একই জমিতে বার বার ফসল চাষে কমছে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ একই জমিতে বার বার ফসল চাষে কমছে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা। পরিস্থিতির চাপে প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহারে ক্রমাগতভাবে বিস্তৃত হচ্ছে মাটির অম্লত্ব বা এসিডিটি, বাড়ছে চাষির উৎপাদন খরচ। এই সঙ্গে দিনে দিনে কমছে চাষের জমি। অম্লত্ব, লবনাক্ততা, পাহাড়ি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার ও শিল্পায়নের হুমকির মুখে দেশের কৃষি। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার শতভাগ, দিনাজপুরের মোট আয়তনের শতকরা ৫২ ভাগ, টাঙ্গাইল ও ভাওয়ালের গড়সহ বিস্তৃর্ণ এলাকার জমি অম্লত্বে গ্রাস করেছে। অথচ সমন্বিত ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপানার অভাবে ভয়াবহ এই সংকট নিরসনের কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট রংপুর জেলা কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার তাহেরাতুল হোসনা জানান, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, জেলা কার্যালয়, রংপুর এর অধীনে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা এই ০৫ টি জেলা অর্ন্তভূক্ত। এই জেলাগুলো তিস্তা পললভূমি, সক্রিয় তিস্তা পললভূমি ও বরেন্দ্রভূমি এই তিনটি ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত।

বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক জনবহুল দেশ। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করতে কৃষকেরা একই জমিতে বছরে দুটি, তিনটি এমনকি চারটি ফসলও চাষ করছে। পক্ষান্তরে, কৃষকেরা সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করছে না এবং জৈব সারের ব্যবহারও অপ্রতুল। ফলে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহারের মাধ্যমে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাটির অম্লত্ব বা এসিডিটি। এই অঞ্চলের প্রায় ৯, ৫০,৩৭৪ হেক্টর জমির মাটি অত্যধিক অম্ল (পিএইচ মান ৪.৫ এর নিচে), অধিক অম্ল (পি এইচ মান ৪.৫-৫.৫) এবং মৃদু অম্ল (পিএইচ মান ৫.৬-৬.৫) এই তিন ধরনের প্রতিক্রিয়া শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত। এসিডিক মাটি বা অম্লীয় মাটিতে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও মলিবডেনাম এর সহজলভ্যতা দিন দিন হ্রাস পায় এবং এ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রনের পরিমান দিন দিন বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসলের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়, ফলন হ্রাস পায়।

গবেষণা অনুযায়ী তীব্র অম্লীয় মাটিতে সুপারিশকৃত মাত্রায় ডলোচুন ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। ডলোচুনে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা অম্লীয় মাটির অম্লত্ব হ্রাস করতে সাহায্য করে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের এসএসও কৃষিবিদ মো. আব্দুল হালিম জানান, দিনাজপুর জেলার মোট ৩,৪৩,৮৭৯ হেক্টরের মধ্যে অম্লতাযুক্ত মাটির আয়তন প্রায় ১,৭৮,৮১৭ হেক্টর। শতকরা হিসেবে ৫২ ভাগ। অম্লতা সংশোষনের জন্য প্রতি শতাংশ জমিতে ৩-৪ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করতে হয়।

কোনো জমিতে একবার পূর্ণমাত্রায় চুন প্রয়োগ করলে ওই জমিতে তিন বছর আর চুন ব্যবহারের দরকার হয়না। ৪র্থ বছরে আবার চুন প্রয়োগ করতে হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি ডলোচুনের বাজারদর ৮ থেকে ১০ টাকা। টাঙ্গাইল জেলা কার্যায়ের এসএসও কৃষিবিদ উৎপল কুমার বলেন, টাঙ্গাইল জেলার মোট ১,০৭, ৩৬৪ হেক্টর জমির মধ্যে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৭,৫৫০ হেক্টর। এর মধ্যে ৬৫,২৫৯ হেক্টর জমিতে বেশি মাত্রায় এবং ১৮,৬৫৩ হেক্টর মাটিতে মাঝারি মাত্রার অম্লত্বযুক্ত।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে ওই অঞ্চলের কোথাও কোথাও প্রায় দিগুন জায়গায় বিস্তৃত হয়েছে এই অম্লতা। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় অম্লতা বেড়ে ২০১৫ সালে হয়েছে ৩১ হাজার ৬০৪ হেক্টর। ১৯৮৮ এখানকার ১৫ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে অম্লতা ছিল। একই ভাবে ওই সময়ে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্দা উপজেলার অম্লতা বেড়ে হয়েছে ১৯ হাজার ১৪২ হেক্টর জমিতে। ১৯৮৮ সালে এখানে ১৭ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে অম্লতা ছিল।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর