যে কারণে উজ্জীবিত তৃণমূল বিএনপি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে দলটির বিগত এক মাসব্যাপী ৬২ সাংগঠনিক জেলার নেতাদের ধারাবাহিক মতবিনিময় সভায় তৃণমূলের নেতারা বিভিন্ন অভিমত তুলে ধরেছেন। এ মতবিনিময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ওপরও জোর দেন নেতারা। পাশাপাশি দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তৃণমূল নেতাদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দেয়া হয়।

এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-নিয়মিত সভার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা, নিষ্ক্রিয়দের তালিকা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়ন থেকে থানা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের কমিটি গঠন। এসব নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন তৃণমূল নেতারা।

উল্লিখিত সব তথ্যগুলো জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতারা। তারা আরও জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর ঝিমিয়ে পড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই মূলত তৃণমূলের সঙ্গে দলটির নীতিনির্ধারকদের এই ধারাবাহিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮২ সাংগঠনিক জেলা শাখার মধ্যে ৬২ জেলার সভা শেষ হয়েছে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যে মহানগর ছাড়া বাকি সবগুলো সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে বৈঠক শেষ হবে। এরপর ঢাকাসহ সব মহানগর কমিটির নেতাদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ পর্যন্ত ৬২ সাংগঠনিক জেলা শাখার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। সেখানে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, এটি একটি ভালো সাংগঠনিক উদ্যোগ। দলকে ঢেলে সাজানোর জন্য তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। একটা ‘কারচুপির’ নির্বাচনের পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যে একটা ঝিমিয়ে পড়া ভাব ছিল-এই আলোচনার ফলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা উদ্দীপনা শুরু হয়েছে। যা দলের সবাই ভালো দৃষ্টিতে দেখছেন। দলের জন্য খুবই ইতিবাচক।

গত ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এসব মতবিনিময়ের বিষয়টি অনেকটা গোপনীয়তার মধ্যেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। এমনকি এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলতে জেলা নেতাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফলে জেলা নেতারা নাম প্রকাশ করে এই মতবিনিময়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বৈঠকে থাকছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে স্কাইপির মাধ্যমে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠকে প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ‘সুপার ফাইভ’ অথবা ‘সুপার সেভেন’ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা অংশ নেন।

সংশ্লিষ্ট জেলার সাংগঠনিক অবস্থা জানার পাশাপাশি এ মুহূর্তে করণীয় কী, জোট ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা না রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের মতামত নেন দলের হাইকমান্ড। বৈঠকে নেতাকর্মীদের হতাশা কাটিয়ে দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, জামায়াতকে না রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছে প্রায় সবাই। বৈঠকে জেলা নেতাদের জোট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, সুনির্দিষ্টভাবে মতামত নেয়া হচ্ছে। সেখানে সব নেতাই বলেছেন জোট তো নামে মাত্র। সব তো বিএনপি নেতাকর্মীরাই করছেন।

স্থানীয়ভাবে জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির এখন কোন যোগাযোগই নেই। জামায়াত নেতারা সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলছে বলেও অনেক জেলার নেতারা অভিযোগ করেছেন। এছাড়া সব নেতা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে আরও জোরদার করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার জন্যও বলেছেন।

সূত্র জানায়, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় প্রায় প্রতিদিনই অন্তত দুটি অথবা তিনটি জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিএনপি নীতিনির্ধারকরা।

সর্বশেষ মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, নরসিংদী, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ ৬২টি জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষ হয়েছে। প্রথমে একে একে জেলা নেতাদের সবার বক্তব্য শোনেন বিএনপি হাইকমান্ড। তাদের বক্তব্য শেষে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নানা দিকনির্দেশনা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে বলেন, সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে পুনর্গঠন হচ্ছে। বিষয়টি দলের হাইকমান্ড তত্ত্বাবধায়ন করছেন। বৈঠকে খোলামেলা আলোচনা হয়। কোথায় কি সমস্যা তা শুনে নীতিনির্ধারকরা নোট করেন। পরে সিদ্ধান্ত দেন।

কোন এলাকায় যদি নিজেদের দ্বন্দ্ব চরমে থাকে তাহলে কোন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে সমন্বয় করার নির্দেশ দেয়া হয়। আর যেখানে সমস্যা নেই তাদের ধন্যবাদ দেন। আবার যেসব জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেখানে সবাই মিলেমিশে নতুন কমিটির জন্য একটি কাঠামো দাঁড় করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আর যদি এসব নির্দেশ জেলার নেতারা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে হস্তক্ষেপ করা হবে বলেও তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়। তবে খুব জরুরি ছাড়া এ ব্যাপারে হাইকমান্ড হস্তক্ষেপ করতে চান না বলেও জেলা নেতাদের জানানো হয়।

উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার সভাপতি বলেন, বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। যারা আসে তারা উজ্জীবিত। যারা দলে সুবিধাবাদী ছিল তারা আস্তে আস্তে কেটে পড়বে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ওই নেতা আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়ে একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত সভার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেয়ে এলাকায় এসে কাজ শুরু করেছি। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। আশা করি স্থানীয় প্রশাসন আমাদের কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা করবে না। ঠিকভাবে কাজ করতে পারলে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো সময়ের ব্যাপার বলেও মনে করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর