গল্পটা উম্মুল কোরার মিশরীয় এক প্রফেসরের

বাঙালী কন্ঠঃ  মিশরে অবস্থানকালে তিনি একদিন ট্যাক্সিতে চড়ে দূরে কোথাও যাচ্ছিলেন। কথার ফাঁকে ড্রাইভার জানালেন তিনি আগে খ্রিস্টান ছিলেন, এখন আলহামদুলিল্লাহ মুসলিম।

এ কথা শুনে প্রফেসর সাহেবের কৌতূহল হল ড্রাইভারের মুসলিম হওয়ার পেছনের গল্পটা শুনার। তিনি জানতে চাইলেন, কিভাবে তিনি ইসলামে দীক্ষিত হলেন?

ড্রাইভার জানালেন তিনি তার স্ত্রীর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছেন।

প্রফেসর ভাবলেন, হয়তো কোন মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করার শর্তে তিনি নিজেও মুসলিম হয়েছেন। প্রফেসর বললেন, তোমার স্ত্রী কি মুসলিমা ছিলেন?

ড্রাইভার জবাব দিলেন, না।

তারপর বলতে শুরু করলেন, ‘আমারা দুজনই নাসারা (খ্রিস্টান) ছিলাম। আমার স্ত্রী আরবি সাহিত্যের একজন শিক্ষিকা। তার কাজের সুবিধার্থে আমরা কায়রো শহরে এক জায়গায় একটি ভাড়া বাসায় উঠি। সেই বাসার একেবারে পাশেই ছিল মুসলিমদের ইবাদাতের জন্য নির্মিত একটি মসজিদ। পাঁচ ওয়াক্ত আযান ও সালাতে তিলাওয়াতের আওয়াজ খুব স্পষ্টই আমরা শুনতে পেতাম।’

দীর্ঘ দুই বছর সেখানে অবস্থানের পর আমাকে একদিন আমার স্ত্রী বললেন, একটি বিষয় খেয়াল করেছো কী?

আমি বললাম কী?

সে বলল, মুসলিমদের প্রার্থনায় তারা একটি বিশেষ অংশ প্রতিদিনই আবৃত্তি করে। সন্ধ্যা ও রাতের ইবাদাতকালীন সময়ে একবারের জন্যও তারা এই বিশেষ অংশটি বলতে ভুল করে না। তাদের সেই প্রার্থনার প্রতিটি বাক্য আমার শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে। তবে সেই বাক্যগুলোর একটি কথা আমাকে খুবই অবাক করেছে!

আমি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করললাম, অবাক হওয়ার মত কী এমন পেলে সেই প্রার্থনায়?

সে আমাকে বলল, ‘ইহদিনা বা আমাদের সঠিক পথের দিশা দাও’ – এই প্রার্থনাটা যখন আমি তাদের প্রতিনিয়ত বলতে শুনলাম তখন আমি আমাদের প্রতিবেশী এক মুসলিম নারীকে জিজ্ঞেস করলাম এই ব্যাপারে।

সে আমাকে জানালো, তারা প্রতিদিন কমপক্ষে সতেরো বার এই একই দাবি তাদের প্রভুর কাছে করে। আর অতিরিক্ত প্রার্থনায় দণ্ডায়মান হলেও সেই বিশেষ অংশের আবৃত্তি ছাড়া তাদের ইবাদাত শুদ্ধ হয় না বলেও শুনলাম।’

আমি তাকে বললাম, ‘তো তাতে অবাক হওয়ার কী আছে ?’

সে বলল, ‘কেউ যদি প্রতিনিয়ত এত শতবার তার রবের কাছে সঠিক পথের দিশা পেতে ব্যাকুল থাকে, তিনি কি তাকে সঠিক পথ না দেখিয়ে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে পারেন? আমরা তো আমাদের সাপ্তাহিক ইবাদাতে এমনভাবে কখনোই আমাদের ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি না। আর জানিও না আমরা কি আদৌ সঠিক পথে আছি কিনা।’

তার এই কথা আমাকেও চিন্তায় ফেলে দিল। আমরা ইসলাম সম্পর্কে আরো জানতে আগ্রহী হলাম। এভাবেই আমি ও আমার স্ত্রী ইসলাম নিয়ে আরো গবেষণা করে এক পর্যায়ে আমরা ইসলামে দীক্ষিত হই।

প্রফেসর বললেন, তন্ময় হয়ে আমি তার কথা শুনছিলাম আর আল্লাহর কোরআনের মুজিযার কথা ভেবে অশ্রু সংবরণ করতে পারছিলাম না। সূরা ফাতিহার শুধু ‘ইহদিনা’ শব্দের গভীরতা উপলব্ধি করে একজন নারী ইসলামকে খুঁজে পেয়েছে।

আমাদের মুসলিমদের হাতে গোনা কিছু মুমিন ছাড়া ক’জন আছেন যারা আল্লাহর দেয়া এই অমীয় বাণীর মর্মার্থ ও যথার্থতা অন্তরে লালন করতে পেরেছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর