রাজশাহীর ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিপদের বন্ধু হিসেবে চান ভোটাররা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজশাহী সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা ভোটগ্রহণের। আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময় কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে নগরীর ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা বলছেন, এবার তারা দেখে-শুনে-বুঝেই কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। বিপদের বন্ধু হিসেবে যাকে পাওয়া যাবে, তাকেই ভোট দেবেন তারা। নগরীর ডাঁশপুকুর ও খোজাপুরসহ আশপাশের কয়েকটি মহল্লা নিয়ে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৬৯০ জন।

নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখানেই সর্বোচ্চ নয়জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন-শাহজাহান আলী (ঠেলাগাড়ি), গিয়াস উদ্দিন (ঘুড়ি), আবদুল মালেক (টিফিন ক্যারিয়ার), আলমগীর হোসেন আলো (লাটিম), শফিউল আলম টিয়া (রেডিও), হাসান আলী (কাঁটা চামচ), মাসুদ রানা (মিষ্টি কুমড়া), জাহের হোসেন (ঝুড়ি) ও মো. সালাহউদ্দিন (ট্রাক্টর)।

এদের মধ্যে শাহজাহান আলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি মামলা। আরও চার মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। ভোটারদের অভিযোগ, মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি এলাকায় সময় দিতে পারেন না। তাই উন্নয়নে ভাটা পড়েছে। বিপদে-আপদেও কাউন্সিলরকে পাশে পাওয়া যায় না। তাই এবার তারা এমন কাউকে নির্বাচিত করতে চান, যিনি এলাকায় থাকবেন।

অন্য প্রার্থীদের মধ্যে আলমগীর হোসেন আলোর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চোরাচালান ও হত্যাসহ মামলা রয়েছে মোট তিনটি। এছাড়া গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১০টি। এসব মামলার বেশিরভাগই বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে। হাসানের নামেও মামলা আছে তিনটি। প্রার্থী মাসুদ তিনটি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। তবে আদালতে বিচারাধীন আরও তিনটি মামলা।

কাউন্সিলর শাহজাহান আলী বলেন, আমার ওয়ার্ডটি নগরীর শেষপ্রান্তে। নাগরিক দুর্ভোগ রয়েছে। জলাবদ্ধতা, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দ না থাকার কারণে উন্নয়ন হয়নি। তবে আগামীতে নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব।

প্রার্থী জাহের হোসেন বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর ওয়ার্ডে উন্নয়ন করতে পারেননি। নাগরিক দুর্ভোগের কারণে তার প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। আমি দীর্ঘ সময় থেকে আমি মানুষের সুখে-দুঃখে আছি। এলাকার মানুষ প্রয়োজন হলেই আমাকে ডাকেন। তারা আমাকে ভালোবাসেন। আর এ কারণেই সাধারণ ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করে জনসেবা করার সুযোগ দেবেন বলে বিশ্বাস করি।

এ ওয়ার্ডের আরেক শক্তিশালী প্রার্থী জাহের হোসেন সুজা বলেন, এ ওয়ার্ডটি অবহেলিত। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ময়লা আবর্জনার কারণে সব সময় অপরিচ্ছন্ন থাকে। রয়েছে মাদকদ্রব্যের ছড়াছড়ি। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকরা সার্বক্ষণিক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন। মাদকদ্রব্য নির্মূল এবং সব ধরনের নাগরিক ভোগান্তি দূর করাই আমার নির্বাচনী অঙ্গিকার। আশা করছি, অবহেলিত এ ওয়ার্ডটির উন্নয়নের জন্য ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করে সেবা করার সুযোগ দেবেন।

এদিকে নগরীর মির্জাপুর, বিনোদপুর, চৌদ্দপাই, মাসকাটাদিঘী, বুদপাড়াসহ মেহেরচন্ডীর কিছু এলাকা নিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটি গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৬২ জন। ওয়ার্ডটিতে গত পাঁচ বছরে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সামাদ জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ১১টি মামলা। ওয়ার্ডবাসীর অভিযোগ, কাজের জন্য তাকে পাওয়া যায় না। মামলা-মোকদ্দমা আর পুলিশের ভয়ে পালিয়েই বেড়ান তিনি।

এ ওয়ার্ডে রয়েছে মাদকের ভয়াবহতা, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট-ড্রেন। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ মহল্লার মানুষ। রাস্তার লাইট জ্বলে না মাসের পর মাস। মির্জাপুর এলাকার স্কুলশিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের ভেতর বাস করেও নাগরিক সুবিধার কিছুই পাই না। কাউন্সিলরকেও দেখতে পাই না। এবার দেখে-শুনে যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট, যেন তিনি বিপদের বন্ধু হয়ে পাশে থাকেন।

অবহেলিত এই ওয়ার্ডে এবারের নির্বাচনে বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সামাদ ‘ঘুড়ি’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনি ছাড়াও এ ওয়ার্ডে তিনজন প্রার্থী ভোটের মাঠে আছেন। ভোটের মাঠে আছেন সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পিন্টুও। তার প্রতীক ‘টিফিন ক্যারিয়ার’। এছাড়া অন্য দুই প্রার্থী হলেন মো. আলাউদ্দীন (ঠেলাগাড়ি) ও মইনুল হক (ট্রাক্টর)। আলাউদ্দিন মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনে এবার তিনি শক্তিশালী অবস্থানে আছেন।

বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সামাদ বলেন, জামায়াতের রাজনীতির কারণেই নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এ কারণে এলাকায় কাজ করতে পারিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই থেকে তিন বছর জেলে কাটিয়েছি। ইসলামি আদর্শের রাজনীতি করার কারণেই আমাকে এসব মামলায় হয়রানি করা হয়েছে। আমি যদি এলাকায় থাকতেই না পারি তাহলে উন্নয়ন করব কীভাবে?

কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় ওয়ার্ডের যে উন্নয়ন করেছেন গত পাঁচ বছরে তার কিছুই হয়নি বলে দাবি করেছেন প্রার্থী শহিদুল ইসলাম পিন্টু। তিনি বলেন, আমার সময়ে ওয়ার্ডটির যে সুন্দর পরিবেশ ছিল তা বিঘিœত হয়েছে। আশা করছি, অতীত উন্নয়নের কথা ভেবে ভোটাররা এবার আমাকে নির্বাচিত করবেন।

মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দীন বলেন, এলাকাবাসী কাউন্সিলরকে কোনো দিনই কাছে পাননি। আমি জনগণের পাশে ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। ওয়ার্ডটিকে নিয়ে আমার সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা আছে। আমি কাউন্সিলর এবং এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হলে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর