প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী একুশে বইমেলার যাত্রা শুরু

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী একুশের বইমেলার যাত্রা শুরু হলো। শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বইমেলা কেবল বই কেনা-বেচার জন্য নয়; বইমেলা বাঙালির ‘প্রাণের মেলা’। আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় বাংলা একাডেমিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশির।

গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চারটি বিভাগে নির্বাচিত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয়। চার লেখকের হাতে বাংলা একাডেমি পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার পদক পেয়েছেন কবিতায় কাজী রোজী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যে আফসান চৌধুরী, কথাসাহিত্যে মোহিত কামাল ও প্রবন্ধ-গবেষণা সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।

পুরস্কার প্রধান শেষে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই আজকে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন,‘ যারা গবেষণা করেন লিখেন, তারা আমাদের সমাজকে সমৃদ্ধি করেন। তাদের তো কোনো মূল্যে বিচার করা যায় না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব সামনে সম্মানি ২ লাখ টাকা থেকে বাড়াতে। এ বছর চারজন পুরস্কার পেয়েছেন। আগামী বছর আরও দশজনকে দেয়া হবে।’

গ্রন্থমেলার উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দা বিভাগের গোপন নথি নিয়ে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খণ্ডের বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর তিনি ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বই নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে তিনি জানান, ‘পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি) প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট পাঠাত। এরই ভিত্তিতে বিনা বিচারে আটক, মামলাসহ নানামুখী নির্যাতন চলত। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নামে স্পেশাল ব্রাঞ্চে খোলা ব্যক্তিগত ফাইলে সংরক্ষিত ডকুমেন্ট সংকলন করা হয়েছে। আমি মনে করি এটা আমাদের ইতিহাসকে জানার জন্য এক অমূল্য সম্পদ। এই বইটি আমাদের আরও সমৃদ্ধ করবে।’ এ সময় তিনি বইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন,‘ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা ক্ষমতায় থাকতেই এটা অর্জন করি। ইতিমধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। বইমেলা শুধু বই কেনাবেচা নয়, বইমেলা হচ্ছে আমাদের প্রাণের মেলা। যদিও আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন এই মেলায় আসতাম। ঘুরে বেড়াতাম সারাদিন। এখন তো আর সেই সুযোগ নেই। আর আসতে গেলে অন্যেরও অসুবিধা হয়। আমার নিরাপত্তায় যে অন্যের অসুবিধা হবে, সেটা বিবেচনা করেও অনেক সময় আসা হয় না। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, সবসময় মনটা পড়ে থাকে এই বইমেলায়।’ এরপর প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। তার সঙ্গে ছিলেন শিল্প-সাহিত্যের গুণী ব্যক্তিত্বরা।

এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘বিজয়: বায়ান্ন থেকে একাত্তর (নবপর্যায়)’। একই সঙ্গে ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের যাত্রাও শুরু হয় এই মেলা থেকে।

প্রতিবছরের মতো একুশে গ্রন্থমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইয়ের দোকানগুলো। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর