বিএনপির সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঝুলে গেলেন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার বিএনপি। দলটি মনে করে, দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সহায়ক সরকারের দাবি সামনে নিয়ে আসছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলটি। শিগগিরই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রুপরেখা ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া – গত কয়েক মাসে এমন কথা বার বার বলেছে বিএনপি। কিন্তু, কবে নাগাদ তা আলোর মুখ দেখবে নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেন নি দলটির নেতারা।

তবে আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানের কারণে আপাতত সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হচ্ছে না বলে দলীয় সূ্ত্রে জানা গেছে।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে সহায়ক সরকারের রুপরেখা ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। আগে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চায়। কারণ সংসদে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ যে সংকট সৃষ্টি করেছে, সেই সংকট সমাধানে নির্দলীয় সরকারের পুনর্বহাল করতে হবে। এর আগে সহায়ক সরকারের রুপরেখা ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ দেখছে না বিএনপি।

দলের কেউ কেউ মনে করেন, সরকার যদি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথ আন্দোলনেই এর সমধান করতে হবে। নির্বাচনের ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা যে নামেই হোক না কেন তাতে কোনো আপত্তি থাকবে না দলটির।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘ আমরা যখন উপযুক্ত সময় মনে করবো তখন এই রুপরেখা ঘোষণা করবো।’

তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত সময় বলতে, আজকে কালকে এক মাস, দুই মাস তিন পর কোনোটাই বলা যাবে না। আমরা শুরু থেকে বলে আসছি উপযুক্ত সময়ে রুপরেখা ঘোষণা করবো।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার, সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সময় সেনাবাহিনী মোতায়নসহ বেশ কয়েকটি দাবি আছে বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।

চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সংলাপে অংশ নিয়েও সহায়ক সরকারের অধীনে ভোটের প্রস্তাব দেয় বিএনপি। এছাড়া ভোটের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের আগের সংসদীয় আসন সীমানা ফিরিয়ে আনা, ইভিএম চালু না করার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি। জরুরি অবস্থার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলীয় চেয়ারপারসনসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি করে বিএনপির ২০টি সুপারিশ করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে তীব্র বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কথা বললেও বিএনপি বর্তমানে সহায়ক সরকারের দাবি সামনে নিয়ে আসছে।

২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সময় ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন’কে সহায়তা করতে সহায়ক সরকারের কথা তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সুবিধামত সময়ে এই সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবেন। কিন্তু সেই ঘোষণার প্রায় এক বছর পেরোলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা হাবীবুর রহমান হাবীব বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মূহুর্তে সহায়ক সরকারের ষোষণা করার কোনো পরিকল্পনা নেই। বার বার একই ধরনের ( ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) নির্বাচন করা যাবে না। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। নিরপেক্ষ ব্যক্তি ধারা সরকার গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে পারে, সহায়ক সরকার হতে পারে, নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘সংসদ ভেঙ্গে আগে সমঝোতায় আসতে হবে। তারপর নির্বাচনকালীন সরকারের রুপরেখা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। এজন্য এক মাস দু্ই মাস গবেষণা দরকার নেই।’

সরকারের আচরণের কারণে এখনই বিএনপির রুপরেখা ঘোষণা প্রয়োজন মনে করছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর