রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চাপ দিতে হবে মিয়ানমারকে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তারা বলছেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে সহসাই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান হবে না। সমস্যাটি যাতে দ্রুত সমাধান করা যায় তার জন্য বিশ্বের দেশগুলোকে এক হয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপ দিতে হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে ঢাকায় সিপিএ সম্মেলন চলাকালে দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিক্রিয়া পায় ।

আগের দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সিপিসিতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের আইন প্রণেতাদের সামনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরেন। ওই আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সিপিসিতে প্রস্তাব গ্রহণের দাবিও ওঠে।

মিয়ানমারের আরাকানে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে গত আড়াই মাসে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে; আগে বিভিন্ন সময় আসা আরও ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী জীবন কাটাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া ছিল না মিয়ানমারের। এবারের ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও নানা টালবাহানা রয়েছে দেশটির।

সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান ও হাউস অব লর্ডসের সদস্য জর্জ ফোকেস রোহিঙ্গা নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারের সমালোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভূমিকার উচ্চ প্রশংসা করেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ খুবই খুবই উদারতা দেখিয়েছে। তাদের আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্য সেবাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করছে। এজন্য অনেক অর্থও খরচ করতে হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ ও এ দেশের জনগণ অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।”

মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হচ্ছেন বলে মনে করেন ফোকেস।

তিনি বলেন, “বাস্তবতা হল স্বল্প মেয়াদে এই সমস্যার সমাধান খুবই কষ্টসাধ্য। আমি মনে করি না দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে।”

রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্রিটিশ এই আইন প্রণেতা বলেন, “বিশ্বের সব দেশগুলোকে বাংলাদেশের হয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য লড়াই করা উচিৎ।

“প্রত্যেক দেশকে জাতিসংঘে গিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলা উচিৎ। মিয়ানমারের উপর চাপ দিতে হবে।”

দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব মনে করলেও এজন্য জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথসহ অন্যান্যদের সমর্থন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের প্রতি সমব্যথী ক্যামেরুনের পার্লামেন্টের মাইনরিটি চিফ হুইপ বানাদজেম জোসেফ বলেন, “একুশ শতকে এসে আমরা এ ধরনের অমানবিকতা দেখতে চাই না। দেখতে চাই না কোনো দেশের নাগরিক নিজ রাষ্ট্রে থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করবে।”

রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্রুত সমাধানের উপর জোর দেন তিনি, এজন্য মিয়ানমারে ‘সেইফ জোন’ তৈরি করে সেখানে এই জনগোষ্ঠীকে বসবাসের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে তার মত।

কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে ৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন জরুরি বলেও মনে করেন আফ্রিকার দেশটির এই আইনপ্রণেতা।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাদেশিক পরিষদের হুইপ ফিলেমন ফালাগা আমরা চাই রোহিঙ্গারা যেন দ্রুত তার নিজেদের আবাসভূমিতে ফেরত যেতে পারে। মিয়ানমার সরকারের উচিৎ এদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা।”

এজন্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের উপর চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর