেন এ বিষয়টি তারা নিশ্চিত নন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মুসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে সাত-আটজন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই নজরদারিতে রয়েছেন। যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে রাজধানীর মেরাদিয়ার শ্বশুরের বাসা থেকে এসপি বাবুলকে তুলে নিয়ে আসার পর থেকেই তাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নানামুখী প্রশ্ন। ১৫ ঘণ্টা তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা হয়। এরই মধ্যে বাবুলকে ঘিরে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হলেও গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি এড়িয়ে চলছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তার সহকর্মী অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই বলছেন, অপরাধী না হলে তাকে ফোনেই ডাকা যেত। আর তা গভীর রাতে কেন?

নজরদারিতে নেই বাবুল : বাবুল আক্তারের অবস্থানস্থলে পুলিশি পাহারা নিয়ে তার পরিবার সন্দেহ প্রকাশ করলেও তিনি নজরদারিতে নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, ‘তিনি আমাদের নজরদারিতে আছেন বলে আমরা কখনো বলিনি।’ জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে, তাকে তাদের মুখোমুখি করা হয়েছিল। তিনি তাদের চেনেন কিনা বা হত্যার রহস্য কী, তা উদ্ঘাটনেই এ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।

চার দিন ধরে একটি কক্ষেই বাবুল : স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর টানা চার দিন ধরে বাসায় অবস্থান করছেন বাবুল আক্তার। এরই মধ্যে তাকে ঘিরে নানা গুঞ্জন চললেও মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন এসপি বাবুল। তার স্বজনরা জানান, কারও সঙ্গেই পারতপক্ষে কথা বলছেন না তিনি। কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি হচ্ছেন না। অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে গেছেন তিনি। বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাবুলকে বলেছি, তোমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে, অনেক ধরনের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। তুমি তোমার অবস্থান পরিষ্কার করছ না কেন। কিন্তু সে কারও সঙ্গে কথা বলতে চায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছুর বাইরে আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর