হাওরের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা সুযোগ হতে বঞ্চিত

জাকির হোসাইনঃ হাওর এলাকায় এ বছর ভয়াবহ এবং সর্বগ্রাসী ক্ষতিকর অকাল ও আগাম বন্যায় একমাত্র বোরো ফসল- আধা কাঁচা ধান তলিয়ে শধু কৃষকের ধানের গোলা শুণ্য করে ”বাংলারে শস্য ভান্ডার” এ টান পরেনি, সেই সাথে ধানের অতি কম দামে ভেঙ্গে দিয়েছে তাঁদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড, লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে অর্থনৈতিকভাবে নড়বড়ে সংসার, তছনছ করে দিয়েছে সকল স্বপ্ন সাধ, আহলাদ। কারণ, হাওরবাসি এ একমাত্র ধান বিক্রি করেই সারা বছরের নিত্য প্রয়োজণীয দ্রব্যের উপোষ নিবারন, চাহিদা, ঋন, কর্জ-দাদন শোধ করে থাকে। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা,চিকিৎসা, লেখাপড়া, বিয়ে শাদি সব কিছুই নির্ভর করে এ ধান প্রাপ্তির উপর। এক বছরের ফসল হানি মানে জীবনের চলা ছন্দে পতন ঘটানো, স্তবির হয়ে যাওয়া চাওয়া পাওয়ার হিসাব নিকাশ। এক বছরের ফসল ডুবি মানে কয়েক বছরে দঃখ কষ্টের ঘানি টানা, দুর্ভোগ পোহানো। আর ধানের অতি কম দাম তা বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ । মনিতেই হাওরে বছর হয় ছ’মাসে। অর্থাৎ হাওর ছ’মাস শুকনো, ছ’মাস পানির নীচে থাকে । ছ’মাস কাজ আর ছ’মাস বেকার থাকা হচ্ছে হাওরবাসির।

এ বছরের ফসল ডুবিতে কৃষকের সাথে অনিশ্চিত ভবিষতের অনিশ্চয়তায় গড়েছে হাওরের অগনিত শিক্ষা বষ্ণিতদের মধ্যে ভাগ্যবান কৃষক সন্তান- ছাত্র ছাত্রীরা। ভাগ্য তাদের বি-ট্রে করেছে। হাওরের যে ক’জন সচেতন কৃষক নিজে দুঃখ কষ্ট করে, সাধ আহলাদ চাপা দিয়ে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে সন্তানকে লেখাপড়ার চেষ্টা করেন, তাদের ঘারে চেপে বসেছে-সন্তানের লেখা পড়ার খরচ বহনের দুঃসহ চিন্তার মর্ম জ্বালা। নুন আনতে যেখানে পান্থা ফুরানো অবস্থা, সেখানে বাড়ি থেকে দুরে শিক্ষারত সন্তানের শিক্ষা ব্যয়ভার বহন সত্যিই কষ্টকর। স্বপ্ন তাঁদের ভেসে গেছে বানের পানিতে ভেসে যাওয়া ধানের সাথে। হাওর এলাকায় নাই ভাল এবং পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বাধ্য হয়ে অবস্থাপন্ন কৃষক দুরে শহরে সন্তানকে রেখে পড়ানোর চেষ্ট করেন। মাসে মাসে পাঠাতে হয় মাসিক খরচের টাকা। এ টাকার পুরোটায় আসে একমাত্র বোরো ফসল থেকে। ফসল ধ্বংস মানে, নিয়মিত টাকা পাঠানোয় ব্যত্যয় ঘটা, ছেদ ঘটানো শিক্ষার্থীর পড়ার-চলার ছন্দে। হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসলহানিঃ শিক্ষার্থীর অনিশ্চিত ভবিষ্যত বিঘ্ন ছন্দে অনেক ক্ষেত্রেই ছন্দ পতন ঘটে শিক্ষর্থীর জীবনে। যা এ বছর অপ্রত্যাশীতভাবে ঘটতে যাচ্ছে হাওর শিক্ষার্থীদের জীবনে।

Image may contain: one or more people, people standing and outdoor

চাহিদা মতো টাকা সময় মতো না পেয়ে এবছর অনেক হাওর এলাকার শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। বাড়ীর বাহিরে অবস্থানরত এ রকম অনেক শিক্ষার্থী টাকার অভাবে লেখাপড়ার যবনিপাত ঘটিয়ে তল্পি তল্পা ঘুটিয়ে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ব্র্যাক অব স্টাডি অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইহা শিক্ষার্থীদের জীবনে ছন্দ পতন ঘটিয়ে হতাশা ও হতোদ্যোমের সৃষ্টি করবে। এ অবস্থায় একটি প্রজন্ম ঝরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। সব হারানো হাওর কৃষক আগামী দিনগুলো কিভাবে কালাতিপাত করবে সে চিন্তায় অস্থির, সাথে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ তাঁদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময়ব্যাপী উচ্চ শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করাও অনেক হাওরবাসির পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার। অনেক শিক্ষার্থী তাদের এ দুর্দশার কথা আমাকে বলেছেন, তাদের আর্থি, বিকল্প আয়ের উৎস বা তাদের চলার ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেছেন। চোখ মুখে অনিশ্চয়তার ছাপ সুস্পস্ট। টাকার অভাবে অনেককে আমি তাবলীগের ফ্রি-গণ খাবার খেতে যেতে দেখেছি। মুখ খুলে তারা এ অভাবের কথা সবার কাছে বলতেও পারছে না। আবার শিক্ষা বন্ধ করে চলেও যেতে পারছে না। তাদের এ না বলা বোবা-দুঃখের কথা কে শুনবে ?

অথচ হাওরবাসিরও একসময় সুদিন ছিল। শিক্ষা, সংস্কৃতির চর্চায়, ইতিহাস ঐতিহ্যে প্রতিষ্ঠায় হাওরবাসির রয়েছে গেীরবময় ইতিহাস। লোকজ সংস্কৃতি, যা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি, তার উৎস কিন্তু আমাদের এ হাওর ভূমি । হাওর এলাকার সূর্য সন্তান- বাংলার প্রথম র‌্যাংলার আনন্দ মোহন বসু, যাঁর নামে ময়মনসিংহে আনন্দ মোহন কলেজ, বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস রচিয়তা ড. নিহার রঞ্জন রায়, দেবব্রত বিশ্বাস, কিংবা কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ বা হবিগঞ্জের বৃন্দাবন কলেজ এর প্রতিষ্ঠার পিছনে হাওর ব্যক্তিত্বদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। এ সব কলেজে হাওর শিক্ষার্থীর জন্য ভর্তি, আবাসন, বৃত্তি সহ বিভিন্ন সুবিধাদি দাবী করছি। ফি বছর হাওরের ফসলহানি, একান্নবতি পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ায় আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এবং ভাল প্রতিষ্ঠানের অভাবে হাওর শিক্ষার্থীর এগিয়ে যাওয়া বড়ই দুরহ কাজ। লেখাপড়া এখন বাণিজ্যিককরণ, ধনী, টাকাওয়ালাদের বিষয় এবং প্রাইভেট পড়া নির্ভর হয়ে পরেছে। অর্থনৈতিকভাবে পর্যদুস্থ হাওরবাসী অনেক কৃষকের আর্থিক সামর্থ নেই দুর-দেশে রেখে সন্তানকে লেখা পড়া করানোর। সাধ ও সাধ্যের মিল ঘটছে না। উপজাতি বা পাহাড়ি শিক্ষার্থীও জন্য শহরে অবাসন ও বৃত্তির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু হাওরবাসি শিক্ষার্থীও জন্য নেই সেই ব্যবস্থা। কিশোরগঞ্জ মিঠামইনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্টানে আমি পড়াশুনা করিছি। আমার পড়াশুনা করার সময় ছিল না কোন হোষ্টেল ছিল না। লজিং থেকে পড়াশুনা করতে হত। রাত যাপন করতে হত প্রতিষ্টানের ভিতরে। ছিল না কোন সুন্দর পরিবেশ।অনেক কষ্টের পড়াশুনা করেছি।প্রতিষ্টানে ছিল পুরাতন দিনের ভাংঙা একটি ছোট বিল্ডিং ও দুচালা টিনের ঘর।আমার জানামতে সেই প্রতিষ্টানে এখন ও ভাল কিছু পরিবর্তন হয়নি। হাওর মানুষের দূঅবস্হা কবে নিবাস হবে।

দেশে আইলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অগ্নিকান্ড, পাহাড় বা বিল্ডিং ধসে জন ধন সম্পদের ক্ষতিতে সারা দেশের মানুষের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ট সর্বোচ্ছ ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান মর্মাহত। মর্মাহত আমরাও। আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা দিয়ে তাঁদের পার্শ্বে দাঁড়ানো কর্তব্য। মঙ্গা মোকাবেলায় কর্মসংস্থ্ন সৃষ্টির মাধ্যমে অভাব দুরীকরণে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সত্যিই প্রসংশণীয়। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক বিমা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা/ সমাজ উন্নয়ন/ সহায়ক বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রশংসণীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগি জাতীয় ও আন্তজার্তিক প্রতিষ্ঠানের দেীড় যাপ অনেকক্ষেত্রে চোখে পড়ার মতো। ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্যও বটে। কিন্তু হাওরের ফসল ডুবিতে বিপন্ন, সর্বহারা কৃষকের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ন বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করছি। এ ক্ষেত্রে জাতির বিবেক কি মুখে কচ্ ট্যাপ দিয়ে বোবা হয়ে আছে। দেখেও না দেখার ভান করছেই। সবহারা এতিম মেয়েদের মমতাময়ী মা’এর মতো রাজকীয় বিয়ে দিয়ে মানণীয় প্রধানমন্ত্রী মহানুভবতার পরিচয় দিযেছেন। ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, যা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। আমাদের মানণীয় শিক্ষামন্ত্রী আইলা আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা রি-সিডিউল করে তাদের পার্শ্বে সর্বোতো সহায়তা দিয়ে আগলিয়ে রেখেছেন। যা আমাকে বিমোহিত করেছে। কিন্তু অবাক হয়ে ভাবি, হাওরের ফসল হানিতে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশী শিক্ষার্থীর জীবনে ছন্দ পতন ঘটতে যাচ্ছে। তাদের বাহ্যিক কোন ক্ষতি হয় নাই সত্য কিন্তু পড়ার রসদ যোগানের উৎসে টান পরেছে। আমি হিংসা করে এ কথা বলছি না। প্লিজ ! দয়া করে ভুল বুঝবেন না। নিরবতা এক ধরণের অবহেলাও বটে। সারা দেশের সুষম উন্নয়নই সকলের কাম্য। কোন একটি অংশকে অবহেলা ও বঞ্চিত রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উচিতও নয়। আইলা, পাহাড় ধস বা অগ্নিকান্ডের রেশ চোখে দেখা যায়, ধ্বংসের লীলা খেলার অবশেষ থাকে। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরা বেঁচে গেছেন। কিন্তু হাওরের ফসল হানির ফলে প্রত্যেকটা কৃষক এক একটা জিন্দা লাশে পরিণত হয়েছে। না পারা কষ্টের বোঝা, বোবা কান্না তাঁদের বহন করতে হচ্ছে। আগামী দিনের চলার দুঃচিন্তার সাথে সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষৎ তাঁদের গ্রাস করতে বসেছে। বানের গোলা জল, আর চোখের লোনা জলে সব ভেসে গেছে।

হাওরবাসী সবচেয়ে বেশী অবহেলিত ও বঞ্চিত শিক্ষার সুযোগ থেকে। হাওর এলাকায় দুর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা, অনিয়মিত পাঠদান, সুষ্ঠু তদারতী, ভাল শিক্ষকের অভাব, পৃষ্টপোষকতা ও উৎসাহদানের অভাব, শিক্ষার পরিবেশ ও উপকরণের অভাবেও ছাত্র-ছাত্রীদের ‘ফাউন্ডেশন’ দুর্বল করে দিচ্ছে। ফলে, প্রতিযোগিতায় হাওরের সম্ভাবনাময় তারুণ্য তলিয়ে যাচ্ছে, টিকতে পারছে না প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। এই তো কয়েক বছর আগেও অধিকাংশ হাওরের উপজেলায় ছিল না কোন কলেজ। যোগাযোগই হচ্ছে হাওরের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ভাল স্কুল তো কল্পনা-বিলাস, স্কুলই নেই। হাতে গোনা যে ক’টা স্কুল-কলেজ রয়েছে তারও রয়েছে হাজারো সমস্যা। ভাল শিক্ষক নেই, অর্থ নেই। চেয়ার আছে তো টেবিল-বেঞ্চ নেই। নেই পর্যাপ্ত ছাত্রও। হাওরের ‘আফাল’ এর তাফালিং-এ স্কুল কলেজের ভিটে মাটি ভেসে যায় । সংকীর্ণ পরিসরে, ঘরে বেড়া-চাল বিহীন ল্যাংটা স্কুল ঘর আমাদের শুধু পরিহাসই করে। অভাব, পৃষ্টপোষকতা ও প্রপার গাইডেন্সের অভাবে কত শত সম্ভাবনাময় তরুণ ঝরে যায়, তার হিসাব কে রাখে? ভাল শিক্ষকদের জন্য ভাল বেতন কাঠামো ও পরিবেশের অভাবও ভাল শিক্ষাদানের আর একটা অন্তরায়। হাওরের কাদা জল-ঢেউ, প্রতিষ্ঠানের অভাব আর আর্থিক প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে প্রবল প্রতিযোগিতায় বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার দ্ধার প্রান্তে পৌঁছানো হাওর সন্তানদের পক্ষ্যে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। নারী শিক্ষার অবস্থা আরও ভয়াবহ ও করুণ। বর্তমান দুরাবস্থায় প্রতিযোগিতা তো দুরের কথা, টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পরেছে। এ বাঁধা অতিক্রান্তে সরকারি পৃষ্টপোষকতা অপরিহায্য। বেসরকারি সেবা প্রদাণকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে। তবে আশার কথা, বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার হাওরে শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে ।

Image may contain: 1 person, outdoor

“হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন অধিদপ্তর ” কে পাহাড়ি বোর্ডের মতো পরিপুর্ণ জনবল, ক্ষমতা, বাজেট ও পরিকল্পনা দিয়ে হাওরবাসীর বিভিন্নমুখী কর্মকান্ড সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। মিশন ও সুদুর প্রসারি ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাবে এ বোর্ড। শিক্ষা সহায়ক বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দেবে এ বোর্ড। হাওরের প্রত্যেকটি উপজেলায় ১টি ছেলে এবং ১টি মেয়েদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত কারিগরি আবাসিক কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের জন্য এ বোর্ড থেকে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হরে। স্কুল-কলেজের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা নিবে এ বোর্ড। ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সহায়ক কর্মসূচী এতে থাকবে। থাকবে বৃত্তি প্রদান, যোগাযোগের ব্যবস্থাকরণ, টিফিন ও বই খাতা কলম সরবরাহের ব্যবস্থাও। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবছরের আকালের ধাক্কা সামলিয়ে অভাবি শিক্ষার্থীদের বিশেষ মাসোয়ারী বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে চলমান/বেগবান রাখতে হবে। দেশে-বিদেশের দানশীল, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বদের সুসংগঠিত করে একটা স্থায়ী ফান্ড তৈরী করে বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী উপার্জনক্ষম হলে সম পরিমাণ টাকা এ ফান্ডে সে জমা দেবেন। ফলে, চক্রাকারে চলমান এ পদ্ধতিতে একটা স্থায়ী ফান্ড ও জনবল তৈরী হবে। আওয়ামীলীগ কৃষক বান্ধব দল, আর হাওরবাসি অওয়ামীলীগকে পছন্দ করে বেশী। তাই, বর্তমান সরকারের দায়বদ্ধতাও বেশী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হাওর এলাকায় অনেক স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সব স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য বোর্ডের উদ্যোগে নিরাপদ ও নি-খরচায় যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের আনা নেয়ার জন্য হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের অর্থায়নে নৌকার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শহরাঞ্জলে অবস্থানের জন্য হাওরবাসি শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও মাতৃ-স্নেহে ভরপুর হোস্টেল/আবাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থাও গড়ে তুলা যেতে পারে। শিক্ষার বিষয় হতে হবে পেশা ভিত্তিক ও প্রাযোগিক। বেকার তৈরীর শিক্ষা নয়। দারিদ্র দূরীকরণের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে কারিগরী শিক্ষা। তাদের প্রপার শিক্ষা ও গাইট দেন, সব সমস্যার সমাধান হবে, নিজেদের পথ নিজেরাই খুঁজে নিবে।

জনবল, বড় বল। দক্ষ মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। আগামী দিনের কর্ণদ্ধার, তরুণ প্রজন্মের পিছনে, লেখা পড়ায় অর্থ লগ্নি করুন । দেখবেন, তারা আপনাকে কত ভাবে সহযোগিতা দেবে, তা কল্পনাও করতে পারবেন না। সরকার এ বিষয়ে বড় বাজেট বরাদ্দও রেখেছে। শিক্ষায় বিনিযোগে রিটার্ন/ লাভ বেশী। হাওর শিক্ষার্থীর এ দুর্দিনে তাদের পার্শ্বে দাঁড়ানো জন্য কিশোরগন্জ -৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক ভাই ও আমাদের সকলের কর্তব্য। হাওর কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে বিকল্প কর্মসংস্থান-হাওর ইপিজেড, শিল্প পার্ক বা বিসিক শিল্প নগরী স্থাপন করা যেতে পারে। মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ উপযোগি প্রায়োগিক প্রযুক্তি দরকার। পর্যটন খাতে হতে পারে কর্ম সং¯হান । র্অনৈতিক মুক্তি আসলে অনেক সম্যাস্যারই হয় । কিশোরগন্জ -৪ এমপির দৃষ্টি আকর্ষন বলছি ইটনা,মিঠামইন,অষ্টগ্রামে আগামী ফসল বোনার জন্য বীজ, সার, সেচ ও কর্ষন, রোপন, কর্তন যন্ত্র সুবিধা, কৃষি ঋন প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে। হাওরনাসির ক্ষতি এবং ঝুকি কমাতে ফসল বৈচিত্রময়করণ প্রকল্প চালু করতে হবে । খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও আমাদের সকলকে কাজে লাগানোর বিনিযোগ করতেই হবে। হাওর এলাকা হচ্ছে একটি বিশেষাযিত ও অবহেলিত, অনুন্নত এলাকা। এ এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনান্তে পাহাড়ী জনপদের ন্যায় হাওরবাসী চাকুরী প্রার্থীদের জন্যও “বিশেষ কোটা” ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ সুযোগে স্কুল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও চালু করা যেতে পারে। কারণ, হাওর এলাকা পাহাড়ি এলাকা হতে আয়তনে এবং লোক সংখ্যায় অনেক বড়/ বেশি। উন্নয়ন, শিক্ষা ও সুযোগ সুবিধায় অনেক পিছিয়ে আছে হাওর। হাওর এলাকা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হতেও বেশী দুর্গম, বন্ধুর এবং সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত। এখন আর পাহাড়ে পোস্টিং কে পানিশম্যান্ট পোস্টিং বলা হয় না বরং হাওর পোস্টিং কে পানিশম্যান পোস্টিং হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেক উপজেলায় উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে বসবাস ও শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশের উন্নয়নে শুধু মৎস্য ও ধান সম্পদ দিয়ে জাতীয় উন্নয়নে হাওরবাসি য়ে ভূমিকা রাখে, বিনিময়ে হাওর উন্নয়নে তার সহস্র ভাগের এক ভাগও ব্যয় করেই এর চেহারা পাল্টিয়ে দেয়া সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে, শক্তির পরিমাপ হয় ধ্বংসের ক্ষমতা দিয়ে এবং বঞ্চনা ও দুর্বলতা থেকেই সৃষ্টি হয় সকল দ্রোহ ও হিংস্রতার। এবছর হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি/ সহায়তা করা এবং শিক্ষার সকল প্রতিবদ্ধকতা দূর, অধিক হারে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার সম্প্রসারণ, ভর্তি, বৃত্তি ও চাকুরী ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি এবং উদ্বুদ্ধকরণে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ হাওরবাসির প্রাণের দাবী। (“ছবি গুলো নেওয়া হয়েছে কিশোরগঞ্জ -৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক সাহেবের ফেইজবুক থেকে”।)

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর