যাদের চাতাল শ্রমিক বলা হয়

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। যেদিকে চোখ যায় কেবল ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত। ব্যাপক ধান উৎপাদন হওয়ায় এদেশে চালকলও গড়ে উঠেছে অনেক। আর এসব চালকলে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রচুর শ্রমিক, যাদের চাতাল শ্রমিক বলা হয়। এদের বেশির ভাগই নারী। ধানের রাজ্য নওগাঁ জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় ও চালকল মালিকদের তথ্যমতে, এ জেলায় প্রতিবছর প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।

জেলায় ১ হাজার ২৮০টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি অটোরাইস মিল এবং বাকিগুলো হাসকিং মিল। চালকলগুলোতে নারী শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম হওয়ায় চালকল মালিকদের আগ্রহও থাকে বেশি। এসব শ্রমিকের মাসিক নির্দিষ্ট কোনো বেতন থাকে না। কাজের ওপর মজুরি।

সূত্র মতে, ঈশ্বরদীতে বর্তমানে ছোট-বড় মিলে ৬০০টি চাতাল রয়েছে। এখানে প্রায় ১০ হাজার ৮০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে ২৫ ভাগ রয়েছেন নারীশ্রমিক। যেখানে এমনিতেই মজুরি কম। সেখানে তারা ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় বেশি পরিশ্রম করেন। কিন্তু মজুরি পান পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক। জীবিকার তাগিদে এই বৈষম্য মেনে নিয়েছেন চাতালের নারীশ্রমিকরা।

এদিকে চালকলে নারী শ্রমিকরা অধিকাংশ স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা। তাই নিরুপায় হয়ে চালকলে তারা কাজ করে থাকেন। তবে আলো-বাতাসহীন ছোট খুপড়ি ঘরে গরমে কষ্ট করে থাকেন এসব শ্রমিক। ফলে অধিকাংশ শ্রমিক অসুস্থতায় ভোগেন। খাবারও স্বাস্থ্যসম্মত না। চাতালশ্রমিকদের ‘এক চাতাল’ বা ‘এক দাগ’ হিসেবে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এক চাতালে ২০০ থেকে ৩০০ মণ ধান সিদ্ধ করা হয়। এক চাতাল ধান সিদ্ধ, চাল উৎপাদন এবং বিপণন পর্যন্ত সময় লাগে দুই-তিন দিন। আবহাওয়া খারাপ থাকলে পাঁচ-সাত দিন লেগে যায়। চাতালে পুরুষ শ্রমিকদের এক দাগ (দুই দিন) হিসাবে মজুরি দেওয়া হয় (দুই দিন হিসাবে) ৮০০ টাকা। এ হলো পুরুষ শ্রমিকের কথা।

কিন্তু এক্ষেত্রে নারীশ্রমিকদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না। এক দাগ হিসাবে তারা জনপ্রতি ১৪ কেজি খুদ ও ১৪ কেজি ধানের গুঁড়া পারিশ্রমিক হিসেবে পেয়ে থাকেন। বাজারদর হিসেবে ওই পরিমাণ খুদ ও গুঁড়ার মূল্য ৪৪০ টাকা। আজকের এই বিশ্বে, সভ্যতার এই পর্যায় এসে এমন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন অনাচারের শিকার শ্রমিকরা; তার চেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার আজ নারী শ্রমিকরা; নারী চাতাল শ্রমিকরা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর