মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস

বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন আজ। আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বিশ্বের বুকে নিজেদের স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব ঘোষিত হয়েছিল এদিন। পাকিস্তানি জান্তার হাতে বন্দির আগে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ। পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের বিতাড়িত করতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ঘোরতর ওই অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল একাত্তরের আজকের এই দিনে। দীর্ঘ ৯ মাস এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন-মহান স্বাধীনতা। এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হচ্ছে আরও বেশি উচ্ছ্বাসে-শানিত চেতনার নতুন আঙ্গিকে। এদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারে আনন্দিত জাতি এবারই প্রথম ২৫ মার্চের কালরাতের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পালন করছে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে। গোটা জাতি দাবি তুলেছিল ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহণ করতে। ইতোমধ্যে সরকার জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি বিল পাস করেছে। দাবি জানানো হয়েছে জাতিসংঘের কাছেও। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। কর্মসূচি : যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ প্রত্যুষে রাজধানীতে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ হবে এবং সরকারি-বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করবে। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। এদিন রাজধানীর সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকাসহ নানা রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো হবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টায় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে। এ ছাড়া দিবসটি স্মরণে আওয়ামী লীগ ২৭ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করবে। সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। বিএনপির কর্মসূচি : স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সকাল সাড়ে ৮টায় গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে রওনা দেবেন তিনি। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাবেন খালেদা জিয়া। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে সকাল ৬টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো দেশব্যাপী সুবিধা অনুযায়ী বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করবে। এ সময় সারাদেশের কার্যালয়গুলোতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে দলটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। ২৭ মার্চ ছাত্রদলের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যুবদলের চিত্রপ্রদর্শনী এবং মহিলা দল আলোচনা সভার আয়োজন করবে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন খালেদা জিয়া। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর