ইসলামি সভ্যতার বাতিঘর ব্রুনাই

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দরসেরি এশিয়া অঞ্চল থেকে ২০১৯ সালের ইসলামি সভ্যতার রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। বন্দরসেরি প্রকৌশল ও পুরাতত্ত্ব মেলা, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ইসলামী মেলা এবং কুদস অঙ্কন ও ফটোগ্রাফি মেলার মতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কর্মকারে মাধ্যমে এটা উদযাপন করা হবে।

ওমানের রাজধানী মাসকাটে নবম ইসলামি সম্মেলনে সাংস্কৃতিকমন্ত্রীদের এক সভায় এ প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়। ইসলামি সভ্যতার রাজধানী ঘোষণার উদ্দেশ্য, প্রাচীনতম মালয় রাষ্ট্র ব্রুনাই ও ১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে এ দেশের শাসক সুলতান মুহাম্মাদ শাহের ইসলাম গ্রহণের সময় থেকে ইসলামের ভূমিকা সম্পর্কে বিশ্বকে জানানো।

বন্দরসেরি রাজধানী ও দেশের সর্ববৃহৎ শহর। দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মালয় মুসলিম। কিছু আছে ইয়ামেনের হাজরামাওত বংশোদ্ভূত। সবাই দেশের সরকারি ভাষা মালয়ে কথা বলে। প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানিতে সমৃদ্ধ ব্রুনাই কাপড়, কাঠ ও ফার্নিচার উৎপাদন করে থাকে।

শহরটির গোড়াপত্তন থেকেই সেখানে ইসলাম আলোর বাতি জ্বালিয়েই চলছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত আলেম-ওলামাদের তাদের সমাজ গ্রহণ করে নেয়। পঞ্চম সুলতান বালকিয়ার (১৫২৪-১৫৮২) শাসনামলে ব্রুনাইয়ের নিয়ন্ত্রণ বোর্নিও পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

সুলতান মুহাম্মাদের (১৫৮২-১৫৮৯) শাসনামলে ‘ব্রুনাই আইন’ নামে পরিচিত আইন প্রণয়নের পরই প্রশাসন রাষ্ট্র, সামাজিক রীতিনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সবকিছুতে ইসলামি আইন বাস্তবায়ন শুরু করে।

‘কোটাবাটু’ থেকে ‘কামপুং ইয়ার’ জলজ অঞ্চলে শহরের মূলকেন্দ্র স্থানান্তরিত হওয়ায় কামপুং ইয়ারই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকারে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

১৯০৬ সালে দেশের কেন্দ্রবিন্দু কামপুং ইয়ার থেকে স্থলভূমিতে স্থানান্তরিত হয়। শুরু হয় আধুনিক সব উন্নয়ন-অগ্রগতির সূচনা। ১৯৫২ সালে তৃতীয় সুলতান উমর আলী সাইফুদ্দিন ব্রুনাই টাউনের আধুনিকীকরণ শুরু করেন। ভূষিত হন আধুনিক ব্রুনাই টাউন-প্রকৌশলী।

সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্রুনাই টাউন এগিয়ে চলতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে নির্মিত হতে থাকে সুলতান উমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ, ধর্মবিষয়ক বিভাগ ও মাদ্রাসার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় অবকাঠামো।

ব্রুনাই ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। জাপানের দখলদারিত্বের শিকার তারা হয়েছিল। ব্রুনাই নতুন সংবিধান ঘোষণা করে। সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ব্রিটেন থেকে ১৯৮৪ সালে তারা স্বাধীনতা লাভ করে। তারপর থেকে জিডিপি ও মানবউন্নয়ন সূচকে তারা প্রভূত অগ্রগতি অর্জন করে।

স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়, সুলতান হাজী হাসান বালকিয়াই ব্রুনাই-দারুস সালামের ইসলামি আইন বাস্তবায়নকারী। ১৯৮৪ সালে সুলতান ঘোষণা দেন, স্বাধীনতার ঘোষণা অনুসারে ব্রুনাই দারুস সালাম সর্বদাই সার্বভৌম স্বাধীন মালয় ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে। সুলতান আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত-অনুসারে দেশের ইসলামি শিক্ষা-দীক্ষায় সমর্থন জুগিয়ে যাবেন।

প্রশাসন দেশে ইসলামি আবহ শক্তিশালী করার জন্য ১৯৭২ সালে সিরি বেগওয়ানে শিক্ষক একাডেমি, ১৯৯৩ সালে হিফজুল কোরআন ইনস্টিটিউট, ১৯৯৯ সালে সুলতান উমর আলী সাইফুদ্দিন ইসলামিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউট, ১৯৯০ সালে মদ নিষিদ্ধকরণ, ১৯৯১ সালে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, ১৯৯২ সালে ব্রুনাই দারুস সালামের কোরআন প্রকল্প এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে ইসলামি আইন বাস্তবায়ন করেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর