কেমন হবে নির্বাচনকালীন সরকার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হলে আগামী ডিসেম্বরই হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের তিন মাস আগে অর্থাৎ আগামী অক্টোবর মাসে গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনকালীন সরকারের অবয়ব এবং রূপরেখা নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী টিম। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন সরকারের একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো খুব শিগগিরই তুলে ধরেবে উন্নয়ন সহযোগী দেশ,জাতিসংঘ এবং বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনকালীন সরকার ২০১৪’র আদলেই হবে। জাতীয় সংসদে বিদ্যমান দলগুলোর মধ্যে থেকে আনুপাতিক হারে সদস্য নিয়ে একটি ছোট মন্ত্রিসভা নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, আমরা একটি নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি।’ ড. রিজভী বলেছেন, ‘নির্বাচন কালীন সরকারের পাঁচটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো: ১. বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, অর্থাৎ বিদাযী সংসদ নেতার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। ২. নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিসভার আকার অত্যন্ত ছোট হবে। ৩. এই সরকার শুধু রুটিন কাজ করবে। ৪. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে। ৫. নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করা।‘ প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা ছোট হলেও, এর সংখ্যা এবং ব্যক্তিদের বাছাই করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে।’ তবে আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রীর সংখ্যা ১৫ জনের বেশি হবে না। মন্ত্রিসভায় কারা থাকবেন এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। যেমন: আওয়ামী লীগের চার সিনিয়র নেতা আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী এবং মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচনকালীন সরকারে যে থাকবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। এদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন আইন ও বিচার মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। জাতীয় পার্টির বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের পরিবর্তন করা হতে পারে বলেই জানা গেছে।

একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এরশাদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার জন্য তিনজনের নাম ইতিমধ্যেই প্রস্তাব করেছেন। এরা হলেন, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কাজী ফিরোজ রশীদ। তবে প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে রাখতে চান বলে জানা গেছে। জাসদ থেকে হাসানুল হক ইনু থাকবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্তহতে পারেন বিভক্ত জাসদের ওপর অংশের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল। ওয়াকার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এর সঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশাও নির্বাচনকালীন সরকারে যুক্ত হতে পারেন। অর্থমন্ত্রী যেহেতু এবার নির্বাচন করবেন না, তাই তাঁর নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা নিশ্চিত।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য বেশ কিছু চমক আনবেন। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে কি হবে? জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বব্যাপী নির্বাচনকালীন সরকারে বিদায়ী সরকারই থাকে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদারতার কারণেই এখানে সকল দলের সমন্বয় ঘটাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, বিএনপি তো সংসদেই নেই। তার পরও দলটি যদি নির্বাচনে আসে। তাহলে সংসদীয় রীতি অনুযায়ী মন্ত্রিসভার ১০ ভাগ অনির্বাচিত সদস্যদের কোটায় তাদের একজনকে নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়তো সম্ভব হবে।’ ড. রিজভী মনে করেন, ‘বিএনপি ২০১৪ ‘র নির্বাচন না করে যে ভুল করেছিল, তার মাশুল তো তাদেরকে দিতেই হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদ প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারাধীন বিষয়।’
সরকারের বিভিন্ন মহল আশা করছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের এই রূপরেখা সকলে পছন্দ করবে। উল্লেখ্য গত জানুয়ারি মাসে জাতীর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিএনপি থেকে সেই সময়ই এর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা চাওয়া হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর