ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক নাজমুলের কত টাকা

বাঙালী কন্ঠঃ  বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি বিরোধী চলমান অভিযানের প্রাথমিক তালিকায়ও তার নাম ওঠে এসেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং টাকা পাচারের অসংখ্য অভিযোগ গোয়েন্দা দপ্তরে জমা পড়েছে। কোটি কোটি টাকা পাচার করে তিনি এখন লন্ডনে ব্যবসা শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দূ বিভাগের ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সিদ্দিকিী নাজমুল আলম ২০১১-১৫ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ২৭তম কাউন্সিলে তিনি এ দায়িত্ব পান। ওই কমিটির মেয়াদ শেষে হঠাৎ করেই ২০১৫ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বিদেশে পাড়ি জমান।

বাংলা ট্রিবিউন তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বিনিয়োগকারী ভিসায় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ব্রিটিশ সরকারের আইন অনুযায়ী, এই ভিসা পেতে ন্যূনতম দুই লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় দুই কোটির বেশি) বিনিয়োগ করতে হয়। ব্রিটেনে নাজমুলের বিলাসবহুল জীবন ও আর্থিক উৎসের নানা কাহিনী নিয়ে খোদ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই এখন কানাঘুষা চলছে।

লন্ডনে তিনি ফ্লেক্সফগ লিমিটেড, এলিট সিটি লিমিটেড, নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এসএনবি অটোস লিমিটেড, এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেড ও কার মিউজিয়াম লিমিটেড নামে ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে ইস্ট লন্ডনের কেনন স্ট্রিট রোডে নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ নামের আবাসন ব্যবসার একক পরিচালক তিনি। যার মূলধন দেখানো হয়েছে সাড়ে আট লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি টাকায় যা ১০ কোটি টাকার সমান। কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১০ই জুলাই ব্রিটিশ সরকারের কোম্পানি হাউজে ১১৪৫৮১৯৯ নম্বরে নিবন্ধিত হয়। এখানে ব্যবসার ধরন হিসেবে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। নিজস্ব প্রোপার্টি কেনাবেচা, লিজ অথবা নিজস্ব প্রোপার্টি ভাড়া দেয়া এবং পরিচালনা করা, রিয়েল এস্টেট এজেন্সি এবং চুক্তির অথবা ফি এর মাধ্যমে প্রোপার্টি পরিচালনা করা।

টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন রোডের পাশে পান্ডারসন গার্ডেনে রয়েছে ফ্লেক্সফগ লিমিটেড নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস। যেটি ২০১৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি কোম্পানি হাউজে ০৮৮৬৮৬৮১ নম্বরে নিবন্ধন করা হয়। এই ব্যবসার ধরন  দেখানো হয়েছে নন স্পেশালাইড হোলসেল ট্রেড, এডভারটাইজিং এজেন্সি এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সেবা। যা আগে লিঙ্কমোর ইউকে লিমিটেড নামে পরিচিত ছিল। এই কোম্পানিতে সিদ্দিকী নাজমুল আলম এ বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি পরিচালক হিসেবে  যোগ দেন। কোম্পানিতে আরও দু’জন পরিচালক রয়েছেন।

তৃৃতীয় কোম্পানি এলিট সিটি লিমিটেড। এটি সেন্ট্রাল লন্ডনের বসওয়েল স্ট্রিটে অবস্থিত। এই কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১৬ই আগস্ট কোম্পানি হাউজে ১১৫২১৪৭৩ নম্বরে নিবন্ধিত হয়। এই কোম্পানির ব্যবসার ধরন হচ্ছে এমপ্লয়মেন্ট  প্লেসমেন্ট এজেন্সি ও টেম্পোরারি এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি এক্টিভিটিস। এই কোম্পানির জন্মলগ্ন থেকে সিদ্দিকী নাজমুল আলম মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সঙ্গে যৌথ পরিচালক হিসেবে আছেন।

চতুর্থ কোম্পানি এসএনবি অটোস লিমিটেড বেথনাল গ্রিনের ২৫ পান্ডারসন গার্ডেনে অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর ১০১৩৭১৫১ নম্বরে  কোম্পানি হাউজে নিবন্ধিত হয়। এই কোম্পানির ব্যবসার ধরন হিসেবে বলা হয়েছে  রেন্টিং এন্ড লিজিং অব কারস্ এন্ড লাইট মোটর ভেহিক্যাল। শুরু থেকে এই প্রতিষ্ঠানেরও পরিচালক হিসেবে আছেন নাজমুল এবং মোহাম্মদ রুহুল আমিন।

এছাড়া এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেডে (১০৫১৭৩৫৮ কোম্পানি নম্বর) ২০১৬ সালের ৮ই ডিসেম্বর নাজমুল পরিচালক হিসেবে যোগ দিলেও ২০১৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি তিনি পদত্যাগ করেন। একইভাবে কার মিউজিয়াম লিমিটেডে (১০২৫৪৪২২ কোম্পানি নম্বর) ২০১৬ সালের ২৮শে জুন পরিচালক পদে যোগ দিয়ে তিন দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ১লা জুলাই পদত্যাগ করেন তিনি।

তবে নাজমুল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নাজ ইউকে বিডি কোম্পানিটি  কেনন স্ট্রিটের একটি ঠিকানায় কোম্পানি হাউসে নিবন্ধন করেছিলাম। এসএনবি অটোস নামের কোম্পানিটিতে এক বন্ধু ওয়ার্কিং ডিরেক্টর হিসেবে রেখেছিলেন। এছাড়া এলিট সিটি নামের কোম্পানিটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, তবে এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। আর ফ্লেক্সফগ নামের কোম্পানিটি আইটি ব্যবসার। কোম্পানিটি এক বন্ধূ খুলেছেন। আমাকে পার্টনার হিসেবে রেখেছেন। নাজমুল দাবি করেন, এসব কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।

নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজের মূলধনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাজমুল বলেন, ব্রিটেনে কোম্পানি হাউজে কোনও কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে কিছু তথ্য দিতে হয়। এ কোম্পানির মূলধন সাড়ে আট লাখ পাউন্ড দেখানো হলেও তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

নাজমুল আরও বলেন, লন্ডনে তিনি ব্যবসার পাশাপাশি লেখাপড়া করছেন। তবে কোন ভিসায় ব্রিটেনে বসবাস করছেন সে তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেন, খুব কষ্ট করে রাজনীতিতে একটা অবস্থানে এসেছি, আমারও প্রতিপক্ষ আছে। তার বিরুদ্ধে কিছু না লেখারও অনুরোধ জানান সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর