তেঁতুলের শরবতে হবে শান্তির ইফতার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রোজার মাসে চলছে বাহারি খাবারের আয়োজন। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, এই গরম আর লম্বা দিনে ইফতারে চাই পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর খাবার। পাকা তেঁতুল টক-মিষ্টি হয়ে থাকে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যাসিড, চিনি, ভিটামিন বি, এবং ফলে সাধারণত না দেখা গেলেও এতে আছে ক্যালসিয়াম। তেঁতুলে টারটারিক এসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের বায়ু, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। রক্তে কোলস্টেরল কমানোর কাজে আধুনিককালে তেঁতুল ব্যবহার হচ্ছে। জরে ভোগা রোগীর জর কমানোর জন্য এ ফল ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস রোগের প্রকোপ হ্রাস করতেও এটি ব্যবহৃত হয়। পাকা তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে সকালে শুধু পানি খেলে হাত-পায়ের জ্বালা কমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইফতারে ভাজাপোড়া কমিয়ে বেশি বেশি ফল রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ইফতারে তো আর তেঁতুলের আচার বা চাটনি তেমন চলে না, তাই আছে শরবত-

তেঁতুলের ওষুধি ব্যবহার:
*কোলেস্টেরল: আমাদের দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা কমিয়ে এনে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের যত্ন নেয় তেঁতুল। কারণ এতে রয়েছে ফেনোল আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। উপকারী কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বাড়াতেও ভালো কারসাজি জানে এই ফল।

*হজম: পেটের সমস্যা নিরাময়ে বেশ কাজে দেয় তেঁতুল। দুই চা চামচ তেঁতুলের পেস্ট পানিতে গুলিয়ে খেলে পেটে আরাম লাগবে। এর ভক্ষণযোগ্য ফাইবার বর্জ্য তৈরি ও অপসারণে ভূমিকা রাখে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে আয়ুর্বেদের অন্যতম উপকরণ তেঁতুল।

*চায়ের সঙ্গে: জ্বর ও শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসার মতো সমস্যায় ভেষজ চা বেশ উপকারী। এই চা আবার ভালো প্রতিষেধক হয়ে যাবে, যদি এর সঙ্গে তেঁতুলের পাতা মেশানো যায়।

*ভিটামিন: ভিটামিন ‘সি’-এর অভাবে দেহে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তেঁতুল এর বিরুদ্ধে ভালোই লড়াই করতে পারে।

*আলসার: তেঁতুলের শরবতে একটু পুদিনা পাতা মেশালে তা মুখের আলসার দূর করতে দারুণ কাজে দেয়। গরম ও ঝাল উপাদানে যখন আলসারে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, তেঁতুল তখন তাকে শীতল করে।

*রক্ত: রক্তের লোহিত কণিকা গঠনে এবং স্বাস্থ্যকর কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য বেশ উপকারী তেঁতুল। কারণ এটি খনিজ ও ভিটামিনে ঠাসা।

*ফাইবার: টানিন্স, মুসিলেজ ও পেক্টিনের মতো খাবারযোগ্য ফাইবারে পূর্ণ তেঁতুল। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১০০ গ্রাম তেঁতুলের পেস্ট প্রতিদিনের জরুরি ১৩-১৫ শতাংশ ফাইবারের চাহিদা পূরণ করে।

*ক্যান্সার: দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে—এমন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের বিরুদ্ধে কাজ করে তেঁতুলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া থাইরয়েডের রোগে যারা ভুগছে, তাদের খাদ্যতালিকায় তেঁতুল রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

*ডায়াবেটিস: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে এনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পটু তেঁতুল। এ রোগ সামাল দিতে দীর্ঘদিন ধরে হারবাল উপাদান এবং জামের সঙ্গে তেঁতুল অন্যতম মন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

*অ্যান্টিডোট হিসেবে: অ্যালকোহল বা বিষক্রিয়ায় আক্রান্তদের তেঁতুলের শরবত দিলে এর প্রভাব খুব দ্রুত কেটে যায়। এ ক্ষেত্রে তেঁতুল পুরোপুরি অ্যান্টিডোট হিসেবে কাজ করে।

*স্নায়ুতন্ত্রের জন্য: এতে আছে অতি জরুরি ভিটামিন ‘বি কমপ্লেক্স’। এই পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থিয়ামিন। স্নায়ুতন্ত্রের সুষ্ঠু কর্মকাণ্ডের জন্য থিয়ামিনের দরকার, যা প্রচুর পরিমাণে তেঁতুলে রয়েছে।

যেভাবে তেরি করবেন তেঁতুলের শরবত:
উপকরণ: এক গ্লাস পানীয় তৈরি করতে দরকার হবে— ২ টেবিল-চামচ তেঁতুলের ক্বাথ। চিনি স্বাদ অনুযায়ী। আধা চা-চামচ জিরাগুঁড়া। মরিচ স্বাদ অনুযায়ী। বিট লবণ ও লবণ স্বাদ মতো। লেবুর টুকরা। বরফের টুকরা।

মসলা তৈরি: প্যানে প্রথমে শুকনা মরিচ টেলে নিন। লাল লাল থাকতেই নামিয়ে নিন। গোল মরিচ ও জিরাও টেলে নিন। জিরা খুব অল্প টালবেন। বেশি ভাজলে পুড়ে তিতা হয়ে যাবে। রং পরিবর্তিত হলেই নামিয়ে নেবেন। গরম থাকতেই ভালো করে মিহিগুঁড়া করে মুখ বন্ধ বয়ামে রাখুন।

পদ্ধতি: তেঁতুল পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা বা সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে তেঁতুলে ক্বাথ বের করে নিন। তেঁতুলের দানা ও ময়লা ছেঁকে ফেলুন। তবে হাত দিয়ে ছাকনি দিয়ে নয়। এরসঙ্গে পরিমাণ মতো পানি ও সব উপকরণ দিয়ে মিশিয়ে স্বাদ অনুযায়ী লবণ, চিনি ও গুঁড়ামরিচ দিন। বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। বেশি পুরানো তেঁতুল নিলে রং একটু কালচে হবে।

পরিবেশন: বরফকুচি ও লেবুর টুকরা অথবা পুদিনাপাতা দিয়ে পরিবেশন করুন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা টক-মিষ্টি-ঝাল শরবত।

সতর্কতা: অতিরিক্ত তেঁতুল রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং রক্ত পাতলা করে। দেখবেন, কোথাও কেটে গেলে রক্ত বন্ধ হতে চায় না। তাই বেশি মাত্রায় তেঁতুল খেতে মানা করেন বিশেষজ্ঞরা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর